লাইবেরিয়া-বাংলাদেশ by আসিফ আহমেদ

দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে নির্ধারিত সময়ে সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় লাইবেরিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট এলেন জনসন সারলিফ তার ছেলেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে সাসপেন্ড করেছেন। আফ্রিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট একই ধরনের অভিযোগে আরও ৪৫ জন কর্মকর্তাকে শাস্তি দিয়েছেন।
তিনি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রেসিডেন্ট। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষমতায় আসার আগে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। তার প্রতি আস্থা রেখেছেন ভোটাররা। দ্বিতীয়বারের মতো গদিতে আসীন হওয়া তারই সাক্ষ্য দেবে।
দুর্নীতির সংজ্ঞায় কি স্বজনপ্রীতি পড়ে? তিনি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে তার তিন পুত্রকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদে বসান। এক পুত্র জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান, আরেক পুত্র জাতীয় তেল কোম্পানির চেয়ারম্যান। যে পুত্র সাময়িক বরখাস্তের আদেশ পেলেন তার নাম চার্লস। তাকে পদ দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর। যদি তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে হিসাব দাখিল করেন এবং সেটা যথাযথ বলে বিবেচিত হয়, তাহলে কিছু জরিমানা দণ্ড হিসেবে দিয়ে পদ ফেরত পেতে পারেন। অন্যদের জন্যও একই বিধান।
এ পদক্ষেপে অনেকে খুশি হবেন। তারা বলবেন, দেখলে তো_ মা ছেলেকেও ছাড়ল না। আরেক দল বলবে যে তিন পুত্রকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব প্রদানই বড় দুর্নীতি। পুত্র স্নেহে অন্ধ বলেই তিনি তাদের নিয়োগ দিয়েছেন। বাংলাদেশে অবস্থান করে এ বিষয়ে অভিমত প্রদান করা কঠিন। এখানে স্বজনপ্রীতিকে আদৌ ভালো চোখে দেখা হয় না। বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতারা এমন কাণ্ড করলে তার সমালোচনা হয়। কিন্তু তাতে নেতারা খুব একটা কর্ণপাত করেন বলে মনে হয় না। উত্তরাধিকারের রাজনীতি এ দেশে চালু আছে। কেবল প্রধানমন্ত্রী নন, মন্ত্রী-এমপি সবাই এটা করেন। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের ঠিকাদারি দেওয়ার সময় বিশেষ বিবেচনা পায় পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনরা। তারপর আসে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রশ্ন। এ নিয়ে এখন আর রাখঢাকের বালাই নেই। ১০ কোটি টাকার সরকারি কাজে ৫ কোটি টাকা ব্যয় এবং বাকিটা লুটপাট, এটাই যেন রেওয়াজ। আওয়ামী লীগ-বিএনপি সবাই চক্ষুলজ্জার মাথা খেয়ে বসে আছে। সম্পত্তির হিসাব সময়মতো জমা না দেওয়ায় লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট তার এক পুত্রকে মৃদু শাস্তি দিয়েছেন। বাংলাদেশে এটুকু করা হয় না। বর্তমান সরকারের ওয়াদা ছিল_ মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের হিসাব প্রদান করতে হবে এবং জনগণকে সেটা জানানো হবে। কিন্তু তা রক্ষা করা হয়নি। বলা হচ্ছে যে, আয়কর বিভাগে তো তারা প্রতি বছর হিসাব জমা দিচ্ছেন। কিন্তু অঙ্গীকার ছিল প্রতি বছর তাদের সম্পত্তি আগের বছরের তুলনায় বাড়ল নাকি কমল, সেটা জনগণকে জানানো হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন এ অঙ্গীকার রক্ষার জন্য মন্ত্রী-এমপিদের বাধ্য করবে, এমন বুকের পাটা কোথায়? তারা রয়েছে চুপচাপ। দুই বছরের জরুরি শাসনামলে দুর্নীতির অভিযোগে কিছু লোকের শাস্তি হয়েছিল। বিষয়টিতে সাধারণ মানুষ খুশি হয়। বিচার প্রক্রিয়ায় কিছু অনিয়ম হয়তো ছিল। 'ধরমারকাট' পদ্ধতি সবসময় আইনের দৃষ্টিতে সঠিক হয় না। তখন যাদের শাস্তি হয়েছিল তারা এখন বুক ফুলিয়ে চলে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণকে কেউ কেউ চ্যালেঞ্জও করে। এখন তাদের কেউ কেউ জনপ্রতিনিধি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য তাদের কাউকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেননি। তবে আগামীতে সেটা হবে না, এমন নিশ্চয়তা মিলছে না। বিএনপি বলছে, 'এভাবে দণ্ড প্রদান রাজনৈতিক হয়রানি।' তারা ক্ষমতায় এসে দুর্নীতির দায়ে শাস্তিপ্রাপ্তদের 'জাতীয় বীরের' মর্যাদা প্রদান করলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। পরিবারের সদস্যদের জন্য তো মিলবে দারুণ সব পুরস্কার। তারা দেশ ও দশের ভাগ্য নিয়ন্তা হলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপ যদি লোক দেখানোও হয়, তেমনটি করার কথাও বাংলাদেশে বোধকরি কোনো বড় দল ভাববে না।

No comments

Powered by Blogger.