ইপিআইতে নিউমোনিয়ার টিকা যোগ হচ্ছে আগামী বছর থেকেই- রোটা ভাইরাস ও জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে টিকা চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

আগামী বছর থেকে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীতে (ইপিআই) নিউমোনিয়ার টিকা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। দেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী সকল শিশুকে নিউমোনিয়ার হাত থেকে রক্ষা করাই এর প্রধান লক্ষ্য।
রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস এ্যান্ড ইম্যুনাইজেশন (গ্যাভি) ‘বেস্ট পারফরমেন্স এ্যাওয়ার্ড’ প্রদান পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এ কথা জানান। নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচীতে ধারাবাহিক সাফল্যর স্বীকৃতিস্বরূপ গ্যাভি গত ৬ ডিসেম্বর তাঞ্জানিয়ার দারুস সালামে বাংলাদেশকে এ পুরস্কারে ভূষিত করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিউমোনিয়া থেকে রক্ষার জন্য ২০১১ সালে বাংলাদেশ গ্যাভি সচিবালয়ে নিউমোনিয়ার টিকাদানে সহায়তার আবেদন করে। গ্যাভি বোর্ড ২০১২ সালের এপ্রিলে প্রস্তাবটি অনুমোদন করে। আগামী বছর ২০১৩ সালের ইপিআইতে নিউমোনিয়ার টিকা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এখন প্রতিহাজারে ৫৩ শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। যা সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে ৪৮-এ নামিয়ে আনতে চায়। ফলে এই টিকা চালু হওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘদিন ধরে নিউমোনিয়া টিকা প্রচলনের দাবিও ছিল তাদের।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, নিউমোনিয়ার টিকা ছাড়াও সরকার রোটা ভাইরাসে জরায়ুর ক্যান্সার প্রতিরোধেও টিকা চালুর পরিকল্পনা করছে। কিন্তু কিছু টিকা রাখার জন্য জায়গা তৈরি করতে হয়, যা তৈরি হলে দু’টি নতুন টিকা ইপিআইতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, আমরা ইপিআইতে সফল। গত দশ বছর ধরে দেশ পোলিওমুক্ত রয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ পোলিওমুক্ত না হওয়ায় আমরা পোলিও মুক্ত অঞ্চলের স্বীকৃতি পাচ্ছি না এবং বাচ্চাদের পোলিও টিকা খাওয়াতে হচ্ছে। গ্যাভি বেস্ট পারফরমেন্স এ্যাওয়ার্ড অর্জন করায় ইপিআই কর্মসূচীতে বিমনবন্দর থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত যারা কাজ করছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানান তিনি।
ইপিআইর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১১ সালেই ৮০ শতাংশ শিশুকে সব ডোজসহ পুরোপুরি টিকা দেয়া হয়। তবে এক ডোজ টিকা পেয়েছে এমন শিশুদের ধরা হলে ৯৫ শতাংশ শিশুকেই টিকা দেয়া হয়েছে। তবে ২০১৬ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ শিশুকেই সব টিকা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে শহর এলাকায় ভাসমান মানুষের কারণে গ্রামের তুলনায় শহরের টিকা প্রদানের হার কম। টিকা প্রদানের হারের দিক থেকে ১৩টি জেলা পিছিয়ে রয়েছে জানিয়ে বলা হয় ওই জেলাগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এর মাধ্যমে ওইসব এলাকায় শিশুদের টিকা গ্রহণের হার বৃদ্ধি পাবে।
সরকার ১৯৭৯ সালে শিশু মৃত্যুর হার কমানোর জন্য যক্ষ্মা, পোলিও, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, টিটেনাস ও হাম এই ছয়টি রোগের জন্য টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে হেপাটাইসিস বি, হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি (এইচআইবি) এবং রুবেলা টিকা যোগ করা হয়। এখানকার নয়টির সঙ্গে আরও তিনটি টিকা যোগ করা হলে ইপিআইতে অন্তর্ভুক্ত টিকার সংখ্যা দাঁড়াবে ১২টিতে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, বিসিজি টিকা শুধুমাত্র শিশু বয়সেই যক্ষ্মা প্রতিরোধ করে। এছাড়া সকল ধরনের যক্ষ্মা বিসিজি প্রতিরোধ করে না। বিষয়টি নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে বলে জানানো হয়।
প্রসঙ্গত গ্যাভি ৭৪টি অংশীদার দেশের মধ্যে টিকাদান কর্মসূচীতে সবচেয়ে ভাল করায় দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশকে পুরস্কৃত করল। এর আগে গ্যাভি প্রদত্ত সহায়তার সঠিক ব্যবহার ও টিকাদান কর্মসূচীর ব্যাপক উন্নতিসাধনের জন্য ২০০৯ সালের ভিয়েতনামের হ্যানয়ে বাংলাদেশকে প্রথমবার পুরস্কৃত করা হয়। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীতে দেশে বার্ষিক ৪৫ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে গ্যাভি ২৩ মিলিয়ন ডলার সাহায্য হিসেবে দিয়ে থাকে। এছাড়া নতুন যেসব টিকা চালু হবে তার ৯৪ ভাগ ব্যয় বহন করবে গ্যাভি বাকি ৬ শতাংশ করবে সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব) মুজিবুর রহমান ফকির, স্বাস্থ্য সচিব হুমায়ুন কবির, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার সিফায়েত উল্লাহ ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক একেএম আমির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.