বলতে পারছি না কখন অভিযান শেষ হবে

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আস্তানায় অভিযানে এ পর্যন্ত কমপক্ষে দু’জন জঙ্গি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। তবে ভেতরে আরও জঙ্গি থাকায় অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং কখন অভিযান শেষ তা জানাতে পারেননি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান। দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ীর পাঠানপাড়ার আতিয়া মহল ঘিরে অভিযানের তৃতীয় দিন রোববার বিকাল সাড়ে ৫টায় সর্বশেষ পরিস্থিতি জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান। তিনি বলেন, এখনও আমরা যতটুকু বুঝতে পেরেছি এক বা একাধিক জঙ্গি এখনও ভেতরে আছে। পুরো ভবনটির বিভিন্ন জায়গায় আইইডি লাগিয়ে রাখা হয়েছে। আমরাও যথেষ্ট এক্সক্লুসিভ ফায়ার করেছি। তাই পুরো এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এখন ভেতরে নড়াচড়া করাটা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।আমাদের কমান্ডোরা সব ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা করছে যে কোনো সাইট থেকে তাদের নির্মূল করার জন্য। অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে, কখন এটা শেষ হবে। তিনি বলেন, পুরো ভবনটি যেহেতু খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, তাই অপারেশন পরিচালনা বেশ কঠিন হচ্ছে। এজন্য সময়টা একটু বেশি লাগছে। আমাদের প্রাথমিক যে কাজটা ছিল বাসিন্দাদের নিরাপদে উদ্ধার করা- এটা আমরা দ্রুত করতে পেরেছি। এরপর আমাদের নিজেদের নিরাপদে রেখে জঙ্গিদের নির্মূল করাই ছিল আমাদের কাজ। তাই আমাদের কোনো তাড়াহুড়ো নেই। সতর্কভাবে কাজ করছি। অপারেশন টোয়াইলাইটে ২ জঙ্গি নিহত হয়েছে জানিয়ে ফখরুল আহসান বলেন, আমরা রকেট লাঞ্চার দিয়ে ছিদ্র করে তারপর সেখান দিয়ে টিয়ারশেল ছোড়ার পর তাদের জন্য ভেতরে থাকা কঠিন হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ২ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। দু’জনই পুরুষ সদস্য। অভিযান সার্বক্ষণিক চলতে থাকবে। তিনি বলেন, এখনও এক বা একাধিক জঙ্গি ভেতরে আছে। আমাদের কেউ আহত হননি। একজন শরীরে লাগানো সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটায় বলেও তিনি জানান। কোনো নারী সদস্য আছে কিনা তাও নিশ্চিত নন বলে জানান তিনি।  ফখরুল আহসান আরও বলেন, আশা করেছিলাম আজ শেষ হবে, কিন্তু আজ শেষ হচ্ছে না। অভিযান সার্বক্ষণিক চলবে। জঙ্গিরা কোন গোষ্ঠীর জানা গেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা আমাদের বিষয় নয়, পরবর্তী সময়ে তদন্ত যারা করবেন, তারা বিষয়টি দেখবেন। ভেতরে কোনো নারী জঙ্গি আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। চরম ঝুঁকির মধ্যে আতিয়া মহল থেকে ৭৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে বের করা গেছে মন্তব্য করে ফখরুল আহসান বলেন, এটা আল্লাহর একটা বিশেষ রহমত। আমাদের কমান্ডোরা ভালো টেকনিক অ্যাপ্লাই করেছিল। কারণ জঙ্গিরা আইইডিগুলো লাগিয়েছিল গ্রাউন্ড ফ্লোরে, সিঁড়ি ও ভবনে ঢোকার পথে। তাই কমান্ডোরা নিচ দিয়ে না গিয়ে পাশের বিল্ডিং থেকে মই লাগিয়ে পাঁচতলা ভবনের ছাদের ওপর নেমেছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, কমান্ডোরা পাঁচতলায় গিয়ে চারতলা ব্লক করে দেয়।
এরপর পাঁচতলার বাসিন্দাদের বের করে আনা হয়। একইভাবে দোতলা পর্যন্ত তারা এভাবে করেছে। আগে থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম যে, ভেতরে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ আইইডি লাগানো হয়েছে। তাই নিচ দিয়ে না গিয়ে বাইরে থেকে গ্রিল কেটে হোল তৈরি করে ভেতর থেকে বাসিন্দাদের বের করে আনা হয়। আমাদের মনে হয়েছে, এই অবস্থাটা মোকাবেলা করার জন্য জঙ্গিরা প্রস্তুত ছিল না। তিনি বলেন, বাসিন্দাদের নিয়ে আসার পর আমরা যখন ফায়ার করেছি, তখন তারা পাল্টা জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছে। বাসিন্দাদের যখন বের করে নিয়ে আসা হচ্ছিল, তখন প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, অবস্থাটা আমাদের পক্ষে ছিল। এই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে কাজ করার সময় কোনো সাড়া-শব্দ হয়নি। তারা টের পায়নি। ফলে বাসিন্দাদের বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। কাল থেকে জঙ্গিদের নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করে আসছিলাম। আজ (রোববার) সকাল থেকেই বিভিন্ন টেকনিক অ্যাপ্লাই করছিলাম। রকেট লাঞ্চারের মাধ্যমে বড় হোল তৈরি করে কিছু করা যায় কিনা। কিন্তু খুব একটা সুবিধা হচ্ছিল না। রোববার সকালে একজন বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই বৃদ্ধা আতিয়া মহলে ছিলেন না। উল্টোপাশের একটি বাড়িতে ছিলেন। গতকাল (শনিবার) যখন ওখান থেকে লোকজন বের হয়েছিল, তখন এই বৃদ্ধ মহিলাকে নিয়ে যেতে পারেনি। আজ সকালে এসে তাকে বের করে আনা হয়েছে। আতিয়া মহলে তিনি ছিলেন না। অভিযানের সময় জঙ্গিরা পাল্টা জবাব দিয়েছিল কিনা জানতে চাইলে ফখরুল আহসান বলেন, তাদের কাছে স্মল আর্মস আছে। টার্গেট করছে। এক্সক্লুসিভ আছে। আইইডি আছে। তারা বেশ ওয়েল ইকুইপড। আমরা যে গ্রেনেড চার্জ করছি, তারা উল্টো আমাদের দিকে সেটা ছুড়ে মেরেছে। এক্সক্লুসিভ ফোটাচ্ছে। যেটা দেখা গেছে সবার মধ্যে সুইসাইডাল ভেস্ট লাগানো আছে। বাইরে যারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তাদের সঙ্গে ‘আতিয়া মহলে’র জঙ্গিদের যোগসূত্র থাকতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা যারা তদন্ত করছেন তারা আরও ভালো বলতে পারবেন। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ আছে, র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ আছে। আমরা তো সামরিক গোয়েন্দারা এই বিষয়গুলো নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করি না। যখন ডাক পড়ে, তখন আমরা এসে কাজ করি। তাই তারা ভালো বলতে পারবেন যে, কতটুকু যোগসাজশ রয়েছে। তারা কোন মতাদর্শের, কোন গ্রুপের, কোত্থেকে এসেছে।

No comments

Powered by Blogger.