কালান্তরের কড়চা-বিশ্ব রাজনীতিতে নারীতন্ত্রের কর্তৃত্বের প্রসার by আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী

পাকিস্তানের সুন্দরী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার সম্প্রতি যখন ভারত সফর করছিলেন, তখন লন্ডনের ভারতীয় সাংবাদিক বন্ধু আমাকে ঠাট্টা করে বলেছেন, 'এবার সম্ভবত কাশ্মীর সমস্যার একটা সমাধান হয়ে যাবে। দেখছেন, হিনা খারকে দেখে দিলি্লতে মনমোহন সিংয়ের বৃদ্ধ, হাফ বৃদ্ধ মন্ত্রী ও আমলাদের মধ্যে কী রকম চিত্তচাঞ্চল্য শুরু হয়ে গেছে!' আমি তাঁর ঠাট্টাটা প্রথমে বুঝতে না পেরে বলেছি, তোমাদের মন্ত্রিপরিষদে কি কোনো নারী নেই? ভারতীয় বন্ধু আমাকে


শাপান্ত করে বলেছেন, 'তুমি বিলেতে বাস করলেও একেবারে বাঙালই রয়ে গেছ। আমাদের নারী মন্ত্রীদের হিনা রব্বানি খারের মতো চোখ ধাঁধানো রূপ আছে কি?' এতক্ষণে বন্ধুর মন্তব্যের পেছনের রসিকতা এবং তার তাৎপর্য বুঝে নিজেও হেসেছি। কথাটা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। বিলাতেরই একজন বুদ্ধিজীবী একবার লিখেছিলেন, ফেমিনিজম কয়েক দশক ধরে লড়াই চালিয়ে যা অর্জন করতে পারেনি, নারীদের রূপ তা অল্প দিনেই অর্জন করেছে। অর্থাৎ পুরুষতন্ত্র ভাঙতে না পারলেও তার একাধিপত্যে আঘাত করেছে।
কথাটা যে কত বড় সত্য, তা এখন নিজেও উপলব্ধি করি। মিসেস মার্গারেট থ্যাচার যখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী, তখন বয়সের জন্য তাঁর রূপ ও যৌবন কোনোটাই তেমন নেই। তথাপি তিনি নারী। শুধু এই সুবাদেই বড় বড় সমস্যা সমাধানে পুরুষ সহকর্মীদের চেয়ে বেশি সাফল্য দেখিয়েছেন। মিসেস থ্যাচারের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় একবার ব্রিটেন ও সৌদি আরবের সম্পর্কের মধ্যে ভাঙন ধরার আশঙ্কা দেখা দেয়। সৌদি এক রাজকুমারী সাধারণ এক সৌদি নাগরিকের প্রেমে পড়ায় তাঁদের দুজনকেই বিচারে শিরশ্ছেদের দণ্ড দেওয়া হয় এবং সেই দণ্ড কার্যকর হয়। সৌদি আরবে এই বর্বর প্রথা এখনো আছে। সম্প্রতি আটজন বাংলাদেশিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির অনুরোধ সত্ত্বেও শিরশ্ছেদের দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আগের কথায় ফিরে যাই। সৌদি রাজকুমারী ও তাঁর প্রেমিকের শিরশ্ছেদের মর্মান্তিক দৃশ্যটি এক ব্রিটিশ সাংবাদিক অথবা নাগরিক গোপনে তাঁর ক্যামেরায় ধারণ করেন এবং লন্ডনে ফিরে এসে তা সংবাদপত্রেও প্রকাশ করেন। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি নিয়ে একটি ছোট তথ্যচিত্রও তৈরি করা হয়, নাম 'ডেথ অব এ প্রিন্সেস'। ছবিটি তখন পশ্চিমা জগতে রীতিমতো তোলপাড় শুরু করে। আর যায় কোথায়? পেট্রো-ডলারের দম্ভে স্ফীত সৌদি বাদশাহ রেগে যান। 'ডেথ অব এ প্রিন্সেস' ছবিটিকে কেন্দ্র করে ব্রিটেনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দেন তিনি। ব্রিটেন ভয় পেয়ে গেল। এত তেলসমৃদ্ধ ধনী আরব দেশের সঙ্গে লাভজনক সম্পর্ক তারা হারাতে চায় না।
এই সম্পর্ক রক্ষা করার জন্য লন্ডন-রিয়াদ কূটনৈতিক দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেল। রিয়াদে দৌড়ে গিয়ে ব্রিটিশ মন্ত্রী ও কূটনীতিকরা (পুরুষ)?সৌদি বাদশাহকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, 'ডেথ অব এ প্রিন্সেস' ছবিটি ব্রিটিশ সরকার বানায়নি। এটা ব্রিটিশ মিডিয়ার কাজ। আর ব্রিটেনে মিডিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীন। তবু সৌদি বাদশাহর গোসা ভাঙে না। তারপর একসময় প্রধানমন্ত্রী মিসেস মার্গারেট থ্যাচার গেলেন সৌদি আরব সফরে। সৌদি বাদশাহদের খুশি করার জন্য তিনি পশ্চিমা আঁটসাঁট খোলামেলা পোশাকের পরিবর্তে ফুলহাতা ম্যাঙ্ িড্রেস, পা এবং মাথা ঢাকা অবস্থায়?সৌদি বাদশাহর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়, বৃদ্ধ বাদশাহ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে করমর্দনের সময় সহজে তাঁর হাতটা ছাড়েননি। একটু বেশিক্ষণ ধরে রেখেছিলেন। এর পরই নাকি লন্ডন-রিয়াদ সম্পর্ক সহজ হয়ে আসে।
