দুই সন্তানকে সেতুর ওপর থেকে পদ্মায় ফেলে দিলেন বাবা

‘বাবার সঙ্গে চুল কাটাতে গেল দুই সন্তান মুন্নি আক্তার (১০) ও মানসুর হোসেন (৫)। কিন্তু শিশুদের বাবা ওদের চুল কাটাতে নিয়ে গেলেন না। নিয়ে গেলেন পদ্মা নদীর ওপর লালন শাহ সেতুতে। এরপর সেতু থেকে তাদের নদীতে ফেলে দিলেন।’ ওই দুই শিশুসন্তানের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন।


কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় গত শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাবা আবদুল মালেককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, উপজেলার বারদাগ গ্রামের মালেক গত শনিবার সাংবাদিক ও পুলিশের কাছে দুই সন্তানকে নদীতে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। শনিবার বিকেলেই শিশু দুটির মা মমতাজ খাতুন বাদী হয়ে মালেকের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে বিকেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মমতাজ খাতুন জানান, শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে দুই ছেলেমেয়েকে চুল কাটানোর কথা বলে মালেক তাদের নিয়ে যান। এরপর তিনি আর বাড়ি ফিরে আসেননি। শনিবার তিনি শুনতে পান, দুই ছেলেমেয়েকে তাঁর স্বামী নদীতে ফেলে দিয়েছেন।
মমতাজ খাতুন আরও বলেন, ‘অন্যের বাড়িতে কাজ করি, কাঁথা সেলাই করি ছেলি-মিয়ির মুখে ভাত দিই। স্বামী কোনো কাজ করে না। ঈদি ছেলি-মিয়িরা নতুন জামা চাইছিল। স্বামী না দিতি পাইরি নদীত লি মারি ফেলিছে।’
মালেক সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার সকালে দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি একটি নসিমনে করে লালন শাহ সেতুর ওপর নামেন। মুন্নি ও মানসুরকে সেতুর রেলিংয়ের ওপর বসিয়ে প্রথমে মুন্নিকে ফেলে দেন। ভয়ে মানসুর দৌড় দিলে তাকে ধরে নদীতে ফেলে দেন। তিনি বলেন, ‘আমার অভাবের সংসার। পেটে ভাত নাই, সন্তান বাঁচি রাখি কী করব। তাই সেতুর ওপর নি ফেলি দিছি।’
এদিকে শনিবার সকালে প্রথম আলো অনলাইনে ছবিসহ সংবাদটি প্রকাশিত হলে ওই দিন বিকেলেই জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক মমতাজ খাতুনের বাড়ি গিয়ে তাঁর হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেন।
বনমালী ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, বিকৃত মানসিকতার মানুষের পক্ষেই কেবল এমন কাজ করা সম্ভব।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম বলেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই দুই শিশুকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গত রোববার মালেককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.