অভিমত ভিন্নমত

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ছয় বছর আমরা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ছয় বছর পার করলাম। কিন্তু এখনো ওই ঘটনার কথা মনে পড়লে যে জিনিসটা স্পষ্ট হয়ে সবার আগে চোখে ভাসে তা হচ্ছে বর্তমান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানের নিথর দুটি চোখের কথা।


ওই হামলার ভয়াবহতার কথা বলার জন্য আমার মনে হয় এই একটি ছবিই যথেষ্ট। আমি ওই দিনের হামলায় নিহত সব ব্যক্তির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
গভীর উদ্বেগের বিষয়, আমরা এখনো এই বর্বরতার বিচারকার্য শেষ করতে পারিনি। এই না পারার জন্য একটা বড় দায় নিশ্চয় তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারকে নিতে হবে। কারণ, তারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ ব্যাহত করতে মামলা-প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা এই ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে কলঙ্কজনক হত্যাকাণ্ড ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মিল খুঁজে পাই। পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পরে যেমন ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার না করে বরং ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচারকার্য বন্ধ করে দিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ন্যক্কারজনক ভূমিকা লক্ষ করি, ঠিক তেমনি ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর এভিনিউর গ্রেনেড হামলারও লোকদেখানো তদন্তকাজ দেখেছি, যা অনেকটা বিচারকার্য বন্ধ রাখার শামিল। এই দুই বর্বরতায় আর যে জিনিসটা আমরা লক্ষ করি, দুই ঘটনার শিকার আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে দুই ঘটনার সঙ্গে বিএনপির লোকদের যোগসাজশের নানা তথ্য।
বাংলাদেশ নামের একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র সৃষ্টিতে যে আওয়ামী লীগের ভূমিকা ছিল মুখ্য, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই বাংলাদেশেই ভয়ংকর নানা নৃশংসতার শিকার হতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। আমাদের ভালোভাবে ভেবে দেখার সময় এসেছে, এসব ঘটনার সঙ্গে কি শুধু আমাদের দেশের হামলাকারীরা জড়িত, নাকি দূর থেকে এসব কিছুর কলকাঠি নাড়ছে ১৯৭১-এর পরাজিত শক্তি। কারণ, এসব ঘটনায় তাদের ভূমিকা রহস্যজনক হয়েই আছে।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার দুবার বাংলাদেশের সরকার পরিচালনা করেছে। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ করেছি, তারা বাংলাদেশের ওপর ঘটে যাওয়া নানা চাঞ্চল্যকর ঘটনার (যুদ্ধাপরাধীর বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, জঙ্গিদের নানা বোমা হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা প্রভৃতি) একটারও সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন তো করেইনি, বরং এসব মামলার বিচারে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করেছে। তাই এসব মামলার বিচারকাজে তাদের দুর্বলতা কোথায়, এই প্রশ্ন এখন অনেকের মনে জাগছে। আরও অবাক করার মতো বিষয়, তারা তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্যেও কোনো উৎসাহ দেখায় না। একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, তাদের সরকারের সময় বিচারকাজে অনীহা দেখালেও বর্তমান সরকার কর্তৃক এসব বিচারকাজে যেন তারা বাধা সৃষ্টি না করে। কারণ জনগণ চায় এসব ঘটনার আসল হোতাদের মুখোশ উন্মোচন হোক।
বিএনপি সরকারের অনীহার কারণে জনগণ এসব ঘটনার বিচারকাজের জন্য বর্তমান সরকারের দিকে চেয়ে আছে। তাই বর্তমান সরকার অহেতুক সময় নষ্ট না করে এসব ঘটনার বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করবে—এই আশা ব্যক্ত করছি।
মো. হাবীব উল্লাহ, পূর্ব বরৈয়া, আনোয়ারা, চট্টগ্রাম।
habib_eb2006@yahoo.com