মধ্যপ্রাচ্যের অবৈধ সন্তান ইসরায়েল যখন শিশুরাষ্ট্র, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ তার জন্মের বৈধতাকে স্বীকৃতি দেয়নি, তখন তার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এক নারী। গোল্ডামেয়ার। তিনিও তরুণী বয়সে প্রধানমন্ত্রী হননি। কিন্তু যৌবনের অপরাহ্নেও তাঁর চেহারায় সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের ছটা মিশ্রিত ছিল। বিশ্বসভায় ইসরায়েলকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার ব্যাপারে তাঁর কৃতিত্ব ছিল বেশি। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র তাঁকে নিয়েই একটি চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে, যাতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ইনগ্রিড বার্গম্যান। ইসরায়েলের আর কোনো নেতা, এমনকি বেন গুরিয়েনকে নিয়েও কোনো ছবি তৈরি হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
গোল্ডামেয়ারের পরই আসে ভারতের আয়রন লেডি ইন্দিরা গান্ধীর কথা। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদকে সরাসরি মোকাবিলার ব্যাপারে তিনি (ভারত তখনো পরমাণু শক্তির অধিকারী হয়নি) যে সাহস ও দূরদর্শিতা দেখিয়েছেন, তা তাঁর বাবা জওহরলাল নেহরুও দেখাতে পারেননি। বরং প্রথম কোরিয়া যুদ্ধ ও কঙ্গো সমস্যার (লুমুম্বা-হত্যা) সময় নেহরুর পররাষ্ট্রনীতি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদকে ছাড় দিয়েছে, চ্যালেঞ্জ জানানোর সাহস দেখায়নি। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ইন্দিরা গান্ধী গোটা বিশ্ব রাজনীতিতে যে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, তা তুলনাবিহীন। এই প্রভাব রোধের জন্য তাঁর শত্রুপক্ষ তাঁকে হত্যা করা ছাড়া দ্বিতীয় পন্থা খুঁজে পায়নি।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মিসেস মার্গারেট থ্যাচার প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবনের রোল মডেল হচ্ছেন ইন্দিরা গান্ধী। ইন্দিরা হত্যার পর লন্ডনের একটি দৈনিকে এক কলামিস্ট তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে লিখেছিলেন, 'জুলিয়াস সিজার যদি এ যুগে নব জন্মগ্রহণ করে থাকেন, তাহলে তিনি নারী হয়ে জন্মেছেন এবং তিনিই ইন্দিরা গান্ধী। সিজারের মতোই তিনি ঘাতকের হাতে প্রাণ দিয়েছেন।'
পাকিস্তানে রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে বেনজির ভুট্টোর জনপ্রিয়তার মূল কারণ ছিল তাঁর রূপ, শিক্ষা এবং মেধা। তাঁর ব্যক্তিগত ক্যারিশমা ভুট্টো-কন্যার পরিচয়কেও ছাপিয়ে গিয়েছিল। অঙ্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে সম্মান জানাতে গিয়ে বলা হয়েছিল 'ডটার অব দি ইস্ট' বা প্রাচ্যকন্যা। বেনজিরের আত্মকথামূলক বইটির নামও 'ডটার অব দি ইস্ট'। সম্ভবত রাজনৈতিক অসুবিধার জন্য তিনি কখনো প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি যে ইন্দিরা গান্ধীর রূপ ও ব্যক্তিত্ব দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত আলাপে তিনি স্বীকার করেছেন, ইন্দিরার ব্যক্তিত্বকে তিনি অনুকরণীয় বলে মনে করেন।
