স্যামসন চৌধুরী আর নেই

বিশিষ্ট শিল্পপতি ও স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী মারা গেছেন। সিঙ্গাপুরের র‌্যাফেলস হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত রোগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টার (বাংলাদেশ সময়) দিকে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, পাঁচ নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে স্যামসন এইচ চৌধুরী নিয়মিতভাবে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কয়েক দিন


আগে উন্নততর চিকিৎসার জন্য তিনি সিঙ্গাপুরে যান। মৃত্যুকালে তাঁর ছেলেরাসহ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন পাশে ছিলেন।
গতকাল সকালে মৃত্যুর খবর পৌঁছালে মহাখালীতে স্কয়ার শিল্পগোষ্ঠীর প্রধান কার্যালয়সহ সব অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। স্কয়ার শিল্পগোষ্ঠীর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মিডিয়াকমের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আজ শুক্রবার রাত নয়টায় তাঁর মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। রাত ১০টায় কাকরাইল চার্চে তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠান হবে। এরপর মরদেহ রাতে স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আগামীকাল সকালে এই শিল্পপতির মরদেহ তাঁর গ্রামের বাড়ি পাবনায় নেওয়া হবে এবং সেখানেই সমাহিত করা হবে।
দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে স্যামসন এইচ চৌধুরী বাংলাদেশের শিল্প, কৃষি, সেবা, আর্থিক খাতে বিনিয়োগ করেছেন। অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
১৯৫৮ সালে স্কয়ার ফার্মা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। এরপর তিনি একে একে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ওষুধ, পোশাক, গণমাধ্যম, সেবা খাতসহ বর্তমানে স্কয়ার শিল্পগোষ্ঠীর অধীনে ১৯টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার কর্মী কাজ করছেন।
শোক: দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের এই অগ্রপথিকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান গতকাল এক শোক বার্তায় বলেছেন, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য শিল্প বিকাশে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছেন।
স্যামসন এইচ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও ওষুধশিল্পের আধুনিকায়নে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করেন। বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আরও শোক প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান প্রমুখ।
এ ছাড়া শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), বেক্সিমকো শিল্পগোষ্ঠী, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবি) প্রভৃতি।
শোক প্রকাশ করে ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান বিবিসিকে বলেছেন, ‘বলতে গেলে কয়েক যুগ ধরে একসঙ্গে আমরা কাজ করেছি। তিনি অত্যন্ত নীতিনিষ্ঠ ও বিনয়ী ছিলেন।’
জীবনরেখা: স্যামসন এইচ চৌধুরী ১৯২৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ই এইচ চৌধুরী ও মা লতিকা চৌধুরী। তাঁর স্ত্রীর নাম অনিতা চৌধুরী। বর্ণিল কর্মময় জীবনের অধিকারী স্যামসন চৌধুরী তিন ছেলের জনক। তাঁর ছেলে তপন চৌধুরী, অঞ্জন চৌধুরী ও স্বপন চৌধুরী ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
১৯৩০-৪০ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতার বিষ্ণুপুর উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। এখান থেকেই তিনি সিনিয়র কেমব্রিজ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন।
স্যামসন চৌধুরী মেট্রোপলিটন চেম্বার, ওষুধ শিল্প সমিতি এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের সভাপতিও ছিলেন। যুক্ত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সঙ্গে। ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান চেম্বার অব কমার্সের সদস্য।
কর্মময় জীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। এর মধ্যে আছে: দ্য ডেইলি স্টার এবং ডিএইচএল প্রদত্ত বিজনেসম্যান অব দ্য ইয়ার (২০০০) এবং আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের (অ্যামচেম) বিজনেস এক্সিকিউটিভ অব দ্য ইয়ার (১৯৯৮)। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত স্যামসন চৌধুরী টিআইবির প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি।
১৯৮৫ সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ব্যাপ্টিস্ট ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্সের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন ন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ফেলোশিপ অব বাংলাদেশের সভাপতি। তিনি বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটির আজীবন সদস্য ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.