ভালোবাসা-কড়ি by সরসিজ আলীম

ত সন্ধ্যায় যে মেয়েকে আজিজ মার্কেট থেকে দশখন্ড রবীন্দ্র রচনাবলী ব্যাগে ভরে শাহবাগের গাড়িতে উঠিয়ে দিতে সাহায্য করেছিলাম, আজ সকাল দশটায় ফোন করে বললো, ‘আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি সরসিজ!’ আমি বললাম, ‘আমিও তোমাকে ভালোবাসি ক্যাটরিনা!’

ক্যাটরিনা ঝরণার জলের মতো হাসি দিয়ে বলেছিলো, ‘আমরা একদিন জোছনার জোয়ারে ভাসতে যাবো।’ আমি বললাম. ‘হ্যা, আমরা একদিন পাহাড়ের চূড়ায় উঠে আকাশের গায়ে লিখে দেবো, আমরা পৃথিবীকে খুব ভালোবেসেছি।’ আমি জানালার পর্দা সরিয়ে ব্যালকনীতে উঁকি দিয়ে সকাল দশটাকে বললাম, ‘সকাল দশটা, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমাকে ভোর এনে দিতে পারো? মাছরাঙারা কলাপাতার উপর এসে বসবে। তারপর পুকুরজলে ছবি আঁকতে বসবে!’ সকাল দশটা আমাকে ঠিক ঠিক ভোর এনে দিলো। মাছরাঙারা বসলো কলাপাতায়। তারপর পুকুরজলে ছবি আঁকতে গেলো। তখন ভোর আমাকে বলল, ‘আমিও তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি সরসিজ।’
আমার সাবেক স্ত্রী যে বাকী জীবনটা আমার প্রেমিকা হয়ে থাকবে বলে পণ করেছে। আমাকে ফোন করে বললো, ‘মেয়েদের ঋতুুবতী প্রথমদিনের অনুভূতি নিয়ে কবিতা লিখেছো তুমি। আমার অনুভূতির সাথে হুবহু মিলে গেছে। আমি তোমাকে ভালোবাসি কবি। আমি তোমার কবিতা হয়েই থাকতে চাই।’ আমি বললাম, ‘তোমাকে সুখের মতো খুশির মতো ভালোবাসি হে আমার কষ্ট!’
জানালার পর্দার পাশে ব্যালকনীতে আবার সকাল দশটা এসে দাঁড়িয়ে। আমি বাজারের ব্যাগ হাতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গৃহকর্তার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘হে মহানুভব, আমি তোমাকে ভালোবাসি!’ গৃহকর্তা আমার বাড়ি ভাড়ার রশিদে পরিশোধ লিখে স্বাক্ষর করে আমার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বলল, ‘আমিও তোমাকে ভালোবাসি হে আমার সম্মানিত অতিথি! আমার বাড়িতে থাকতে তোমার কোন কষ্ট হচ্ছে না তো? কষ্ট নিও না, এটা তোমার নিজের বাড়ি মনে করেই থাকবে।’ আমি বললাম, ‘আপনার কথার অসম্মান হয়, এমনটি আমি কখনই করবো না।’
বাজারের ব্যাগ আর আমার বাজারের ফর্দ বাড়িয়ে দিয়ে দোকানীকে বললাম, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি হে আমার পরম প্রিয়!’ দোকানী আমার চাল-ডাল-তেল-লবন-সাবান-লোশান ঠিক ঠিক ফর্দের সাথে মিলিয়ে আমার ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, ‘আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি হে আমার বন্ধু। ব্যাগ বহন করতে তোমার কি কষ্ট হবে?’ আমি বললাম, ‘বন্ধুর উপহার আমি জীবন দিয়ে বয়ে নিয়ে যাবো!’
দুপুরকে কাঁধে ঝুলিয়ে হাঁটছি। একটা রিকশা আমার পথ রোধ করে থেমে গেলো। রিকশার উপরে বসা আমার মালতীলতা কবিতা মুখ বাড়িয়ে বললো, ‘কোথায় যাবে? আমার পাশে উঠে বসো!’ আমি আর দুপুর মেয়েটির পাশে বসলাম। ঝাকুনি আর মেয়েটি আমার শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। দুপুর স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে আমার মুগ্ধতার ভেতর। মালতীলতা বললো, ‘আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি হে আমার খোয়াবের পুরুষ! আগামীকাল আমার ডে-অফ। আমরা সারাদিন কোথাও বেড়িয়ে আসতে পারি।’ আমি বললাম, ‘তুমি চাইলে আগামীকালের ভোর থেকেই অনির্দিষ্ট কালের জন্য জোছনারা গড়িয়ে যাবে আমাদের মাথার উপর। আমি নতুন করে ভালোবাসা শিখে নেবো না-হয়!’
: টাকা-পয়সাই কি সব? প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা কি কিছুই নয়? -বাংলা সীনেমার এই ডায়ালগ শুনে সীনেমা হলের তৃতীয় শ্রেণীতে বসে হাততালি দিয়ে উঠলাম।

সরসিজ আলীম -এর ব্লগ থেকে

No comments

Powered by Blogger.