মিরপুরে জনদুর্ভোগ
ঢাকার মিরপুরে বিআরটিএ অফিসের উত্তর দিকে পাওয়ার হাউজ রোড, ১০ নং সেকশনের সি ব্লকের পুর্ব পাশে, ১৩ নং সেকশনের এ ব্লক ও বি ব্লক জুড়ে আছে অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মানুষের আবাসনস্থল। এই এলাকায় জলাবদ্ধতা এক জটিল ও দুর্বিষহ সমস্যা হয়ে উঠেছে। একটু বৃষ্টি হলেই পুরো এলাকায় দেখা দেয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা; হাঁটুসমান পানিতে ডুবে যায় পুরো এলাকা। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে কি না বোঝার উপায় নেই; যদি থাকত তাহলে পানি আটকে থাকত না। নালা-নর্দমাগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে, সেগুলো পানি নিষ্কাশনের পরিবর্তে ময়লা-আবর্জনা আটকে থাকার ভালো ব্যবস্থা হয়েছে। ময়লা-আবর্জনায় ভরা নালা-নর্দমাগুলো যখন পানিতে ডুবে যায় তখন সেই পানি কতটা দূষিত-দুর্গন্ধময় হয় তা বলাই বাহুল্য। পানিতে ময়লা-আবর্জনা ভেসে থাকে। মানুষের চলাচলের সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। মোটরযান দূরে থাক, রিকশাও চলতে পারে না। তার ওপর আরেক সমস্যা হলো, রাস্তায় সিটি করপোরেশনের লাইটগুলো কোথাও জ্বলে, কোথাও জ্বলে না। রাতের বেলা জলে ডোবা রাস্তাঘাটে অন্ধকারে চলাফেরা করা শুধু কষ্টকরই নয়, বিপজ্জনকও বলে।
মিরপুর এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষের এসব দুর্ভোগ লাঘব করতে শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
ওয়াসিকা আফরিন
মিরপুর, ঢাকা।

কারাবন্দীদের মুক্তি
২০ আগস্ট সারা দেশের ৬১টি কারাগার থেকে এক হাজার বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়। তাঁদের অধিকাংশই হত্যা মামলায় দণ্ডিত হয়েছিলেন, ২০ বছর বা তার বেশি কারাভোগের পর সরকার তাঁদের মুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৩ জন নারী রয়েছেন।
বিশ বছর একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জীবনের প্রায় অর্ধেকই বলা চলে। এই মানুষগুলোর জীবনের সে অর্ধেকটাই কেটে গেল বন্দিদশায়। এখন তাঁরা মুক্তি পেলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এ মানুষগুলো কি তাঁদের পরিবারের বাকি সদস্য ও সমাজের কাছেও একই মমতায় গৃহীত হবেন? সংবাদপত্রে প্রকাশিত এসব মানুষের কথা থেকে আমরা দেখি, তাঁরা প্রত্যেকেই নতুন করে জীবন শুরু করতে চান। তাঁরা সুন্দর জীবনের প্রত্যাশী। তাঁরা ফিরতে চান সমাজে।
তাঁদের এ চাওয়ায় সময় একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ তাঁদের রেখে যাওয়া সময় আর আজকের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। তা ছাড়া এঁরা অধিকাংশই স্বল্পশিক্ষিত ও দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাই চারপাশের প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য তাঁদের নেই নিজস্ব মানসিক ও আর্থিক সামর্থ্য। যখন বাড়ি ফিরবেন চারপাশের মানুষের ঔৎসুক্য ও বাঁকা চোখ তাঁর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পথকে আরও সংকুচিত করবে। পাশাপাশি তাঁর দরকার হবে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার।
১৯৯৪ সালে মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের চালানো একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কারাগার থেকে বের হওয়া মানুষগুলোর দুই-তৃতীয়াংশই তৃতীয় বছরের মধ্যে আবার অপরাধ জগতে ঢুকে পড়ে। আর তাদের অর্ধেক তৃতীয় বছরের মধ্যে আবার কারাবরণ করতে বাধ্য হয়।
আমরা চাই না এই মানুষগুলোর ক্ষেত্রে এমনটা হোক। আমরা চাই, এই মানুষগুলো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। তাই তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের পুনর্বাসন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কোনো বন্দী কারাগার থেকে বের হওয়ার আগেই কারা কর্তৃপক্ষ থেকে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দীর্ঘ সময় পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন একজন মানুষের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে তাদের প্রস্তুত করা হয়। তাদের সহযোগিতা নিয়ে মুক্তি পাওয়া মানুষগুলোর মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। উন্নত দেশগুলোতে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়াও সংস্কার করা হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে চেষ্টা করা হচ্ছে অপরাধের ধরন, অপরাধীর মানসিক অবস্থা, পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করে যতটা সম্ভব মানবাধিকার রক্ষা করে তার শাস্তি ও সমাজে তার ফিরে আসা নিশ্চিত করার।
আমাদের সমাজে একটি কথা তো প্রচলিত আছেই: অপরাধকে ঘৃণা করো, অপরাধীকে নয়। যে মানুষগুলো মুক্ত হচ্ছে তারা যেন সব রকম চাপ থেকেও মুক্ত থাকতে পারে। তারা যেন সত্যিকার মুক্ত মানুষ হয়ে আবার ফিরতে পারে আমাদের মাঝে।
ইসরাত জাহান, সাংবাদিক, ঢাকা।

