২০১২ :বিশ্বে সংঘাতের ক্ষেত্র

ফগানিস্তান : ২০১১ সাল আফগানিস্তানের জন্য কেটে গেল আরেকটি সহিংস বছর। বছরের প্রথম দশ মাসে দেশটিতে নিহত হয়েছে প্রায় ২ হাজার বেসামরিক নাগরিক। তালেবান জঙ্গিদের আত্মঘাতী হামলা, বন্দুক হামলা, ন্যাটোর হামলায় নিহত হয়েছে এসব সাধারণ নাগরিক। কিন্তু ২০১২ সালের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ন্যাটো নিজেদের বেশ কিছু এলাকা থেকে গুটিয়ে নেবে। ২০১৪ সালে আফগানিস্তানের ন্যাটো সেনা প্রত্যহারের প্রক্রিয়া হিসেবে তা করবে ন্যাটো। এ ছাড়া ২০১২


সালে আফগানিস্তান থেকে প্রায় ২০ হাজার ন্যাটো সেনা নিজ নিজ দেশে ফিরবে। ন্যাটো আশা করছে, তাদের প্রশিক্ষিত আফগান সেনারা নিজেদের নিরাপত্তা নিতে সক্ষম। এ ছাড়া আল কায়দা উত্থান ঠেকিয়ে রাখতে পারবে তারা। এ কারণেই এ বছর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর থাকবে আফগানিস্তানে। দেশটিতে সহিংসতার সংখ্যা কমছে নাকি বাড়ছে, এর ওপরই নির্ভর করবে ১৯৯০ সালে সেভিয়েত ইউনিয়ন আফগান ত্যাগের পর তালেবান যেভাবে আবার নিজেদের সুসংগঠিত করে আল কায়দাকে আশ্রয় দিয়েছিল এক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটছে কি-না।
পাকিস্তান : ২০১১ সালের শেষ দিকে দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট প্রকট হয়। ২০১১ সালের শুরুতেই লাদেন হত্যার জের ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে, যা চরম আকার ধারণ করে ন্যাটো হামলায় ২৪ পাক সেনা নিহতকে কেন্দ্র করে। এরই মধ্যে সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরোধে সেনা অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা। একই সঙ্গে দুই সমস্যায় পড়েছে ইসলামাবাদ। একে তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধ, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। এখন দেখার বিষয়, দু'দিক থেকে চাপে থাকা জারদারি সরকার কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে।
ইরান ও পারস্য উপসাগর : ইরানের পরমাণু ইস্যু এবং পারস্য উপসাগরে দেশটির অবস্থানের দিকেও নজর থাকবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। পশ্চিমাদের বিশ্বাস, পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে বেশ এগিয়েছে ইরান। এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ইসরায়েল। এ ছাড়া সর্বশেষ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় ইসরায়েল বেশ শঙ্কিত। কারণ ইরান তাদের বিবৃতিতে বলেছে, এসব ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে আঘাত হানতে সক্ষম। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে হামলাসহ যে কোনো পদক্ষেপই বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা করবে এ বছর। এ ছাড়া হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি এবং পারস্য উপসাগরে সামরিক অবস্থানের ওপরও নজর থাকবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিলে এখানে যুদ্ধ নিশ্চিত।
হরমুজ প্রণালি নিয়ে উত্তেজনা এ অঞ্চলে সংঘাতের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করবে।
ইরাক : দীর্ঘ নয় বছর পর গত বছরের শেষদিকে ইরাক ছেড়ে গেছে মার্কিন সেনারা। কিন্তু ইতিমধ্যেই দেশটিতে সহিংসতা বাড়তে শুরু করছে। এ ছাড়া ঘনীভূত হচ্ছে রাজনৈতিক সংকট ও জাতিগত বিরোধ । আল কায়দাও ইরাকে আবার মাথাচড়া দিয়ে উঠছে। ডিসেম্বরে বাগদাদে বোমা হামলায় ৬০ জন নিহত হয়। যার দায় স্বীকার করে আল কায়দা। দেশটিতে আল কায়দা কার্যক্রম ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইয়েমেন : ইয়েমেনে চলছে রাজনৈতিক সংকট। প্রেসিডেন্ট সালেহ দেশত্যাগের পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থাও নাজুক। প্রেসিডেন্ট সালেহ দেশত্যাগ করলেও সেখানে আল কায়দা কী অবস্থান নেবে এটা নিয়েই চিন্তিত পশ্চিমারা। কারণ সালেহবিরোধীদের মধ্যে দেশটির পশ্চিমাবিরোধী ও পার্বত্যাঞ্চলের ইসলামপন্থিরাও রয়েছে। এ ছাড়া আল কায়দার সঙ্গেও বিক্ষোভকারীদের সংযোগ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ প্রেসিডেন্ট সালেহ আল কায়দা নিধনে বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দিয়ে আসছেন। সালেহর পতন অবশ্যম্ভাবী। এ সময় সেখানে ইসলামপন্থি ও আল কায়দার ভূমিকা কী হবে তার দিকে নজর থাকবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের। এ ছাড়া অর্থনৈতিকভাবে নাজুক দেশটির ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
উত্তর আফ্রিকা : উত্তর আফ্রিকায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীক্ষষ্ট নজরে থাকবে তিউনিসিয়া, মিসর ও লিবিয়ার প্রতি। তিনটি দেশেই দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা একনায়করা ক্ষমতাচ্যুত। এর মধ্যে তিউনিসিয়ায় ক্ষমতায় এসেছে ইসলামপন্থিরা। মিসরেও ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে ইসলামপন্থিরাই। এ ছাড়া লিবিয়া পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ বিরাজ করবে। দেশটিতে ইতিমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে জাতিতে জাতিতে বিভেদ বাড়ছে, যা ভয়াবহ হতে পাারে। বিশেষত, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে। এ ছাড়া গাদ্দাফির আমলে লুট করা অস্ত্র নিয়েও উদ্বেগ ক্রমে বাড়ছে। দেশটিতে এখনও আইনের শাসন বলতে কিছুই নেই। এ ছাড়া গাদ্দাফিবিরোধী অভিযানের সময় বিপুল পরিমাণ রকেট লাঞ্চার উদ্বেগের বিষয়। এই সুযোগে এসব অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা নিজেদের সংগঠিত করতে পারে। সে সঙ্গে থাকছে আল কায়দার কার্যক্রম বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা।
লন্ডন অলিম্পিক : এ বছর আনন্দের সঙ্গে বিশ্ববাসী অপেক্ষা করবে ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকের জন্য। একই সঙ্গে থাকছে জঙ্গি হামলার প্রবল আশঙ্কা। এ কারণেই লন্ডনে শুরু হবে নিরাপত্তা মহাযুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতিহাসের সবচেয়ে কড়া নিরাপত্তা চাদরে ঢুকতে যাচ্ছে লন্ডন। লন্ডনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে প্রায় ১৪ হাজার সেনা। স্টেডিয়ামের পাশে থাকবে বিমানবাহিনীর সশস্ত্র উপস্থিতি। এ ছাড়া যে কোনো ধরনের বিমান হামলা প্রতিরোধের জন্য সক্রিয় থাকবে রয়্যাল এয়ারফোর্স টাইফুন ফাইটার বিমান।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে থাকবে সোমালিয়ার আল শাবাব জঙ্গিগোষ্ঠী, নাইজরিয়ার বোকা হারেম এবং গত বছর বিশ্বব্যাপী চলা সাইবার যুদ্ধের ওপর। কারণ ২০০১ সালে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো অপরিচিত হ্যাকারাদের হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.