‘স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার’- দিনাজপুর আ’লীগের কাউন্সিল

দীর্ঘ আট বছর পর ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে রবিবার দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাউন্সিল উদ্বোধন করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সুপ্রীমকোর্টের রায়ে বাতিল হয়েছে,
যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে বিরাজনীতিকরণে রাজনীতিবিদ, ছাত্র, শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর ফিরে আসবে না। কোন শক্তিই তত্ত্বাবধায়কের নামে অনির্বাচিত শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে পারবে না। বর্তমান সরকার অনির্বাচিত কারও কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন।
দুপুর ১টায় শহরের স্টেশন ক্লাব প্রাঙ্গণে কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন মোহাম্মদ নাসিম। পরে কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে ভূমি প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি এবং কাউন্সিলরদের গোপন ভোটে আজিজুল ইমাম চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী শরিফুল আহসান লাল একসঙ্গে কাউন্সিল মঞ্চে উঠে মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে হাত উঁচিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
কাউন্সিল অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী সতীশ চন্দ্র রায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি ও কেন্দ্রীয় সদস্য এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী এমপি।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক আলহাজ আজিজুল ইমাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে কাউন্সিলে সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান এমপি। এবারের জেলা কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে জেলার ১৪টি থানা, ৮টি পৌরসভা ও ১০২টি ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। দুপুরের আগে থেকেই বিভিন্ন ইউনিয়ন-উপজেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী কাউন্সিলস্থলে আসতে থাকেন।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, একাত্তরের ঘাতকদের রক্ষা করতে খালেদা জিয়া মরিয়া হয়ে উঠেছেন। মুখে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বললেও তাদের অন্তরে আছে মানবতাবিরোধীদের রক্ষা করা। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় কোন ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। দেশের মানুষ স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিএনপির ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দেবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এদেশের মাটিতে হবেই। নাসিম বলেন, একাত্তরের ঘাতক এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের শুধু রাজপথেই পরাজিত করা হবে না, আগামী নির্বাচনেও শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে ভোটের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করা হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে যেমন জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে তেমনি আগামী নির্বাচনেও তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর যত নির্বাচন হয়েছে, সবই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে চলছে। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ দমন করা হয়েছে। বিদ্যুত সমস্যার সমাধানে সরকার অনেকটাই এগিয়ে গেছে। কৃষক-শ্রমিকের কল্যাণে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির দেশবিরোধী চক্রান্ত মোকাবেলায় শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে সবাইকে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.