ফুলতলাকে মরু বানানোর প্রকল্প
ফুলতলা থেকে খুলনায় ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ পূর্ণমাত্রায় শুরু হয় ২০০৮ সালে। কিন্তু এ বিষয়ে ফুলতলার জনসাধারণকে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। ফুলতলার মানুষ যখন জানতে পারে, ফুলতলার ভূগর্ভস্থ পানি পাইপের মাধ্যমে খুলনায় সরবরাহ করা হবে, তখন তারা নিজেদের পানিপ্রাপ্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার শরণাপন্ন হলে বেলাও কয়েক দফায় সরকারের কাছে এ প্রকল্পের বিস্তারিত এবং প্রকল্প বিষয়ে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ রিপোর্ট চায়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা হয়নি।
খুলনায় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রতিদিন ফুলতলা থেকে ৯০ লাখ গ্যালন পানি উত্তোলন করা হবে, এটা চলবে প্রায় তিন বছর। ফুলতলার জনগণ পানি ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি নামে প্রকল্পটি বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে। খুলনা সিটি করপোরেশন জনমতকে উপেক্ষা করে পাম্প হাউস ও পাইপলাইনের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। যখন আন্দোলন জোরালো হয়, তখন কাজ বন্ধ রাখে, আন্দোলন একটু স্তিমিত হলে আবার কাজ শুরু করে। এভাবে লুকোচুরির মধ্যে থেমে থেমে কাজটি চালিয়ে যেতে থাকে। পরে পানি ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি উপায়ান্তর না দেখে এপ্রিল ২০০৮ বেলার কাছে আইনি সহায়তা চায়। বেলা মাঠ পরিদর্শন এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ ও বিবেচনা করে দুই দফায় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট ১০টি প্রতিষ্ঠানকে লিগ্যাল নোটিশ দিলেও কোনো প্রতিষ্ঠান নোটিশের উত্তর দেয়নি। শেষ পর্যন্ত পরিবেশগত ছাড়পত্রহীন এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন হয়।
সর্বশেষ তথ্য হলো, ফুলতলা থেকে খুলনায় অন্তর্বর্তীকালীন পানি সরবরাহের প্রকল্পটি চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট মামলটি বর্তমানে হাইকোর্টে বিচারাধীন। হাইকোর্ট থেকে দফায় দফায় ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হলেও এখনো পর্যন্ত তা দাখিল করা হয়নি। প্রকল্পটির পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ প্রতিবেদনও হাইকোর্টে দাখিল করা হয়নি। আদালত প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থিতাবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রকল্পের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
একটি এলাকার মানুষকে বঞ্চিত করে অন্য এলাকার মানুষের সুবিধা নিশ্চিত করা পরিবেশগত ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
খুলনা এলাকার পানির সমস্যা সমাধানে সাময়িক নয় বরং স্থায়ী সমাধানকল্পে ময়ূর, মধুমতী এবং অন্যান্য নদী রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। ফুলতলা প্রকল্পটি অবশ্যই বন্ধ করা উচিত।
বিধান দাশগুপ্ত ও সন্দীপন রায়
ফুলতলা, খুলনা।

