উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে হাজার কোটি ডলার সহায়তার আশ্বাস
বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে বৈঠকের ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাথিউ এ ভারগিসের নেতৃত্বে একটি দল সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রায় ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়ে বিশ্বব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২ কিস্তিতে ৫০ কোটি ডলার করে এ অর্থ চেয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এ ছাড়া আর্থিক খাত সংস্কারে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা দিতে পারে বিশ্বব্যাংক। এই ঋণ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের পর্ষদে অনুমোদিত হওয়ার কথা।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংস্কার কার্যক্রমের জন্য সহায়তা দরকার। তাৎক্ষণিক বাজেট সহায়তাও প্রয়োজন। সেই সঙ্গে দরকার কারিগরি সহায়তা। তারল্য সহায়তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আলোচনা ‘মোটামুটি’ ইতিবাচক হয়েছে। তারা উন্মুক্ত মন নিয়েই আলোচনা করতে এসেছিলেন, আরও আলোচনা হবে। তবে আলোচনার মূল নজর ছিল সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন নিয়ে। তিনি বলেন, এ বছর আমরা বাজেট সহায়তা প্রত্যাশা করছি। সালেহউদ্দিন আহমেদ সচিবালয়ে আইএসডিবি’র রিজিওনাল হাব ম্যানেজার নাসিস সোলাইমানের সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, আগামী তিন বছরে একটা প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশকে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি)। বিভিন্ন খাতের জন্য এ অর্থ দেবে তারা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটসহ ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে এ ঋণ দেয়া হবে। প্রান্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণেও ঋণের অর্থ ব্যয় করা যাবে। এ ছাড়া জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ঋণ দেবে তারা। এদিকে গত রোববার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা এডিবি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিংয়ের নেতৃত্বাধীন একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে বাজেট সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি। সংস্থাটি ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি খাতে সংস্কারের জন্য দেবে ৫০ কোটি ডলার। এটা পাওয়া যাবে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে। এর বাইরে জ্বালানি খাতের উন্নয়নেও এডিবি’র কাছে ১০০ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ।
সংস্থাটি চলমান প্রকল্পগুলোও অব্যাহত রাখবে।
যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে ২০ কোটি ডলারের বেশি উন্নয়ন সহায়তা দিচ্ছে। রোববার সে দেশের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) সঙ্গে একটি চুক্তি সই হয়েছে। স্বাস্থ্য, সুশাসন, মানবিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি এবং মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এ অর্থ কাজে লাগানো হবে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির আলোকে এ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে আইএমএফের কাছ থেকে বাড়তি ৩০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী সরকার। আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে’র সঙ্গে অনলাইনে বৈঠকের পর অর্থ উপদেষ্টা ১লা সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের জানান, বাড়তি সহায়তা অনুমোদনের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমানে ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি চলমান। আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠেয় আইএমএফের বার্ষিক সাধারণ সভায় এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা হবে।
যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন ও জাপানের কাছ থেকে বাড়তি বৈদেশিক সাহায্যের আশ্বাস না মিললেও অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা বলে গেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে তারা আগ্রহী এবং তাদের দেশের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পগুলো অব্যাহত থাকবে।
এদিকে বুধবার ঢাকার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, দাতাগোষ্ঠী হাত খুলে টাকা দিতে চাচ্ছে। ইউএসএডি বলছে, তোমরা প্রকল্প তৈরি করো; আমরা টাকা দেবো। যেসব প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল কিন্তু টাকা নেয়া হয়নি এসব টাকা বাজেট সহায়তায় দিতে চায় বিশ্বব্যাংক।
No comments