ধর্ষণের দায়ে দুই যুবকের যাবজ্জীবন

বাক্‌প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের দায়ে দুই যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়। মামলার অপর তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) রেজাউল করিম এ রায় দেন। দণ্ড পাওয়া দুই আসামি হলেন সুইট ওরফে কালু (৩২) ও মো. চান মিয়া ওরফে ফেরদৌস (২৬)। রায়ের পর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। খালাস পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন মাহাবুবুর রহমান (৩২), মোস্তাক (৩০) ও মজনু ওরফে কুটু (২৮)। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট রাতে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পতিসর বাজার থেকে বাক্‌প্রতিবন্ধী এক তরুণীকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপর ধর্ষণ করে তাঁকে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের একটি সেতুর নিচে ফেলে যায় তারা। পরদিন সকালে স্থানীয় এক নারী তাঁকে উদ্ধার করেন। কিন্তু এই তরুণীর ইশারা ভাষা বুঝতে না পারায় তাঁর নাম ও পরিচয় জানা যায়নি। এতে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। পরে ওই উদ্ধারকারী নারীও নিখোঁজ হয়ে যান। স্থানীয় সূত্রে ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে সিংড়া থানার কালিগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল জব্বার বাদী হয়ে গণধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।
মামলায় সিংড়ার হোসেনপুর গ্রামের মাহাবুবুর রহমান, সুইট প্রাং, মো. মোস্তাক, চান মিয়া, মো. মজনু ও শান্তকে আসামি করা হয়। মামলাটির তদন্ত শুরু করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল হাই। তদন্তকালে আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে আসামি সুইট ও চান বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তদন্ত কর্মকর্তা ওই তরুণীকে উদ্ধার করে ডাক্তারি পরীক্ষা করান। বিচারকের সামনে তাঁকে ইশারা ভাষা বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে জবানবন্দি দিতে হাজির করা হলেও তিনি অসুস্থ থাকায় জবানবন্দি দিতে পারেননি না। পরে তাঁকে রাজশাহীর সেভ হোমে পাঠানো হয়। কিছুদিন পর সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। বিচারকালে নয়জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আইনজীবী হারুণ উর রশিদ জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষীই সাক্ষ্য দেননি। তাই দণ্ডের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। তবে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি শাহজাহান কবীর রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। বলেন, যাঁর কেউ নেই, তিনিও যে আদালতের কাছে বিচার পেতে পারেন, তার উদাহরণ এই মামলার রায়। তিনি গণমাধ্যম ও পুলিশকে এই রায় প্রাপ্তির জন্য ধন্যবাদ জানান।

No comments

Powered by Blogger.