সরকারের তৎপরতা বহু গুণে বাড়ানো প্রয়োজন-অ্যানথ্রাক্সে আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ

সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রতিদিন নতুন করে বেশ কয়েকজন মানুষ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অ্যানথ্রাক্সে সংক্রমণের স্থানে অসুস্থ হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে। সেই মৃত্যুর কারণ যদিও পরীক্ষা করা হয়নি, তবু সন্দেহ করা হচ্ছে, এর পেছনে আছে অ্যানথ্রাক্স।


তবে অ্যানথ্রাক্সে আক্রমণের বিস্তৃতি এখনো সীমিত পরিসরে ঘটছে এবং আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির সংখ্যাও কমে আসছে। মানুষ থেকে মানুষে অ্যানথ্রাক্স ছড়ায় না—এটি স্বস্তির বিষয়। তবে অ্যানথ্রাক্সে আক্রমণের এই ঘটনা আমাদের জনস্বাস্থ্য ও গবাদিপশুর স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতাকে দৃষ্টিগোচর করেছে। তাই অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণ এবং ভবিষ্যতে এজাতীয় জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতির বিষয়ে আমাদের নতুন করে ভাবা প্রয়োজন।
অ্যানথ্রাক্স নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, মূলত আক্রান্ত গবাদিপশু থেকে অ্যানথ্রাক্স ছড়ায়। কেউ যদি আক্রান্ত গবাদিপশু, বিশেষ করে আক্রান্ত গরু জবাই করেন, কাটেন বা ধোয়ামোছা করেন কিংবা চামড়া ছাড়ান অথবা ওই গরুর মাংস খান, তাহলে তাঁর এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই গবাদিপশুর এ রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে সবার ধারণা থাকা প্রয়োজন, যাতে তাঁরা আক্রান্ত গবাদিপশু সহজে চিহ্নিত করতে পারেন এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন।
সিরাজগঞ্জ জেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে এ রোগ প্রতিকারের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালানো হচ্ছে। এটা প্রশংসনীয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ রোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে গবাদিপশুকে নিয়মিত বছরে একবার টিকা দিতে হবে, আর এখন এ রোগ যাতে না ছড়ায়, তাই প্রতিটি গবাদিপশুকে টিকা দেওয়া দরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত টিকার পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে তুলতে পারেনি সরকার। এ ব্যাপারে সরকারের তৎপরতা বহু গুণে বাড়ানো প্রয়োজন।
অ্যানথ্রাক্স থেকে আত্মরক্ষার প্রধান ঢাল হলেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা লক্ষণ দেখামাত্র আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা সফলভাবে অ্যানথ্রাক্সের আক্রমণ মোকাবিলা করতে পারছেন। জেলা সিভিল সার্জন বলেছেন, এ পর্যন্ত সিরাজগঞ্জে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের সবারই চিকিৎসা চলছে এবং তাঁরা সুস্থ হওয়ার পথে। এ রোগে আক্রান্ত হলে ভয়ের কিছু নেই। তবে দেশব্যাপী রোগনির্ণয়ের পরীক্ষাগারগুলো উন্নত করা দরকার, যাতে সহজেই এ ধরনের সংক্রমণ ধরা পড়ে এবং সময়মতো চিকিৎসা দিয়ে জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়।
গবাদিপশুর এ রোগ আমাদের দেশে বিরল নয়। তবু আক্রান্ত গরু জবাই করে ও খেয়ে যেভাবে মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে এ রোগ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতার বড় অভাব আছে। এ ধরনের জীবাণুর সামনে জনগণকে অরক্ষিত রাখা বড় ঝুঁকি নেওয়ার শামিল। এ ব্যাপারে এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.