অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেক সভা: রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আর প্রকল্প নয়

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে উল্লেখ করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, এটি এক ধরনের রাজনৈতিক দলিল। রাজনৈতিক সরকার তাদের মতো করে পরিকল্পনা করবে, নীতি নির্ধারণ করবে। এতে রাজনৈতিক দিকদর্শন থাকে। আমরা বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবো না। তারা ক্ষমতায় এসে সিদ্ধান্ত নেবে। এ ছাড়া আগের সরকারের রাজনৈতিক কারণে নেয়া প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনা করা হবে বলেও জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা।

গতকাল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিকাল ৩টায় শেরে-বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। রীতি অনুযায়ী সবসময় একনেক সভা পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হলেও এবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে একনেক সভায় বিপুলসংখ্যক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের গতি এক থাকতো না। অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রকল্পও থাকতো। এখন সেসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কাজেই আগে একনেক সভা মানেই যেখানে অর্থ ব্যয়ের কর্মযজ্ঞ ছিল, এখন সে পরিধি কমে আসবে।

ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, বিদেশি অর্থায়ন পাওয়া যাবে এমন প্রকল্প গ্রহণে গুরুত্ব দেবে সরকার। বহু বছর আগের অনেক প্রকল্প পড়ে আছে। এগুলোতে বিদেশি সহযোগীদের নজরদারি বেশি থাকে। অনিয়ম করা যায় না। তাই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ কম থাকে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে মেলে- এমন কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।

দাতা সংস্থাগুলো হাতখুলে টাকা দিতে চাচ্ছে জানিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ইউএসএইড বলছে, তোমরা যে প্রকল্পই আনো, আমরা টাকা দিয়ে দেবো। দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় যেসব সংস্থা আছে, তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে। চলমান প্রকল্পের বিষয়ে তাদের কোনো অসুবিধা নাই। তারপরও বলছে, তোমাদের চাহিদা বলো, আমরা অর্থায়নের চেষ্টা করবো। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের কথা হচ্ছে আস্তে চলা বিষয়টি তুলে ধরে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আমাদের হাতে এখন একদমই প্রকল্প নেই। আমরা কিছুদিন আস্তে আস্তেই চলবো। আমরা আরও চার-পাঁচ মাস পর বুঝতে পারবো যে, আমাদের উন্নয়ন বাজেট কতো হওয়া উচিত।

দেশের যেসব উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি ঋণ বা সহায়তা আসবে না, সেগুলোর ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়ে সব বছরেই অনিশ্চয়তা থাকেই, এই বছরে অনেক কিছু পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে গেল। অর্থনীতির অনেক অস্থিরতা গেল, এখনো আছে। প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার-এমনটি তুলে ধরে এই উপদেষ্টা বলেন, এখনকার উপদেষ্টা যারা আছেন, তারাই বলছেন- আমরাই দায়বদ্ধ হতে চাই। তিনি বলেন, পরিবেশ ধ্বংস করে এমন কোনো প্রকল্প নেয়া যাবে না।

এদিকে নতুন সরকারের প্রথম একনেক সভায় মোট চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৯৬৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ থেকে পাওয়া যাবে ১০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫৮ কোটি ১৬ লাখ পাওয়া যাবে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে দুটি সংশোধিত ও দুটি নতুন প্রকল্প রয়েছে।

একনেকে অনুমোদিত চারটি প্রকল্প হলো- শিল্প ও শক্তি বিভাগের ‘বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প (১ম সংশোধিত)’, ‘২টি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং ২টি অনুসন্ধান কূপ (সুন্দরপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১) খনন প্রকল্প’, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন (২য় পর্যায়) (২য় সংশোধিত) প্রকল্প’ এবং কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.