প্রকাশনা শিল্পের বাতিঘর

বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প যার হাত ধরে দাঁড়িয়েছে, তিনি হুমায়ূন আহমেদ। সৃষ্টিশৈলী, মেধা আর জনপ্রিয়তায় তিনি আবিষ্ট করে রেখেছিলেন এদেশের পাঠক সমাজকে। বন্ধ্যা একটি বাজারকে তিনি একাই নিয়ে এসেছেন আজকের অবস্থানে।


প্রকাশকদের স্মৃতিচারণ...
ফরিদ আহমেদ, সময়
হুমায়ূন আহমেদ চলে গেলেন। সমগ্র দেশবাসীর মতো আমিও শোকাতুর। স্বাধীনতা-পরবর্তী কয়েক দশক ধরে তিনি বাংলা সাহিত্যের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন। ২৪ বছর আগে আমাদের প্রকাশনা থেকে তার বই প্রকাশের সুযোগ হয়েছিল। এরপর অসংখ্য বই প্রকাশ করেছি। তার সঙ্গে সরাসরি কাজের সুযোগ হয়েছিল আমার। হুমায়ূন আহমেদ তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে প্রায় একাই নিয়ে এসেছেন এতদূর। পাশাপাশি পাঠক তৈরি এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার বিষয়ে তার অবদান ভোলার নয়। প্রতি বছর আমাদের বইমেলা জমজমাট হতো তার কারণে। তিনি আমাদের একলা করে চিরতরে চলে গেলেন। তার এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। যে ভূমি তিনি তৈরি করেছেন একাই, এখন থেকে সবই থাকবে_ শুধু তিনি থাকবেন না আমাদের মাঝে।

ওসমান গনি, আগামী প্রকাশন
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে আমাদের সবার হৃদয়ে আজ রক্তক্ষরণ। একটা সময় আমাদের দেশে ভারতীয় সাহিত্যিকদের বইয়ের ভালো প্রচলন ছিল; কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যকে এদেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। আজ এমন দিনে এ কথা সাহসের সঙ্গে বলা যায়, বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পে তার অবদান শতভাগ। তার হাত ধরেই দাঁড়িয়েছে এদেশের প্রকাশনা। একটা সময় এমনও গিয়েছে মানুষ বইমেলায় আসত শুধু হুমায়ূন আহমেদের বই কিনতে। তার রচনায় অভ্যস্ত হয়ে এদেশের অধিকাংশ মানুষের মাঝে পাঠাভ্যাস গড়ে উঠেছে। পরে এ অভ্যাস ধরে রেখে তারা অন্যান্য লেখকের বইও পড়ছেন। এর ফলে আমাদের এখানকার বাজার তৈরি হয়েছে। তার মতো এত জনপ্রিয় লেখক আমাদের দেশে আসবেন কি-না জানি না। তার মৃত্যুতে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়।

মনিরুল হক, অনন্যা
বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য নাম হুমায়ূন আহমেদ। তার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। সৃজনশীল সাহিত্যের এ প্রবাদপুরুষ চিরতরে আমাদের নিঃস্ব করে চলে গেলেন। তার মৃত্যুতে আমরা যে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি তা পূরণ হওয়ার নয়। হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যকর্ম শুধু আমাদের দেশেই নয়, দেশের সীমানা পেরিয়ে ওপার বাংলায়ও সমান জনপ্রিয়। তিনি আমাদের এখানকার পাঠক তৈরি করেছেন। আমাদের প্রকাশনা শিল্পকে মজবুত অবস্থানে নিয়ে গেছেন। হুমায়ূন আহমেদের অনুপস্থিতি আমাদের সবাইকে মনে করিয়ে দেবে তার কথা। তিনি সশরীরে না থাকলেও তার বিপুল সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন সবার হৃদয়ে। প্রত্যেক মানুষকেই একদিন না একদিন চলে যেতে হবে; কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ তাড়াতাড়ি চলে যাবেন, ভাবতে পারিনি। তার অনস্বীকার্য অবদান ভোলার নয়।
 

No comments

Powered by Blogger.