পছন্দের উইকেটেই সিরিজে ফেরার লড়াইয়ে আজ বাংলাদেশ by সাইদুজ্জামান

ঢাকায় নামার পর থেকে কোথায় ভালো স্যুট বানানো যায়_এ নিয়ে দারুণ কৌতূহলী ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা। বৃহস্পতিবার ওয়ানডে সিরিজে এগিয়ে যাওয়া গতকাল 'সাধারণ ছুটি' দিয়ে উদ্যাপন করেছেন তাঁরা। সম্ভবত এ ছুটিতে স্যুটের মাপটাও দিয়ে ফেলেছেন অনেকে। 'মাপ' দিতে চাচ্ছে বাংলাদেশ দলও। কিন্তু আইসিসির বিধি-নিষেধের কারণে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তো আর বলাও যাচ্ছে না যে আমরা টোয়েন্টি টোয়েন্টির সেই উইকেটটাই দ্বিতীয় ওয়ানডের জন্য চাই! অবশ্য নির্দেশ জারি না করেও সেই উইকেটেই আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাচ্ছে বাংলাদেশ। মিরপুরের সেই তিন নম্বর উইকেটেই অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ।


শুরুর সময় দুপুর দেড়টা।টসের সময়ই একটা 'ল্যান্ডমার্ক' স্পর্শ করবেন মুশফিকুর রহিম। আজ যে শততম ওয়ানডে খেলছেন তিনি! অধিনায়কত্বের অভিষেকে টোয়েন্টি টোয়েন্টির অচেনা জগতেও মুশফিকের ব্যাটে জিতেছিল বাংলাদেশ। ক্রিকেটে ভাগ্য ব্যাপারটা খুব বেশি জড়িয়ে থাকাতেই কিনা, অধিনায়কের বিশেষ ম্যাচেও ভালো কিছুরই প্রত্যাশা ক্রিকেট মহলের। সঙ্গে যদি উইকেটটা পছন্দের 'মাপ' মিলিয়ে হয়, তাহলে...? ৪০ রানে হারের পরও স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। যে স্বপ্নের রঙ কাল মিরপুরে ছড়িয়ে গেছেন শাহরিয়ার নাফীস।
টোয়েন্টি টোয়েন্টি এবং প্রথম ওয়ানডেতে খেলেননি শাহরিয়ার। তাই গতকালের ঐচ্ছিক অনুশীলনে মাঠে এসেছিলেন তিনি এবং একাদশের বাইরে থাকা আরো তিন ক্রিকেটার_নাজমুল হোসেন, শুভাগত হোম এবং সোহরাওয়ার্দী শুভ। নিয়মিত একাদশের একজনও এসেছিলেন অনুশীলনে। তিনি তামিম ইকবাল। ব্যাক অব লেন্থ থেকে লাফিয়ে ওঠা বল খেলার রহস্য জানতে সার্বক্ষণিক তাঁর পাশে ছিলেন স্টুয়ার্ট ল। ইনডোরে আসা-যাওয়ার পথেই তামিম-শাহরিয়াররা দেখেছেন দ্বিতীয় ওয়ানডের উইকেট। চটে-ঢাকা সে উইকেটে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে আবারও ভয়ংকর হয়ে ওঠার ছবিটা যেন গতকালই আঁকতে পারছিলেন শাহরিয়ার, 'কালকের ওয়ানডে ম্যাচ যে উইকেটে হয়েছে, সেটিতে আমাদের স্পিনাররা টার্ন পায়নি। দেশে স্পিনই আমাদের মূল শক্তি। সেটা কাজ করেনি বলেই ক্যারিবীয়রা এত সহজে ব্যাটিং করতে পেরেছে। যেটা ওরা টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে পারেনি।'
শাহরিয়ারও মানেন যে বাংলাদেশি স্পিনাররা বড় টার্ন পান না। মিরপুরের উইকেটে তবু স্পিনারদের সাফল্যের কারণ, 'বড় টার্ন করলেই কিন্তু স্পিনার ভয়ংকর হয়ে ওঠে না। বড় টার্নের জন্য ব্যাটসম্যান প্রস্তুত থাকতে পারে। কিন্তু ছোট টার্নের পাশাপাশি বল যদি স্কিড করে, সেটা ব্যাটসম্যানের জন্য বিপজ্জনক। ক্যারিবীয়দের জন্য আরো বেশি। মিরপুরে আমাদের স্পিনাররা সে রকম উইকেটই পেয়ে থাকে। যদিও প্রথম ওয়ানডের উইকেটটা একটু অন্য রকম ছিল।' সে মতে আজকের ম্যাচের উইকেট সাকিব-রাজ্জাকদের অপছন্দ হওয়ার কথা নয়। বল ঘুরবে আর পিচে পড়ে হুটহাট পিছলেও যাবে। বাংলাদেশে আসার পর থেকে ক্যারিবীয়রা কুখ্যাত 'চিন মিউজিক' বাজিয়ে চলেছে। তার পাল্টা হিসেবে দুর্বোধ্য স্পিনের সামনে ক্রিজে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের নাচানাচি আজ উপভোগ্যই হয়ে ওঠার কথা!
