একফসলি জমিতে হবে দুই ফসল by আজাদ রহমান

তায়েখালী বিলের প্রায় দুই হাজার একর জমি একফসলি। বর্ষায় এ জমি পানির নিচে থাকে। শুষ্ক মৌসুম ছাড়া কোনো ফসল হয় না। বিলের এসব জমির মালিক চারপাশের ১০টি গ্রামের সহস্রাধিক পরিবারকে তাই একটি ফসল ঘরে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। এ কারণে তাদের অভাব-অনটন যেন কাটে না।
অভাবী জনপদের ওই সব মানুষ এবার একত্র হয়ে বিলে জমে থাকা বর্ষার পানি কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা শুষ্ক মৌসুমে একটি ফসল আর বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষ করার পরিকল্পনা করেছেন। আর এই লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা ইতিমধ্যে গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠক শুরু করেছেন। আগামী বর্ষা মৌসুম থেকেই জলাবদ্ধ ওই জমি দোফসলি করার লক্ষ্যে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন।
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার পূর্বাঞ্চলে ১০টি গ্রামের মধ্যে রয়েছে একটি বিশাল বিল। এটিই তায়েখালী বিল নামে পরিচিত। বিলে রয়েছে প্রায় দুই হাজার একর জমি। এই জমির মালিক মল্লিকপুর, মথুরাপুর, খড়িকাডাঙ্গা, দৌলতপুর, ভোলপাড়া, মহেশ্বরচাঁদা, হরিগোবিন্দপুর, আড়ুয়াশলুয়া, বলাকান্দর ও বেথুলী গ্রামের সহস্রাধিক ব্যক্তি। শুষ্ক মৌসুমে এই বিলে সরিষা, ছোলা ও মসুরি চাষ করেন তাঁরা।
দৌলতপুর গ্রামের ইমদাদ হোসেন জানান, বিলপাড়ের গ্রামগুলোর মানুষের জমি থাকতেও অভাব কাটে না। এ অবস্থায় তাঁরা কয়েকজন বর্ষা মৌসুমেও এসব জমি কীভাবে কাজে লাগানো যায়, এ বিষয়ে পরিকল্পনা করেন। তাঁরা জমির মালিকদের একত্র করে একসঙ্গে চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুষ্ক মৌসুমে গোটা বিলে সরিষা চাষ এবং এর সঙ্গে মৌমাছি চাষ করা হবে। আর বর্ষায় সম্মিলিতভাবে বিলে চাষ করা হবে মাছ। প্রত্যেকে জমির মালিকানা অনুযায়ী ভাগ পাবেন।
এই উদ্যোগের আরেক নেতা মল্লিকপুর গ্রামের আলতাফ হোসেন জানান, তাঁরা কৃষকদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। তাই ২১ ডিসেম্বর বিলের পাড়ে তাঁরা একটা কৃষক সমাবেশ করেছেন। সেখানে একফসলি জমি দোফসলি করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। এখন গ্রামে গ্রামে জমির মালিক ও পরিমাণ নির্ধারণে জরিপকাজ চলছে। এরপর আরেকটি কৃষক সভা করে খেতে নেমে পড়বেন তাঁরা। তিনি আরও জানান, বর্তমানে বিলের বেশির ভাগ জমিতে সরিষা রয়েছে। কৃষকেরা নিজেদের উদ্যোগে সরিষা চাষ করেছেন। এই সরিষা ওঠার পর তাঁরা গোটা বিল মাছ চাষের আওতায় আনবেন।
জমির মালিকদের একজন দৌলতপুর গ্রামের কামরুজ্জামান জানান, সম্মিলিতভাবে কাজ করলে এগিয়ে যাওয়া যায়—এটা তাঁরা দেখিয়ে দেবেন বলে আশা করছেন। আগামী বর্ষা মৌসুমেই তাঁদের এই বিলে সম্মিলিতভাবে মাছ চাষ শুরু হবে। একই ধরনের কথা বলেন হরিগোবিন্দপুরের বাদশা আলমগীরসহ কয়েকজন কৃষক।

No comments

Powered by Blogger.