পবিত্র কোরআনের আলো-বিশ্বজগৎ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য মানুষকে স্বাধীনতা দিয়ে পরীক্ষা করা

৬. ওয়া মা মিন দা-ব্বাতিন ফিল আরদ্বি ইল্লা আ'লাল্লা-হি রিযক্বুহা, ওয়া ইয়া'লামু মুছ্তাক্বার্রাহা ওয়া মুছ্তাওদাআ'হা; কুল্লুন ফী কিতা-বিম্ মুবীন।
৭. ওয়া হুওয়াল্লাযী খালাক্বাছ্ ছামা-ওয়াতি ওয়ালআরদ্বা ফী ছিত্তাতি আইয়্যা-মিন ওয়া কা-না আ'রশুহূ আ'লাল মা-য়ি লিইয়াব্লুওয়াকুম আইয়্যুকুম আহ্ছানু
আ'মালা; ওয়ালায়িন ক্বুলতা ইন্নাকুম্ মাব্ঊ'ছূনা মিম্ বা'দিল মাওতি লাইয়াক্বূলান্নাল্লাযীনা কাফারূ ইন হা-যা ইল্লা ছিহ্রুম্ মুবীন।
৮. ওয়া লায়িন আখ্খারনা 'আনহুমুল 'আজাবা ইলা উম্মাতিম মা'দুদাতিন লাইয়াক্বুলুন্না মা ইয়াহবিছুহু, আলা ইয়াওমা ইয়া'তীহিম লাইছা মাছরূফান 'আনহুম ওয়া হাক্বা বিহিম মা কানূ বিহি ইয়াহতাহযিউন। [সুরা : হুদ, আয়াত : ৫-৭]
অনুবাদ : ৬. পৃথিবীতে বিচরণকারী এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিক আল্লাহ নিজ দায়িত্বে রাখেননি। তিনি এদের স্থায়ী অবস্থান জানেন এবং সাময়িক অবস্থানও। (বিশ্বজগতের) সব কিছু সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।
৭. তিনি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, যখন তাঁর আরশ ছিল পানির ওপর। এটাও এ কারণে যেন তোমাদের পরীক্ষা করে লন যে তোমাদের মধ্যে সৎকর্মশীল কে? হে নবী! যদি আপনি মানুষকে বলেন, তোমাদের মৃত্যুর পর জীবিত করা হবে, তখন যারা অবাধ্যতার পথ অবলম্বন করেছে অর্থাৎ কাফির হয়েছে, তারা বলে, এটা তো স্পষ্ট জাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।
৮. আমি কিছুকালের জন্য যদি তাদের শাস্তি স্থগিত রাখি, তবে তারা নিশ্চয়ই বলবে, কিসে তা আটকে রেখেছে (অর্থাৎ এটা আটকে রাখার কোনো বিষয় নয়); সাবধান হওয়া উচিত, যেদিন এ শাস্তি তাদের ওপর এসে পড়বে, তখন কেউ তা আটকাতে পারবে না। এরা যা নিয়ে ঠাট্টা করছে, তা তাদের চারদিক থেকে বেষ্টন করে ফেলবে।
ব্যাখ্যা : ৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহর সৃষ্ট বিশ্বপ্রকৃতির এক চূড়ান্ত সত্যের কথা বলা হয়েছে। এখানে সৃষ্টিজগতের সবার জন্য সব কিছুর ব্যবস্থা বিদ্যমান আছে। বিচিত্র জীবন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকুল এ প্রকৃতির মধ্য দিয়েই জীবন ধারণ করে চলেছে। তাফসিরে কাশশাফে আল্লামা যমখশরি বলেন, 'মুস্তাক্কার' শব্দের অর্থ ভূমণ্ডলে, বায়ুমণ্ডলে এবং পানিতে প্রাণিকুলের বাসস্থান, আর 'মুস্তাওদা' বাবার ঔরসে, মায়ের গর্ভে এবং ডিমের ভেতরে প্রাণীর অবস্থান। এ আয়াতে এটাও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে আল্লাহর মহান সৃষ্টিজগৎ অনবদ্ধ স্মৃতিতে সংরক্ষিত।
৭ নম্বর আয়াতে বিশ্বজগতের সৃষ্টি রহস্যের কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। যেমন ছয় দিনে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং আকাশমণ্ডল ও জমিন সৃষ্টি করার আগে আরশ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে এবং আরশকে পানির ওপর রাখার কথাও বলা হয়েছে। এগুলো কিন্তু বিশ্বজগৎ সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নয়। মানুষকে এ-সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানানো এর উদ্দেশ্যও নয়। এ বর্ণনা মানুষকে জানানো নৈতিক উপদেশের অংশ। এ জগৎ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য আশরাফুল মাখলুকাত মানুষের জন্য স্বাধীন কর্মক্ষেত্র তৈরি করা এবং কে সৎকর্মশীল হয়, আর কে অবাধ্য হয়, তা পরীক্ষা করা। আমাদের মনে রাখতে হবে, কোরআন মানুষের কাছে বিজ্ঞানের রহস্য আবিষ্কার করে দেওয়ার জন্য নাজিল হয়নি, নাজিল হয়েছে মানুষকে নৈতিক উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে সৎপথে পরিচালিত করার জন্য। আল্লাহ তায়ালা জগৎ সৃষ্টি করেছেন, তিনি সব কিছু জানেন। তিনি চান মানুষ নিজ সাধনায় সত্যকে অনুসন্ধান করুক এবং সত্যের পথ অনুসরণ করুক। কাফিররা মৃত্যুর পর মানুষের পুনরুত্থান ও বিচারের মুখোমুখি হওয়াকে জাদু বলে অবহিত করত এবং আল্লাহর দেওয়া শাস্তির ব্যাপারে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত। এ ব্যাপারে ৮ নম্বর আয়াতে তাদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। শেষ পরিণতিতে কাফিররা যে নিপাত হবে, এ ইঙ্গিত এখানে দেওয়া হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.