চারদিক-সম্ভাবনাময় কৈশোর by শান্তা তাওহিদা

আবছা অন্ধকার ঘরজুড়ে। বন্ধ জানালার ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়া আলোয় আরও বেশি রহস্যঘেরা হয়ে উঠেছে পরিবেশ। ঘড়ির টিক টিক শব্দটাও যেন বিশাল আকার ধারণ করেছে। আবছা আলোয় তখন ১০-১৫ জন নিশ্চুপ কিশোর-কিশোরী। একসঙ্গে বসেও প্রত্যেকেই একা একা নিজস্ব চিন্তার জগতে।


তাদের বলা হয়েছে কাকে জীবনে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে তা মনে করতে। একে একে বিড়বিড় করে কী যেন বলতে লাগল তারা। এর মধ্যে এক কিশোর আচমকা দরজা খুলে বাইরে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। মা-ও কেঁদে ফেললেন ছেলেকে বুকে পেয়ে। রাহনুমা সুলতানা বহু বছর পর ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন সে দিন। চাকরির কারণে ছেলেকে সময় দিতে না পারায় একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল তাঁর সঙ্গে। ক্রমেই বেড়ে চলছিল সেটা। তারপর খোঁজখবর নিয়ে চলে এলেন একটি শিশু মেধা বিকাশ কেন্দ্রে।
শুধু তিনি নন তাঁর মতো অনেক মা-বাবাই তাঁদের কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন। ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত। এ বয়সটাই যেন কেমন। হঠাৎ করেই যেন একটু স্বাধীনচেতা হয়ে ওঠা। নিষেধ না মানার ভূতটা যেন মাথায় চেপে বসে তখন। মা-বাবার শাসন খুব দুঃসহ মনে হয় তখন। এ সময়ে মা-বাবা আর সন্তানদের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে যায় দূরত্ব। ফলে কিশোর বয়সে ভুল সিদ্ধান্ত। তা থেকে ক্ষণিক থেমে যাওয়া জীবন। অথবা জীবনটা যতটা সুন্দর হওয়ার কথা ছিল, ততটুকু থেকে বঞ্চিত হওয়া।
কিশোর-কিশোরীদের সংকট ও সম্ভাবনার দিকনির্দেশনার জন্য এ সময় প্রয়োজন সঠিক প্রশিক্ষণের। সেটি হতে পারে মা-বাবার মাধ্যমে। দুজনই চাকরিজীবী হলে তবে সাহায্য নেওয়া যায় কোনো শিশু-কিশোর মেধা বিকাশ কেন্দ্রের।
তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান শিশু মেধা বিকাশ কেন্দ্র। ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের জন্য ধারণা, দক্ষতা, কৌশল, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে এখানে করানো হয় ‘সম্ভাবনাময় কৈশোর’ নামক প্রশিক্ষণ কোর্স। শিশু মেধা বিকাশ কেন্দ্রের পরিচালক লুত্ফর রহমান বলেন, কিশোর বয়সে জীবনের সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ, নিজেকে বিশ্লেষণ, লেখাপড়ার দক্ষতা বৃদ্ধি, ভবিষ্যতের করণীয়, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ, স্বাস্থ্য, অভ্যাস, নিজের ভেতরের অসীম সম্ভাবনা—এসব গল্প করতে করতে কিশোর-কিশোরীদের জানিয়ে দেওয়া হয় এখানে। প্রতিটি বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা ক্লাস নয়, বরং গল্প করতেই আসেন এখানে। গল্পচ্ছলে তাদের জীবনের স্বপ্নের বীজটিও রোপণ হয়ে যায়।’
শিশু মেধা বিকাশ কেন্দ্রে ঘুরতে আসা লাবিব, অর্ক, মুনিয়ার একই মতামত। এখন অনেক কিছুই বুঝে করে তারা। হঠাৎ করেই খুব রেগে যাওয়া বা আবেগের প্রশ্রয় দেওয়া জীবনের জন্য ক্ষতিকর এখন বোঝে তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করেন সুলতানা নাজনীন। তাঁর ছেলে লাবিবের আগ্রহে ছুটে আসতে হয় এখানে।
আপনার কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েকে সময় দিতে না পারলে ওদেরও পাঠিয়ে দিতে পারেন শিশু মেধা বিকাশ কেন্দ্রে।
ঠিকানা: শিশু মেধা বিকাশ কেন্দ্র, ৬/৫, ব্লক-এফ, লালমাটিয়া, ঢাকা-১২০৭। ফোন: ০১৭১৩০৪৪৭৫৫, ০১৮১৯৪৩৩৪৭৮।

No comments

Powered by Blogger.