ব্যারিস্টার না হয়েও লিখতেন ব্যারিস্টার
সূত্র মতে, ২০১৮’র নির্বাচনে সাধারণ মানুষের কাছে জর্জ একেবারেই অচেনা একজন মানুষ। অনেকে আগে তার নাম কখনো শোনেননি। নিজেকে ব্যারিস্টার হিসেবে পরিচয় দিলেও আদতে তিনি তা নন। জানা গেছে, সেলিম আলতাফ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এরপর কিছুদিন ছিলেন লন্ডনে। তবে সূত্র বলছে, তিনি বার অ্যাট ’ল শেষ করেননি। যদিও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোস্টার-ব্যানারসহ সর্বত্র তিনি তার নামের আগে ব্যারিস্টার ব্যবহার করেছেন। তারপর প্রশ্ন উঠলে ২০২৪ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পোস্টার-ব্যানারে তার নামের আগে আর ব্যারিস্টার ব্যবহার দেখা যায়নি। নির্বাচনী হলফনামায় তিনি বার অ্যাট ’ল এর সনদ জমা দেননি।
এদিকে নির্বাচনের আগে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের দপ্তরে দাখিল করা সেলিম আলতাফের হলফনামা সূত্রে জানা যায়, তার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে ‘এলএলবি (অনার্স), এলএলএম’ উল্লেখ করেছেন। এর সঙ্গে মূল সনদের সত্যায়িত ফটোকপি সংযুক্তির কথাও বলা হয়েছে। পোস্টারে হলফনামার ব্যতিক্রম শিক্ষা ডিগ্রি যোগ করায় তখন থেকেই সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এছাড়াও দলীয় কার্যালয় থেকে তার নামে পঠানো সাংগঠনিক চিঠিগুলোতেও দেখা যায় সেলিম আলতাফ জর্জ ব্যবহার হতো, সেগুলোতে ব্যারিস্টার ব্যবহার হতো না। তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনী হলফনামায় তিনি বার অ্যাট ’ল-এর সনদ জমা দেননি, ইংল্যান্ডের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স করায়। তাদের যে কোনো একটি হতে বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স শেষ করার পর ইংল্যান্ডের ৪টি ইনসের যে কোনো একটি থেকে বার অ্যাট ’ল-র সনদ প্রদান করে। অর্থাৎ লিঙ্কনস ইন, গ্রেস ইন, ইনার টেম্পল ও মিডল টেম্পল এই চারটি ইনস রয়েছে। তবে যে কোনো ইনস থেকে ডিগ্রি পেলেও লন্ডনের বার কাউন্সিলের ব্যারিস্টার রেকর্ডসে তথ্য এবং পরিচয় সংরক্ষিত থাকে। কর্তৃপক্ষ জানান, এই রেকর্ডসের বাইরে কারও নামের সঙ্গে ব্যারিস্টার ব্যবহার করার সুযোগ নেই, আইনগতভাবে তা বৈধ নয়। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে যোগাযোগ করা হয় লন্ডনের বার কাউন্সিলের ব্যারিস্টার রেকর্ডসে। মেইলের মাধ্যমে সেলিম আলতাফ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফিরতি মেইলে ব্যারিস্টার রেকর্ডস জানায়, সেলিম আলতাফ জর্জ নামের কোনো ব্যারিস্টার তাদের তালিকায় নেই।
সেলিম আলতাফ আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার দৌহিত্র তিনি। তার চাচা আবুল হোসেন ও চাচি সুলতানা তরুণও এমপি ছিলেন। আরেক চাচা সামছুজ্জামান অরুণ কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র ছিলেন। তার বাবা প্রয়াত আলতাফ হোসেন কিরণ মুক্তিযোদ্ধা ও স্কুলশিক্ষক ছিলেন। মা মমতাজ বেগম অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকা থেকে সেলিম আলতাফকে গ্রেপ্তার করা হয়, সেলিমের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া ও ঢাকায় একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। সেলিম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়ে কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকার মনোনয়ন পেলেও সতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
No comments