নির্যাতন চালিয়ে কোন সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারেনি ॥ খালেদা

জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ বর্তমান সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাস-নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এভাবে নির্যাতন চালিয়ে অতীতে কোন সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি।


এ সরকারও পারবে না। তিনি বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা নেই। হত্যা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিতে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। এসব কারণে সারা পৃথিবীতে দেশের সম্মান নষ্ট হয়েছে। সোমবার দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটন লেডিস ক্লাবে বিদেশী কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন।
দেশবাসীকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, গত সাড়ে ৩ বছরে আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন, অনেকে চোখের পানি ফেলেছেন, এখন আর নয়। আসুন দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করি। সারাদেশের মানুষ মোটেও ভাল নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারের ব্যর্থতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটায় ঈদের জামাত পড়তে গিয়েও মানুষ খুন হচ্ছে। খুলনায় আমাদের দলের এক নেতাকে ঈদের জামাতে নামাজ আদায়ের সময়ে সন্ত্রাসীরা মেরে ফেলেছে। কোথাও আজ মানুষের নিরাপত্তা নেই। তাই দেশের মানুষ এই সরকারকে আর চায় না।
খালেদা জিয়া বলেন, নির্দলীয় সরকারের বাইরে কিছু করার চেষ্টা করলে তা সরকারের জন্য অত্যন্ত খারাপ হবে। কারণ, দেশের মানুষ সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সরকার যদি মনে করে থাকে যে তারা দেশের মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গলে কাজ করেছে, তাহলে নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে জনগণের রায়ের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হবে। জনগণই ঠিক করবে ক্ষমতায় কারা আসবে। জনগণের বাইরের কোন শক্তি এ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে পারবে না। তিনি কারাগারে আটক সব রাজবন্দিকে মুক্তি দেয়ারও দাবি জানান।
খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার দেশের অর্থনীতিকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার। অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সবাইকে দলমত নির্বিশেষ সরকারবিরোধী এ আন্দোলনে অংশ নিতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচী পালন করেছে। কিন্তু সরকার সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তাদের সম্পদ লুটপাট করেছে। এ সরকারের দুঃশাসনে অনেক মানুষ সন্তান, স্বামী, ভাই হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এ সরকার বিচার বিভাগেও দলীয়করণ ও আত্মীয়করণ করেছে। জনগণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চায়। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, গু-া-পা-াদের সঙ্গ ছেড়ে জনগণের কথা ভাবুন। দেশে শান্তি বজায় রাখুন।
খালেদা জিয়ার ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বিদেশী কূটনীতিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কূটনৈতিক কোরের ডিন শাহের মোহাম্মদ, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ বিন নাসের আল বুশাইরি, পাকিস্তানের হাইকমিশনার আফরাসিয়াব মেহেদি হাশমী কোরেশী প্রমুখ।
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এমকে আনোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ, সারোয়ারী রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, রাজিয়া ফয়েজ, শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম মোরশেদ খান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক এমএ মান্নান, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, মেজর জেনারেল (অব) মাহমুদুল হাসান ও জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী।
১৮ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ন্যাপ সভাপতি জেবেল রহমান গানি, লেবার পার্টির সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মহাসচিব আলমগীর মজুমদার।
এছাড়া বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রীমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রফিক-উল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক এএসএম ফয়েজ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক আবু আহমেদ, সাবেক সচিব আসাফ উদদৌলা, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এমএ রউফ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শওকত মাহমুদ, চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম, এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ, ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক একেএম আজিজুল হক ও ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব) সভাপতি আ ন হ আখতার হোসেন।
আওয়ামী লীগই একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে Ñরিজভী ॥ বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় ফেলতে আওয়ামী লীগই একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। এ মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে জড়িয়ে যা সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তা করছে। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

No comments

Powered by Blogger.