চরাচর-পাবলিক লাইব্রেরি : এক নির্ভরযোগ্য তথ্যভাণ্ডার by শরাফত হোসেন

শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বই এবং পাঠ্যবই ছাড়াও পুরাতন দুষপ্রাপ্য বইয়ের খোঁজে প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সের, নানা রুচির পাঠক আসেন। বসার স্থান সংকুলান না হওয়ায় তাঁদের অনেককেই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়। অনেকেই আবার খুঁজে বেড়ান বিকল্প উপায়।


এ চিত্র পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ পাঠকক্ষের। কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে চারটি পাঠকক্ষ রয়েছে- শিশু-কিশোর, সাধারণ, বিজ্ঞান ও রেফারেন্স পাঠকক্ষ। সব মিলিয়ে এ লাইব্রেরিতে বই রয়েছে এক লাখ ৯০ হাজারের মতো। এখানে একসঙ্গে ৫০০ জনের পাঠসুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারের মতো পাঠক এ লাইব্রেরিতে পাঠ-সুবিধা ভোগ করেন। এ ছাড়া বর্তমানে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ এখানে ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে। তবে একজন একটানা ৩০ মিনিটের বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না। বর্তমানে লাইব্রেরির প্রতিটি পাঠকক্ষে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র চারজন কর্মচারী। বিশাল পাঠকক্ষের তুলনায় এই সংখ্যা সীমিত। ফলে এখানে পাঠকের দ্বারা বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে নেওয়া, এমনকি বই চুরির ঘটনাও ঘটছে। চারটি পাঠকক্ষে ২০টি সিসি ক্যামেরা থাকলেও সেগুলো বিকল পাঁচ বছর ধরে।
১৯৫৮ সালে যাত্রা শুরু করে এবং ১৯৭৮ সালে বর্তমান ভবনে (শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের পাশে) কার্যক্রম শুরু করে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি। শুরু থেকে গুরুত্বপূর্ণ দৈনিক পত্রিকা ও বই সংরক্ষণ করা হচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশে এর ৬৮টি শাখা রয়েছে এবং এ লাইব্রেরির নেটওয়ার্কে ১৮ লাখের মতো বই রয়েছে বলে জানান এক কর্মকর্তা। প্রতিবছর গ্রন্থাগারে প্রায় দুই কোটি টাকার বই ও পাঠসামগ্রী কেনা হলেও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক ও নতুন সংস্করণের বইয়ের জোগান না থাকায় গ্রন্থাগারে মননশীল পাঠকসংখ্যা দিন দিন কমছে। অনেক বইয়ের ভেতরের পাতা ছেঁড়া, ফলে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তা ছাড়া ভালো বইয়েরও সংকট রয়েছে।' উপপরিচালক মো. জিল্লুর রহমান জানান, 'স্থান সমপ্রসারণের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ চিন্তাভাবনা করছেন।' বইয়ের পাতা ছিঁড়ে নেওয়া কিংবা চুরি হওয়া সম্পর্কে পাঠক-সচেতনতা এবং কর্মকর্তাদের তৎপরতার সমন্বয়ের ওপর জোর দেন তিনি। তিনি জানান, 'বর্তমানে ফটোকপি সেবা কার্যক্রম চালু করায় এ প্রবণতা অনেকটাই কমে এসেছে। এ ছাড়া নতুন অনেক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। একসেস টু ইনফরমেশনের প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এক লাখ পৃষ্ঠার ই-বুক করা হচ্ছে, পত্রিকা ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে, ইতিমধ্যে কিছু করাও হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই অনলাইনে আমাদের সব বইয়ের তালিকা পাওয়া যাবে। তা ছাড়া সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের মাসে একবার আমরা নিয়ে আসি পাঠাভ্যাস সম্পর্কে সচেতন করে তোলার জন্য।' মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আমাদের জাতীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির যাবতীয় প্রকাশনা সংরক্ষণে নিবেদিত কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি। এ গ্রন্থাগার বর্তমান পাঠকদের যেমন সেবা দিচ্ছে, তেমনি ভবিষৎ প্রজন্মের জন্যও একটি নির্ভরযোগ্য তথ্যভাণ্ডার হিসেবে তৈরি হচ্ছে।
শরাফত হোসেন

No comments

Powered by Blogger.