জাতীয় সম্পদ রক্ষায় হেলাফেলা ছাড় পেতে পারে না-বীজভান্ডারে বিপর্যয়

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) শতবর্ষের জন্য রক্ষিত আট হাজার জাতের ধানের বীজ বিপন্ন অবস্থায় পতিত হয়েছে। ব্রির বীজ রক্ষণাগারের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র অকেজো হয়ে পড়া এবং সেভাবেই ২০টি দিন অতিবাহিত হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনা বা দুর্ঘটনা যা-ই বলি, এটা বিপর্যয়ের আশঙ্কা জাগিয়ে তোলে।


ব্রির জেনেটিক রিসোর্সেস সেন্টারের (জিআরএস) হিমাগারে যে আট হাজার জাতের ধানের বীজের নমুনা রাখা ছিল, তার অনেকগুলোই বর্তমানে বিলুপ্ত। ব্রির বীজব্যাংকের বাইরে এসব বীজ পাওয়া কঠিন। এসব বীজ নিয়ে গবেষণা করেই ব্রির বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত ৫৮টি উচ্চফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন। এরই সুফল হিসেবে গত ৪০ বছরে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন এক কোটি টন থেকে সাড়ে তিন কোটি টনে উন্নীত হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে এই বীজগুলো এবং এগুলোকে কেন্দ্র করে গবেষণার ভূমিকা অপরিসীম। এই বীজব্যাংক তাই এক অর্থে দেশের খাদ্যনিরাপত্তার বৃহত্তম পুঁজি। উন্নত বিশ্বে এ ধরনের বীজভান্ডারের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে।
অথচ, ব্রির জিআরএসের এই সংরক্ষণকেন্দ্রে কাগজে-কলমে লোকবল ১০ জন হলেও কার্যত রয়েছে দুজন। বীজ সংরক্ষণের প্রধান দিকই হলো, সেগুলোকে হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রায় রাখতে হয়। অথচ, জিআরএসের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী গত বছরের আগস্টে অবসরে গেলেন তো গেলেনই, এত দিনেও তাঁর স্থলাভিষিক্ত করার মতো কাউকে খুঁজে পেল না ব্রি কর্তৃপক্ষ! এটা কি সচেতন অবহেলা নয়? চারটি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র একসঙ্গে নষ্ট হয়ে গেলে গত ৩ মে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ব্রির প্রধান মহাপরিচালককে চিঠি লেখা হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। ২৩ মে দুটি যন্ত্র ঠিক করা হলেও বাকি দুটি এখনো ঠিক হয়নি।
এ ক্ষতি অপূরণীয়। কেন এবং কাদের অবহেলায় এটা হলো, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। ১৯৯৪ সালেও এ রকম একটি ঘটনায় ১০ হাজার জাতের ধানের বীজ নষ্ট হয়ে যায়। কেন সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া হলো না? যাঁদের অবহেলায় এই অমূল্য জাতীয় সম্পদ নষ্ট হলো, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.