জঙ্গী সংগঠনগুলোকে নাশকতা চালানোর নির্দেশ জামায়াতের- গুলশানে গোপন বৈঠকের সময় ৭ জামায়াত নেতা গ্রেফতার by শংকর কুমার দে

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহ্রীর, উগ্র মৌলবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে গোপন বৈঠক করে সবাইকে কঠোর এ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জামায়াতÑশিবির।
এজন্য তারা আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, গ্রেনেড, বোমাসহ আত্মঘাতী হামলার সরঞ্জামাদি মজুদ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ ভিআইপিদের পাওয়া গেলেই তাদের ওপর আক্রমণ করবে তারা। বঙ্গভবন, গণভবন, জাতীয় সংসদ, সচিবালয়সহ স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণস্থানে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালাবে তারা। যুদ্ধাপরাধী বিচারের রায় বানচাল করার জন্য রাজধানীর গুলশানের একটি স্কুলে গোপন বৈঠক করার সময়ে পুলিশ ৭ জামায়াতÑশিবিরের নেতাকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের পর তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের জামায়াতÑশিবিরের টার্গেট কারা এবং কোথায় তারা আক্রমণ চালাবে তার নীলনকশা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত জামায়াতÑশিবির নেতাকর্মীরা শুক্রবার দুপুরে গুলশান নয় নম্বর রোডের ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে বৈঠক করে রাজধানীতে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালানোর ব্যাপারে পরিকল্পনা করছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ জামায়াতের রুকন সালেহ আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান এবং আবদুল মান্নান, মোঃ হেদায়েতুল্লাহ, সগির আহমেদ, কবির আহমেদ ও মোঃ কেফায়েতুল্লাহকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করার পর তাদের পুলিশী হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জামায়াতের ডাকা হরতালের আগে ও হরতালের সময়ে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়িতে আগুন দেয়া, ভাংচুর করাসহ নৈরাজ্য সৃষ্টির ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হরতালের আগে জামায়াতÑশিবির ক্যাডার ও কর্মীরা সচিবালয়সহ অর্থমন্ত্রীর গাড়ি ও ভিআইপিদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
সূত্র জানায়, জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহ্রীরসহ নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনগুলোকে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালাতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার জন্য জিহাদী বই, অডিও, ভিডিও ক্যাসেট সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের মাধ্যমে য্দ্ধুাপরাধীদের বিচার না করতে জনমত সৃষ্টির জন্য সভা, সমাবেশ, সিডি, লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার চালানোর চেষ্টা করছে জামায়াত। জঙ্গী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে দেশের বিভিন্নস্থানে গ্রেনেড-বোমা হামলা চালানো সহ নাশকতা চালানোর জন্য গোপন নির্দেশ দিয়েছে জামায়াতÑশিবির।
জেএমবি, হুজি বা জঙ্গী সংগঠনগুলোর আদলে বোমা তৈরি করছে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী-সমর্থকরাও। এজন্য শিবিরের মধ্যে প্রশিক্ষিত আলাদা একটি ‘উইং’ তৈরি করেছে। এছাড়া শিবির উগ্র মৌলবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনগুলোর সমন্বয় করে বোমা বা অস্ত্র প্রশিক্ষণ, চালনাসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দিয়েছে। শিবিরের মধ্যে যারা অস্ত্র বিস্ফোরক সম্পর্কিত কাজকর্মে পারদর্শী তাদের সংগঠন থেকে ‘ইনসেনটিভ’ বা সুবিধাও দেয়া হয়। অস্ত্র চালনা পারদর্শী ছাড়াও বোমা তৈরিতে পারদর্শী শিবিরের এরকম কর্মী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নেমেছে।
