প্রদীপের নিচের থেকে দূরের অন্ধকার আরও গাঢ়-ঢাকার বাইরে আবাসন প্রকল্প

প্রদীপের নিচের অন্ধকার থাকার কথা প্রবাদপ্রতিম। খোদ রাজধানীতেই পাদপ্রদীপের আলোর নিচে আবাসনশিল্পের নামে অন্যায়-অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা সর্বজনবিদিত। প্রদীপ থেকে দূরের অন্ধকার নিয়ে প্রবাদে কিছু বলা না থাকলেও, সেই অন্ধকার যে আরও গাঢ়, ঢাকার বাইরে আবাসন প্রকল্পের অনিয়ম সেটাই প্রমাণ করে।


রাজউকের আওতাধীন এলাকায় অনুমতিহীনভাবে অজস্র আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠার বিষয়টি জাতীয়ভাবে নজরে এসেছে। কিন্তু রাজউকের আওতাধীন ৫৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকার বাইরের অনিয়ম দেখারও কেউ নেই, বাধা দেওয়া তো দূরের কথা।
গত সোমবারের প্রথম আলোয় ধামরাইয়ের তিনটি আবাসন প্রকল্প অর্পিত সম্পত্তি, খাসজমি ও খাল-জলাশয় ভরাট করে গড়ে ওঠার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সঙ্গে এও জানানো হয়েছে, ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের বাইরে ব্যাপক হারে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠলেও অন্যায়-অনিয়ম নজরদারির জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। এরই সুযোগে ঢাকায় বড় বড় আবাসন প্রকল্প করেছে এমন প্রতিষ্ঠান ঢাকার বাইরেও ভূমিগ্রাসের থাবা বিস্তার করেছে। এক হাতে তালি বাজে না। ধামরাই থানার ১০০ গজ দূরে বহুদিনের পুরোনো জলাশয় ভরাট করে প্লট বিক্রির তোড়জোড় চলছে। এমনকি উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনারের কার্যালয়ের নাকের ডগায় বসে নির্বিঘ্নে খাল ভরাট করা হলেও কারও টনক নড়েনি। সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের আশপাশ এবং কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতও এভাবে ভূমিদস্যুদের লম্বা হাতের থাবার তলে চলে যাচ্ছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের আবাসনশিল্পের বাড়বৃদ্ধি এবং ভূমিদস্যুতা সমার্থক হয়ে গিয়েছে। গোড়া থেকে এ পর্যন্ত এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কিছু প্রতিষ্ঠান ভূমি নিয়ে নয়-ছয়ের সঙ্গে জড়িত। এরা এমনভাবে ধরাকে সরা মনে করা শুরু করে যে মন্ত্রণালয়, পুলিশ বিভাগ ও গণপূর্ত দপ্তর এবং কিছু ক্ষেত্রে সাংসদসহ জনপ্রতিনিধিদেরও তারা কাজে লাগাতে সক্ষম হচ্ছে। একশ্রেণীর অসাধু সরকারি কর্মকর্তার যোগসাজশে থানা ও আদালত চত্বরেও এরা তাদের অবৈধ অর্থ ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া স্বয়ং পূর্তমন্ত্রীর মন্তব্যেও এর সত্যতা মিলেছে।
এ অবস্থা চলতে থাকলে একদিকে যেমন সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ভূমিদস্যুদের হয়ে যাবে, তেমনি চরম হবে পরিবেশ বিপর্যয়। সময় এসেছে আবাসনশিল্পকে তো বটেই, দেশকেই ভূমিদস্যুদের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করার। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন সময় এদের বিরুদ্ধে নীতিনির্ধারণী কথা বলেছেন। দেখা গেছে, ঢাকার বাইরে ভূমি নিয়ে অনিয়মকারী আবাসনপ্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ ঢাকাকেন্দ্রিক রিহ্যাবের সদস্য। রিহ্যাবেরও তাই দায়িত্ব রয়েছে সাধু আর ঠগের মধ্যে প্রভেদ করা। আবাসন, গৃহায়ণ ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের করণীয়টিই প্রধান। সরকারেরও উচিত সারা দেশে ভূমির ব্যবহার ও ভূমি জালিয়াতি রোধে বিশেষ সেল গঠন করা।

No comments

Powered by Blogger.