প্রৌঢ় বয়সেও ইন্দিরার চেহারায় শুধু ব্যক্তিত্ব নয়, রূপের প্রাচুর্যও ছিল। এ কথা স্বীকার করেছেন বেনজিরের বাবা জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে। বাংলাদেশের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর ত্রিদেশীয় (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান) সমস্যা সমাধানের জন্য যখন ইন্দিরা গান্ধী ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর মধ্যে সিমলা বৈঠক হয়, সেই বৈঠক শেষে পাকিস্তানে ফিরে সাংবাদিকদের কাছে ভুট্টো বলেন, 'ইন্দিরা গান্ধীর আর কিছুকে নয়, তাঁর রূপকে আমার ভয় ছিল। তিনি আবার রূপের প্রভাব খাটিয়ে আমাকে তাঁদের সব শর্ত মানতে বাধ্য করে না ফেলেন। তিনি একটি মনোমুঙ্কর রঙিন শাড়ি পরে বৈঠকে এসেছিলেন। কিন্তু আমাকে কাবু করতে পারেননি।'
আমেরিকার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির পত্নী জ্যাকুলিন কেনেডি একবার (নেহরুর আমলে) দিলি্ল সফরে এসেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী সম্পর্কে তিন লিখেছেন, 'ঐবৎ নবধঁঃু ধহফ ঢ়বৎংড়হধষরঃু ধৎব ড়াবৎযিবষসরহম'। উল্লেখ করার মতো বিষয়, উপমহাদেশের রাজনীতি যাঁদের দ্বারা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত, তাঁদের তিনজনই নারী_ইন্দিরা, বেনজির ও হাসিনা। বেনজির প্রত্যক্ষভাবে ইন্দিরা দ্বারা প্রভাবিত না হলেও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত। আর বাংলাদেশের শেখ হাসিনাকে তো এককথায় ইন্দিরা গান্ধীর মানসপুত্রী বলা চলে। দীর্ঘ কয়েক বছর ইন্দিরার ঘনিষ্ঠ সানি্নধ্যে ছিলেন হাসিনা। তাঁকে দেখেছেন। তাঁর রাজনীতি ও ক্যারিশমা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন এবং তাঁর চরিত্রেও ইন্দিরার চরিত্র ও ক্যারিশমার প্রভাব পড়েছে। এই তিন নেত্রীর মধ্যে ইন্দিরা ও বেনজির এখন নেই। কিন্তু হাসিনা বেঁচে আছেন। মৃত্যুর পরও ইন্দিরা ও বেনজিরের রাজনীতির ছায়া যেমন বিস্তৃত সারা উপমহাদেশে, তেমনি হাসিনা বাংলাদেশে ক্ষমতায় বসে এখনো সেই ছায়াকে ধারণ করে আছেন সারা উপমহাদেশের জন্য।
কেউ কেউ বলেন, বিশ্বে পুরুষতন্ত্র এখনো অটুট ও শক্তিশালী থাকা সত্ত্বেও নারীতন্ত্রের বিকাশ ঘটেছে এবং তা বিশ্বময় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপে জার্মানিসহ কয়েকটি দেশে এবং আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকাতেও নারী ক্ষমতায় আসছে এবং রাজনীতিতে নারীকর্তৃত্বের বিকাশ ঘটছে। এশিয়ায় সাধারণভাবে নারী জাগরণ ঘটলেও তাঁরা এখনো আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে প্রাথমিক অধিকার অর্জনের জন্য লড়ছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিস্ময়করভাবে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটেছে।
ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে শ্রীলঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এক নারী। শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে। তাঁর মেয়ে চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা পরে প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন। ইন্দোনেশিয়ায় ক্ষমতায় বসেছিলেন সুকর্ণপুত্রী মেঘবতী। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ তুরস্কেও নারী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। সৌদি বাদশাহরা বলেন, ইসলাম ধর্মে নারী নেতৃত্ব জায়েজ (বৈধ) নয়। কিন্তু সৌদি বাদশাহদের মদদপুষ্ট বাংলাদেশের জামায়াতিরা নারী নেতৃত্ব হারাম_এই ফতোয়া দিয়ে নিজেরাই বিএনপির খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছেন। সৌদি বাদশাহরা নিজেরাও বাংলাদেশের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে ঘন ঘন হজ ও ওমরাহ উপলক্ষে?সৌদি আরবে আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশের বা অন্য কোনো মুসলিমপ্রধান দেশের পুরুষ রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে তাঁরা এত ঘন ঘন আমন্ত্রণ জানান বা জানিয়েছেন তার উদাহরণ নেই।
