আয়শা ও একদল হাতি by সাইদুজ্জামান রওশন

একটি উঁচু পাহাড়। পাহাড়ের কাছে গ্রাম। সেই গ্রামে আয়শাদের বাড়ি। বাড়িতে মা-বাবা আর ছোট ভাই। ছোট ভাইয়ের নাম পুটু। পাহাড় থেকে নেমে আসে হাতি। একসঙ্গে অনেকগুলো। হাতির পাল। হাতিরা খেতের ফসল নষ্ট করে। কলাগাছ খায়। বাড়িঘর ভাঙচুর করে।


গ্রামের মানুষ হাতি দেখে ভয় পায়। দৌড়ে পালায়। একদিন একপাল হাতি এল। গ্রামের সবাই পালিয়ে গেল। কিন্তু আয়শা সেখানে দাঁড়িয়ে রইল।
হাতিদের দলের নেতা বলল, ‘তুমি পালালে না কেন?’ আয়শা বলল, ‘আমি কেন পালাব?’ হাতি বলল, ‘তোমার ভয় নেই?’ আয়শা বলল, ‘না, আমার কোনো ভয় নেই!’
হাতি বলল, ‘আমরা তোমাকে ধরে পাহাড়ে নিয়ে যাব।’
এ কথা বলেই হাতি শুঁড় দিয়ে আয়শাকে পেঁচিয়ে ফেলল।
তারপর শুঁড় থেকে আয়শাকে ধপাস করে নিজের পিঠের ওপর বসিয়ে দিল।
আয়শা অমনি তার হাতের পোকাটি হাতির শুঁড়ের ভেতর ছেড়ে দেয়।
পোকা দৌড়ে গেল হাতির মাথার ভেতর।
মাথায় ঢুকে দিল কামড়।
কামড় খেয়ে হাতি চিৎকার করে ওঠে।
পোকা আবার কামড় দেয়। হাতি আবার চিৎকার করে।
পোকার কামড়ানো বেড়ে যায়। হাতি চিৎকার করতে থাকে, ‘মা রে। বাবা রে। বাঁচাও রে। মরে গেলাম রে।’
আয়শা কিন্তু হাতির পিঠে বসেই আছে। সে খুব খুশি। মনে মনে বলছে, ‘হাতি, এবার দেখো কেমন লাগে।’
সব হাতি জড়ো হলো। তাদের নেতাকে বাঁচাতে হবে।
ডেকে আনা হলো এক ডাক্তার হাতিকে।
ডাক্তার বলল, ‘নেতার কোনো রোগ ধরতে পারছি না। আমি ফেল। কিছু করা গেল না।’
ডাক্তার হাতি মুখ ভার করে চলে গেল।
ডেকে আনা হলো এক জাদুকর হাতিকে। সে জাদুর মন্তর দিয়ে অনেক কিছু করে ফেলতে পারে।
সব দেখে-শুনে জাদুকর হাতি বলল, ‘মাফ করবেন। আমাকে দিয়ে এ রোগ সারানো যাবে না।’
এদিকে নেতা ব্যথায় ছটফট করছে।
‘মরে গেলাম রে। বাঁচাও রে।’
একটা ছোট হাতি বলল, ‘আয়শা হয়তো আমাদের নেতাকে বাঁচাতে পারবে।’
নেতা হাতি এবার ব্যথায় শুয়ে পড়ে।
আয়শা হাতির পিঠ থেকে নেমে পাশে দাঁড়ায়।
একটি পাজি হাতি বলল, ‘এই মেয়ে, এদিকে এসো।’
আয়শা এগিয়ে গেল সেদিকে।
‘তুমি আমাদের নেতাকে বাঁচাতে পারবে? পাজি হাতি জানতে চায়।
আয়শা বলল, ‘পারব। তবে একটি শর্ত আছে।’
হাতিরা শুঁড় তুলে বলল, ‘কিসের শর্ত?’
আয়শা বলল, ‘তোমরা আমাদের ধানের খেত নষ্ট করে ফেলো।’
হাতিরা বলল, ‘হ্যাঁ, আমরা তোমাদের ধানখেত মাড়িয়ে দিই, খেতের ফসল নষ্ট করি।’
আয়শা বলল, ‘তোমরা আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলো।’
হাতিরা বলল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা তোমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলি।’
আয়শা বলল, ‘তোমরা আর আমাদের ধান নষ্ট করবে না। ঘর ভাঙবে না। এটাই শর্ত। এটা মানলে তোমাদের নেতাকে বাঁচাতে পারি।’
হাতিরা বলে, ‘আমরা শর্ত মেনে নিলাম। আমাদের নেতাকে বাঁচাও।’
‘মরে গেলাম রে।’
নেতা হাতি আবার চিৎকার করল।
আয়শা বলল, ‘নেতা কি শর্ত মানবে?’
নেতা বলল, ‘হ্যাঁ, শর্ত মানছি। আমাকে তাড়াতাড়ি বাঁচাও।’
সব হাতি বলল, ‘আমাদের নেতাকে বাঁচাও।’
আয়শা হাতির শুঁড়টা টেনে মুখের কাছে নিল। বলল, ‘পোকারাজ, এখন বাইরে চলে এসো। আর কামড় দিয়ো না।’
শুঁড়ের ভেতর দিয়ে পোকারাজ বের হয়ে এল। আর অমনি হাতি উঠে দাঁড়াল। সব হাতি আনন্দে নেচে উঠল।
হাতির নেতা আয়শাকে বলল, ‘ধন্যবাদ। এবার তুমি আমার পিঠে চড়ো।’
হাতি বসে পড়ে। আর অমনি আয়শা হাতির পিঠে গিয়ে বসে।
নেতা বলল, ‘চলো তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসি।’ বাকি হাতিরাও নেতা হাতির পেছনে পেছনে ছুটল। আয়শাকে নিয়ে হাতিরা ফিরে এল গ্রামে।
হাতির পাল দেখে গ্রামের মানুষ ভীষণ ভয় পেল। সবাই আবার দৌড়াদৌড়ি শুরু করল। আয়শার ভাই পুটু দূর থেকে চিৎকার করে ওঠে, ‘আয়শা আপু। আয়শা আপু।’
আয়শা হাত নেড়ে বলে, ‘ভয় নেই। কোনো ভয় নেই। হাতিরা আর আমাদের ক্ষতি করবে না।
তোমরা পালিয়ো না।
আয়শার কথা শুনে গ্রামের মানুষ থমকে দাঁড়ায়। ‘আয়শা এসব কী বলছে।’
হাতিরা এসে গ্রামের পাশে দাঁড়ায়। আয়শা লাফিয়ে নামে হাতির পিঠ থেকে।
নেতা হাতি গ্রামের মানুষকে বলে, ‘আয়শা আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে। আমরা আর তোমাদের ক্ষতি করব না। ফসল নষ্ট করব না। বাড়িঘর ভাঙব না।’
গ্রামের মানুষ আনন্দে নেচে ওঠে।
হাতিরা ফিরে যেতে থাকে পাহাড়ে।
আয়শা সেদিকে তাকিয়ে হাত নাড়ে।

No comments

Powered by Blogger.