টিআইবির উদ্বেগ-জিএসপি পর্যালোচনা পোশাক কর্মীদের শাস্তিস্বরূপ

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাকের বাজার সুবিধা (জিএসপি) পর্যালোচনার উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি দায়িত্বশীল ও নৈতিকতাসম্পন্ন ব্যবসা পরিচালনায় ভূমিকা রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। টিআইবি মনে করে, জিএসপি সুবিধা পর্যালোচনা হবে এ দেশের পোশাকশিল্পে নিয়োজিত কর্মীদের শাস্তি দেওয়ার নামান্তর। উল্লেখ্য, গত মাসে সাভারের তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন আইন প্রণেতা দেশটির বাজারে বাংলাদেশি গার্মেন্ট পণ্যের বাজার সুবিধা (জিএসপি) পর্যালোচনার আহ্বান জানান। পত্রিকায় প্রকাশিত এ সম্পর্কিত খবরে টিআইবি উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের আরো ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'তাজরীন গার্মেন্ট ট্র্যাজেডির দায় আইনের শাসনে ঘাটতি, দুর্নীতি ও বেপরোয়া মুনাফা অর্জনের নেশার ওপর বর্তায়। এ ঘটনায় দায়ী সবাইকে বিচারের আওতায় এনে পোশাক শ্রমিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবিধান করে ভবিষ্যতে এ রকম দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। তথাপি এ ধরনের দুর্ঘটনার সূত্র ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের প্রবেশাধিকার সীমিত করার কোনো পদক্ষেপই গ্রহণযোগ্য সমাধান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। এটি একদিকে যেমন মাথাব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলা এবং বাস্তবে গার্মেন্ট শিল্পে নিয়োজিত কর্মীদের, বিশেষ করে যাঁদের ৮৫ শতাংশই নারী, তাঁদের বিনা দোষে শাস্তি দেওয়ারই নামান্তর।'
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'পোশাকশিল্পে কাজের পরিবেশের অবনতির কারণে আমরা সবাই সমানভাবে উদ্বিগ্ন এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারক, বিশেষ করে সে দেশের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে এই ধরনের অদূরদর্শী, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও কাপুরুষোচিত উদ্যোগ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।'
জিএসপি সুবিধা পর্যালোচনার পদক্ষেপের যুক্তি হিসেবে পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঘাটতির বিষয়টি উল্লেখ করায় টিআইবি আরো বেশি উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের এ ধরনের অবস্থান আত্মঘাতী ফল বয়ে আনতে পারে বলে ড. ইফতেখারুজ্জামান আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তিনি মনে করেন, এর ফলে পোশাকশিল্পের বাজার সংকোচনের মধ্য দিয়ে বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে, যা বাস্তবে নিরপরাধ পোশাক কর্মীদের অধিকার হরণেরই সমতুল্য। এ রকম নেতিবাচক অবস্থান ত্যাগ করে বরং পোশাক শ্রমিকের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও কল্যাণের বিষয়টি নিশ্চিত করে অধিকতর ব্যবসা চুক্তি সম্পাদনে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের উৎসাহিত করার জন্য সে দেশের সরকারসহ ব্যবসায়ী মহলের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.