বাংলাদেশে নারীর অধিকার এখনো ভালোভাবে স্বীকৃতি ও সুরক্ষা পায়নি। কিন্তু রাজনীতি ও রাষ্ট্রক্ষমতায় নারীর আধিপত্য বিস্তার বিস্ময়কর। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নারী। সংসদীয় উপনেতা নারী। বিরোধীদলীয় নেতা নারী। এমনকি অন্য মন্ত্রীপদ ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে রয়েছেন এক নারী। ডা. দীপু মনি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানির সৌন্দর্যের সঙ্গে তাঁর তুলনা করি না। কিন্তু তিনি শ্রীময়ী এবং তাঁর ব্যক্তিত্ব আকর্ষণীয়। আমার অগ্রজপ্রতিম বন্ধু-কন্যা বলে তাঁকে নিয়ে এ সম্পর্কে অধিক আলোচনা করব না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি দ্রুত দক্ষতা অর্জন করেছেন। সেই সঙ্গে সাফল্যও। তিস্তা নদীর পানি নিয়ে আলোচনায় তাঁকে তাঁর যথাযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করতে দিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভালো করতেন বলে আমি মনে করি। একজন হাফবাঙালি প্রবাসী 'একাডেমিসিয়ানের' ওপর নির্ভর করা কতখানি ঠিক হয়েছে, এখন তিনিই তা জানেন।
আমাকে একজন প্রবীণ ভারতীয় সাংবাদিক বলেছেন, 'বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দিলি্লতে পাকিস্তানের ঝুনো আমলা-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলার তখনকার তরুণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনকে যতটা নার্ভাস দেখাচ্ছিল, বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনিকে ভারতের প্রবীণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রণব মুখার্জি বা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে বৈঠকের সময়েও এতটা নার্ভাস দেখায়নি। আসলে আমেরিকাতেও এখন আসল সরকারি ক্ষমতার অধিকারী একজন নারী। হিলারি ক্লিনটন। প্রেসিডেন্ট ওবামা 'সাদা এস্টাবলিশমেন্টের কালো শিখণ্ডী' হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। নেপথ্যে সাদা এস্টাবলিশমেন্টের হয়ে কলকাঠি নাড়েন হিলারি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি নেত্রীর একটা প্লাস পয়েন্ট ছিল, তিনি সুন্দরী। শেখ হাসিনার রূপ নয়, ব্যক্তিত্ব প্রখর। এখন দৃশ্য বদলে যাচ্ছে। বেগম জিয়ার চেহারায় বয়সের ছাপ পড়েছে। শেখ হাসিনার চেহারায় তা প্রকট নয়। বরং ব্যক্তিত্বের আভাই তাঁর প্রধান আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে বেগম জিয়া আর পাল্লা দিতে পারছেন না। দেখা যাক, এই নারী নেতৃত্ব কত দিন বাংলাদেশের রাজনীতিতে কর্তৃত্ব বিস্তার করে থাকতে পারে। তবে এ কথা সত্য, সারা বিশ্বের রাজনীতিতেই নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ছে। নারীতন্ত্রের প্রসারতা বাড়ছে। যদিও পুরুষতন্ত্র তাকে এখনো চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে না।
লেখাটি শেষ করার আগে পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দেই, ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টিতেও নেত্রী পদে বসেছেন একজন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নারী। বেগম ওয়ার্সি। তিনিও সুন্দরী, সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে এসেছেন। সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র।

লন্ডন, ১৭ অক্টোবর, সোমবার ২০১১

No comments

Powered by Blogger.