সূত্র জানায়, জামায়াতÑশিবিরের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ও ক্যাডারকে ইতোমধ্যেই খুন, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, অস্ত্র, বিস্ফোরক, সন্ত্রাস দমন আইনে গ্রেফতার ও মামলা করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। হরতালের আগে ও হরতালের সময়ে গ্রেফতারকৃতদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জহুরি মহল্লার শিবিরের মেস থেকে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি শাটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ছয়টি বোমা, যা দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। শিবিরের নেতাকর্মীরা নিজেরাই এসব তৈরি করেছে। শিবিরের ওই মেসটি থেকে পাঁচ প্যাকেট সালফার ও পটাশসহ অন্যান্য বিস্ফোরক দ্রব্যা ছাড়াও ১২টি গোল্ড পেন্সিল ব্যাটারি, ১ টি লাল রঙের স্কচ টেপ, ২০ গজ সাদা, কালো ও লাল রঙের বৈদ্যুতিক তার। এসব উপাদান সবই বোমা তৈরির কাজে ব্যবহার হয়। এছাড়া রাজধানীর পান্থপথে স্কয়ার হাসপাতাল এলাকার পেছনের অংশে অস্ত্র বিস্ফোরকের আরেকটি বড় চালান ছিল, যা অভিযানের আগেই সরিয়ে ফেলা হয়। জামায়াতÑশিবিরের কর্মসূচী ঘোষণা থাক বা না থাক এখন রাজধানীর পান্থপথ ও কাওরানবাজার এলাকায় ঝটিকা মিছিল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ অব্যাহত আছে। রাজধানীর শিবিরের মেসগুলোতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সদস্যরাও আত্মগোপন করে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করছে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার দুপুরে গুলশান নয় নম্বর রোডের ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে বৈঠক করার সময় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত এই ৭ জনের মধ্যে জামায়াতের রুকন সালেহ আহমেদও আছেন। এ ছাড়াও মোস্তাফিজুর রহমান এবং আবদুল মান্নান, মোঃ হেদায়েতুল্লাহ, সগির আহমেদ, কবির আহমেদ ও মো. কেফায়েতুলাহ। তারা নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনার উদ্দেশ্যে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষক অডিটরিয়ামে বসে গোপনে বৈঠক করছিল। কেফায়েতুল্লাহ ওই কলেজের উপাধ্যক্ষ এবং জামায়াতের বাড্ডা থানার নেতা। আর আবদুল মান্নান বাড্ডা, হেদায়েতুল্লাহ ভাটারা ও সগির আহমেদ বনশ্রী থানার নেতা। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে গত নবেম্বর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর হামলা ও ভাংচুর চালিয়ে আসছে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। বৃহস্পতিবারও তারা সারাদেশে হরতাল করে এবং সংঘাতে জড়িত ছিল বলে পুলিশ জানায়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর অর্ধদিবস হরতালে গাড়ি ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর হামলাসহ সহিংস ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১৩টি মামলা দায়ের করেছে।
বৃহস্পতিবার গভীররাতে ও শুক্রবার সকালে ডিএমপির ১০টি থানায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়। রমনা থানায় ২টি, শাহবাগ থানায় ৩টি করে মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়াও পল্টন, ধানমন্ডি, গুলশান, লালবাগ, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, মিরপুর ও পল্লবী থানায় একটি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ডিএমপির মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার জামায়াতের ডাকা হরতালে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ বাদী এসব মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে দ্রুত বিচার আইনে ৪টি এবং অবৈধ বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে অন্য ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলাগুলি বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ডিএমপির ১০টি থানায় করা হয়েছে। ১৩টি মামলায় জামায়াত-শিবিরের জ্ঞাত-অজ্ঞাত আনুমানিক ৫শ’ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা করার অভিযোগে রাজধানীর গুলশানের একটি স্কুল থেকে জামায়াতে ইসলামীর গ্রেফতার করা ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে জামায়াতÑশিবিরের নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির নীলনকশার ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। বঙ্গভবন, গণভবন, সচিবালয়, মন্ত্রীর গাড়িসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণস্থানে হামলার করার ব্যাপারেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.