ডেঙ্গু: আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

সারা দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যু বাড়ছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুতে চলতি বছরের মধ্যে রেকর্ড সৃষ্টি করছে সেপ্টেম্বর মাস। এই মাসেই মারা গেছেন ৩৬ জন। এডিস মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে চলতি মাসের বাকি সময় এবং আগামী মাসে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন কীটতত্ত্ববিদ ও সংশ্লিষ্টরা। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করার উপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মশার প্রজনন ধ্বংস কার্যক্রম ভাটা পড়ায় পরিস্থিতি আবারো ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবও সে কথাই বলছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৫৫ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৪ জন। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ৩৩৯, মৃত্যু ৩ জন। মার্চে আক্রান্ত ৩১১, মৃত্যু ৫ জন। এপ্রিলে আক্রান্ত ৫০৪, মৃত্যু ২ জন। মে মাসে আক্রান্ত ৬৪৪ জন এবং মারা গেছেন ১২ জন। জুনে আক্রান্ত ৭৯৮ এবং মৃত্যু ৮ জন। জুলাইয়ে আক্রান্ত ২ হাজার ৬৬৯ জন, মৃত্যু ১২ জন। আগস্টে আক্রান্ত ৬ হাজার ৫২১ জন এবং মারা গেছেন ২৭ জন। চলতি সেপ্টেম্বরের ১৮ দিনে চলতি বছরের রেকর্ড পরিমাণ আক্রান্ত ৮ হাজার ২৩৮ জন এবং মারা গেছেন ৩৬ জন। চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২১ হাজার ৭৯ জন এবং মারা গেছেন ১১৯ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয় মূলত বর্ষাকালে। আগস্ট থেকে বাড়তে থাকে এর ভয়াবহতা। কিন্তু চলতি বছর মার্চের মাঝামাঝি থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি শুরু হয়। এতে এডিস মশারা তাদের প্রজননে উপযুক্ত আবহাওয়া পেয়ে গেছে বর্ষার আগেই। এখনো এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। আর এর অন্যতম কারণ হিসেবে ডেঙ্গুর প্রজননস্থল ধ্বংসে ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন তারা। একইসঙ্গে আবহাওয়ার তারতম্যও সমানভাবে দায়ী উল্লেখ করে তারা বলছেন, এখনই এডিসের জীবাণুবাহী মশার প্রজননস্থল ধ্বংস না করতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

কেন ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার মানবজমিনকে বলেন, এ বছরের শুরু থেকে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করা হয়েছিল। মশার ঘনত্বের কথা বলা হয়েছিল। এডিসের প্রজনন ধ্বংসে সতর্কতা ও করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজগুলো সেভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। এজন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এডিসের প্রজনন ধ্বংসে এখনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আগামী মাসে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তিনি বলেন, বৃষ্টি ও তাপমাত্রার কারণেও এডিস  মশা বেড়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঠিক সময়ে বিষয়টিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ছিল।

রাজধানীসহ সারা দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আলোচনার চেয়ে অ্যাকশনে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা সে অনুযায়ী কর্মপন্থা গ্রহণ করেছে। ৮ই সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু ও মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক জাতীয় কমিটির সভা করা হয়েছে। সভা ফলপ্রসূ হয়েছে; ইতিমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো এডিস মশার প্রজনন ধ্বংসে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৮৬৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্র বলছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২১, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৫১, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৪২, খুলনা বিভাগে ৯৪ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১৮ জন রয়েছেন। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে ৪৬, রাজশাহী বিভাগে ২০ এবং রংপুর বিভাগে ২৮ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৮ হাজার ৫০০ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ২১ হাজার ৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১১৯ জনের। তাদের মধ্যে ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ নারী ও ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ রয়েছেন। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.