ম্যাচ-পূর্ব ভাবনার বিস্তর ডালপালা থাকে। অপেক্ষাকৃত ভালো খেলা দলের ভাবনার সে ডালপালা বিস্তৃত হতে থাকে। আর পিছিয়ে পড়া দলের ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটা একটা করে ডাল ভাঙতে থাকে। বৃহস্পতিবার যেমন উইকেটের প্রভাব ছিলই, এরপর নতুন বলে উইকেট না পাওয়ার হতাশা মিলিয়ে স্পিনাররা আরও নিষ্প্রভ। ক্যারিবীয় ইনিংসের শেষ ভাগে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়ায় অভ্যস্ত পজিশনে ব্যাটিং করতে পারেননি ইমরুল কায়েস। তাঁর পরিবর্তে তামিমের সঙ্গে ব্যাট করতে নামেন নাঈম ইসলাম। যদিও ২৯৯ রান তাড়া করার ম্যাচে সেরা বিকল্প হতে পারতেন মোহাম্মদ আশরাফুল। কিন্তু দলের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটারকে কি করে ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তনের অনুরোধের কথা বলেন সদ্যই নিযুক্ত অধিনায়ক! নাঈম যে ব্যর্থ হয়েছেন, সেটি বলারও উপায় নেই। কিন্তু প্রায় তিন শ রান তাড়া করতে নেমে একজন ওপেনারের ফিফটির জন্য ৪৮টি ডট বল নিদারুণ অপচয়-ই। শাহরিয়ার নাফীস যেমন উইকেট এবং স্পিনার প্রসঙ্গে আক্ষেপের সঙ্গে যোগ করেছিলেন, 'যদি ওদের আরো ২০ রান আগে আটকে দেওয়া যেত!' নাঈমের রান না পাওয়া ৪৮ বলে ২০ রানের সেই ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়া কঠিন ছিল না মোটেও। অবশ্য এ অলরাউন্ডার নিয়মিত ওপেনার নন। বরং ম্যাচশেষে নাঈমের 'সার্ভিস'-এর প্রশংসাই করেছিলেন মুশফিক। যদিও সঙ্গে ফুটনোট ছিল, 'উচিত ছিল এমন একটা ব্যাটিংসহায়ক উইকেটে যে সেট হবে তার বড় একটা ইনিংস খেলা। বিশেষ টার্গেটটা যখন তিন শ'র কাছাকাছি ছিল।'
সেটি নাঈম পারেননি। ওভার শেষ হয়ে যাওয়ায় হার মেনে মাঠ ছাড়তে হয় সাকিব আল হাসানকেও। আহা! মিডল অর্ডারে সাবেক অধিনায়কের ইনিংসটাই যদি কেউ শুরুতে খেলে দিতে পারতেন! শেষ হয়ে যাওয়া ম্যাচ নিয়ে খুব বেশি আফসোস করতে রাজি নন শাহরিয়ার, 'জিততে পারিনি। তবে ব্যাটসম্যানরা ২৫৮ রান করেছে। বিসিবি কাপ থেকেই ব্যাটসম্যানরা নিয়মিত রান করে আসছে। এটা অবশ্যই ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস জোগাবে।' সে আত্মবিশ্বাসের অনুবাদ কি আজ মাঠের ক্রিকেটে হবে?
নতুন অধিনায়কের শততম ম্যাচের অনুপ্রেরণার চেয়েও যে আত্মবিশ্বাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। বুক উচ্চতায় ধেয়ে আসা বল সামলাতে যে সবচেয়ে বেশি দরকার আত্মবিশ্বাস। যে আত্মবিশ্বাস প্রয়োগ ক্ষমতার অনুঘটক।

No comments

Powered by Blogger.