ছোট্ট জিহাদের জীবিকার সংগ্রাম

মো. জিহাদ। বয়স ১২ কিংবা ১৩। বয়সের হিসেবে সে এখনো শিশু। তার বয়সের অন্য শিশুরা রোজ বই-খাতা নিয়ে যায় স্কুল-মাদ্রাসায়। থাকে বাবা-মায়ের পরম যত্নে। তবে ছোট্ট জিহাদ এই বয়সেই ভীষণ দায়িত্বশীল। বয়সের হিসেবে এই বয়সে তারও থাকার কথা ছিল স্কুল বা মাদ্রাসায়। জিহাদও মাদ্রাসায় গিয়েছিল হাফেজি পড়তে তবে তা আর দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী বাবার অসুস্থতার কারণে তাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে পড়ালেখা। বাবার অসুস্থতার কারণে এখন ছোট্ট জিহাদের কাঁধে পুরো পরিবারের দায়িত্ব। পরিবারে রয়েছে-অসুস্থ বাবা, মা এবং ছোট এক ভাই। ভোলার লালমোহন পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মধুছন্দা সিনেমা হল সংলগ্ন একটি ভাড়া বাসায় গত দেড় বছরের মতো সময় ধরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকে জিহাদ। তবে তার আসল ঠিকানা উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বাজার এলাকার ধনগাজী সরদার বাড়ি। সে ওই বাড়ির মোহাম্মদ আলীর ছেলে।

জিহাদ জানায়, গত ৩ বছরেরও অধিক সময় ধরে আমার বাবা অসুস্থ। তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। তাই মা মানুষের বাসায় কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাতেন। আমিও পড়ালেখা করতাম। তবে সংসারে অভাবের কারণে আর পড়তে পারিনি। যার জন্য গত এক বছর আগ থেকে শুরু করি ভাঙারি মালামাল সংগ্রহ ও কেনার কাজ। প্রতিদিন সকালে একটি ভ্যানগাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষের কাছ থেকে পুরনো ভাঙারি মালামাল কিনি, একইসঙ্গে নিজেই আবার মানুষের ফেলে দেয়া অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করি। এরপর ওইসব মালামাল বিকালে আড়তে নিয়ে বিক্রি করি। এতে করে দৈনিক এক হাজার থেকে বারো শত টাকার ভাঙারি মালামাল বিক্রি করতে পারি। সেখান থেকে লাভ হিসেবে থাকে তিনশত থেকে সাড়ে তিনশত টাকার মতো। লাভের এই টাকা থেকে নিজের জন্য কিছু রেখে বাকি টাকা বাবাকে দিই। ওই টাকা দিয়ে তিনিই সংসার চালান। এ কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়। তবুও নিরুপায় হয়ে এ কাজ করছি।
জিহাদের ছোট আমার আরেক ছেলে রয়েছে। সন্তানদের মধ্যে সবার বড় ছিল মেয়ে। তাকে ধারদেনা করে বিয়ে দিয়েছি। তবে এখন যে দুই ছেলে রয়েছে তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? তাই ভাবতে পারছি না। আমার নিজস্ব তেমন কোনো সম্পদও নেই। গরিবদের জন্য তো সরকারি অনেক সাহায্য-সহযোগিতা রয়েছে। আমার অবস্থা বিবেচনা করে সেখান থেকে কোনো একটি সহযোগিতা দিলে আমার জন্য খুবই ভালো হতো।
এ বিষয়ে উপজেলা ইউএনও মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার চেষ্টা করবো।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.