রাষ্ট্রপক্ষের আশা আগামী বছরের মধ্যে বিচার শেষ হবে- ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা

বেদনাবিধূর-শোকবিহ্বল পরিবেশে পালিত হয়েছে এবারের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দিবসটি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিল সমগ্র জাতি। অথচ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ৮ বছর পরও বিচার শেষ হয়নি। আগামী বছরের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন হতে পারে বলে আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।


এই মামলায় এখনও পর্যন্ত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৭ জন পলাতক রয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ২৫ জনকে। এর মধ্যে ৮ জন আছে জামিনে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাটি জজ মিয়া নাটক সাজানোর ঘটনার পর ফের তদন্ত শুরু হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই মামলায় ২২ আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আদালতের আদেশে এই মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। এতে আসামির তালিকায় যোগ হন তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীসহ ৩০ জন। গত বছরের ৩ জুলাই অধিকতর তদন্তের পর তারেক রহমান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৩০ জনকে আসামির তালিকায় যোগ করে মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ সুপার আব্দুল কাহহার আকন্দ। সম্পূরক চার্জশীট দেয়ার পর এ মামলায় আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দুই মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রে (চার্জশীট) বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত গত ১৮ মার্চ। এ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বহুল আলোচিত এই মামলার অভিযুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন এজলাসে বিচার কাজ চলছে। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন বর্তমান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েক শ’ নেতাকর্মী হামলায় আহত হন।
একুশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলারই বিচার কাজ চলছে। সর্বশেষ মামলার ৬৩তম সাক্ষী ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মিজানুর রহমান গত ৬ আগস্ট আদালতে জবানবন্দী প্রদান করেন। ১২ আগস্ট তাঁর জেরা শুরু হলে মামলার অন্যতম আসামি তারেক রহমানসহ পলাতক ৭ জনের পক্ষে সাক্ষীকে জেরা করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হকের পক্ষে তাদের আইনজীবী জেরা শুরু করলে তা অব্যাহত থাকায় ওই সাক্ষ্যগ্রহণের কার্যক্রম শেষ করেন বিচারক। ওই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আগামী ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর বাকি জেরার জন্য দিন ধার্য করেছেন বিচারক। মামলায় সাক্ষী রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৯১ জন।
ঘটনার পেছনের কথা ॥ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। ২০০৮ সালের ১১ জুন আদালতে চার্জশীট দাখিল করে সিআইডি সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবির। চার্জশীটে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। ২০১০ সালের গত ৩ জুলাই তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে নতুন আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুর কাহার আকন্দ।
পলাতক আছে যারা ॥ এ মামলায় এখনও পলাতক দেখানো হয়েছে- তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, বিএনপির এমপি কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ হানিফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পর্ব) ওবায়দুর রহমান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, লে. কর্নেল (অব) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর (অব) এটিএম আমিন, মাওলানা তাজউদ্দিন, ঝিনাইদহের ইকবাল, বরিশালের মাওলানা আবুবকর, মাগুরার খলিলুর রহমান, ঢাকার দোহারের জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও গোপালগঞ্জের মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার। এ ছাড়া ভারতের তিহার কারাগারে আটক হুজির সদস্য আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মোত্তাকিন।

No comments

Powered by Blogger.