ইভ টিজিং: নৈতিক মূল্যবোধের সংকট
ইভ টিজিং এক মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। অনেক মেয়েকে আত্মাহুতি দিতে হয়েছে শুধু টিজিংয়ের কারণে। টিজিংয়ের প্রতিবাদ করার ফলাফল আরও ভয়াবহ। আগৈলঝাড়ায় ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় বখাটেদের ধর্ষণের পর রিমা নামের এক মেয়ের লাশ ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় কালিয়াকৈরে বিদ্যালয়ে হামলা হয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। যেমন ‘গুলশানের কালাচাঁদপুরের বাড়িতে ঢুকে ব্যবসায়ী সাদেকুর হরমান ও তাঁর স্ত্রী রোমানা নার্গিস হত্যার কথা অকপটে স্বীকার করেছে অভিযুক্ত রুবেল’ [প্রথম আলো, ২৯ মার্চ ২০১০]। ‘বান্ধবী ও তার বাবা-মাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে ভার্সিটির ছাত্র’ [যুগান্তর, ২৮ মার্চ ২০১০]। ‘কুমিল্লায় স্কুলে এক ছাত্রীর চোখে গুলি করা হয়েছে প্রেম প্রত্যাখ্যান করায়’। আবার ‘বিয়েতে রাজি না হওয়ায় তরুণীর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন’। পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে বাবা তাঁর সন্তানকে যেমন অবলীলায় অস্বীকার করছেন, তেমনি একজন জন্মদাত্রী মা একই কারণে তাঁর সন্তানকে হত্যায় প্ররোচনা দিতেও দ্বিধা করেননি।
আমরা এ কোন সমাজে বাস করছি? আমাদের মনমানসিকতাই বা কীভাবে গড়ে উঠেছে? সবকিছুর মধ্যে বলপ্রয়োগের প্রবণতা যেন গোটা সমাজকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা সর্বক্ষেত্রেই একটা অস্থিরতা। শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া-মমতা, সহিষ্ণুতা—সবকিছুই যেন আজ বিলীন হতে চলেছে।
নৈতিক সংকটের কারণগুলো যদি কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়, তাহলে প্রথমেই আসবে পরিবার। পরিবার হচ্ছে নীতিশিক্ষার প্রাথমিক ক্ষেত্র। মা-বাবা ও নিকটজনের আচার-আচরণের মধ্যে শিশু যদি নৈতিকতা দেখতে পায়, তাহলে সে অনায়াসে তার জীবনেও নৈতিক মূল্যবোধকে ধারণ করবে। কিন্তু শিশু পরিবারে যদি নৈতিক মূল্যবোধের অভাব দেখতে পায়, তাহলে সেও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের শিকার হয়। তাই মা-বাবাদের নৈতিকতাপূর্ণ জীবনযাপন সবচেয়ে বেশি জরুরি।
শিশুদের সুন্দর মনন তৈরিতে প্রচারমাধ্যমের ভূমিকা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রচারমাধ্যমগুলোকে এ ব্যাপারে অনেক বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। ইভ টিজিং যেহেতু একটা সামাজিক ব্যাধি, তাই একে আইনের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও প্রতিরোধ করতে হবে। নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষার চাহিদা মাথায় রেখে দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা যায় কি না, সে বিষয়ে ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমগুলোর যেমন যথাযথ ভূমিকা থাকা দরকার, তেমনি প্রশাসনকে ক্ষেত্রবিশেষে হতে হবে কঠোর। অপরাধীর শাস্তি হওয়া দরকার দৃষ্টান্তমূলক। আমরা যারা অভিভাবক-শিক্ষক, আমাদের বড় কাজ হচ্ছে ওদের সামনে আদর্শ হতে পারা, যাকে অনুসরণ করে সন্তানেরা তাদের জীবন পরিচালিত করতে পারে সঠিক ও শুদ্ধভাবে।
মাহফুজা বেগম, সহকারী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।

মুদ্রণশিল্প ধ্বংসের পাঁয়তারা
দেশের শিক্ষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির রক্ষাকবচ মুদ্রণশিল্প। দেশ বিভাগের পর কলকাতা থেকে আসা হাতে গোনা কয়েকটি মুদ্রণপ্রতিষ্ঠান দিয়ে এ দেশের মুদ্রণশিল্পের যাত্রা শুরু হয়। এখন উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় শহর ও রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় সাত হাজার মুদ্রণপ্রতিষ্ঠান আর লক্ষাধিক ব্যক্তি এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলো ২০০৯ শিক্ষাবর্ষের জন্য নয় কোটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও সরবরাহ করেছে। ২০১০ শিক্ষাবর্ষে সরকার মাধ্যমিক পর্যায়েও বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৯ কোটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের সিদ্ধান্ত হয়। তখন কমিশন-বাণিজ্যের জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল দেশের পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ বিদেশি মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানের হাতে দেওয়ার পাঁয়তারা শুরু করে। তারা এই বলে সরকার ও দেশবাসীকে বিভ্রান্ত শুরু করে যে এই বিপুলসংখ্যক পাঠ্যপুস্তক দেশের মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে যথাসময়ে মুদ্রণ ও সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। তারা আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকার সুপারিশ করেছিল। তখন আমরা দেশীয় মুদ্রণশিল্প মালিকদের পক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করে বলেছিলাম, সরকার সঠিকভাবে কাগজ, পজিটিভ ও কার্যাদেশ দিতে পারলে আমরা শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিন আগের বছরগুলোর দ্বিগুণ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বাঁধাই করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরবরাহ করতে পারব। কিন্তু সরকার কর্তৃক কাগজ রেশনিং করে সরবরাহ, অপ্রতুল বিদ্যুৎ সরবরাহ ও পরিবহনে যানজট সত্ত্বেও আমরা ২০১০ শিক্ষাবর্ষের জন্য ১৯ কোটি পাঠ্যবই ঠিকভাবেই গত বছর ছাপা ও সরবরাহের ক্ষেত্রে সফল হয়েছি।
২০১১ সালের জন্য ২৩ কোটি পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন আবার ওই স্বার্থান্বেষী মহল তৎপর হয়ে উঠেছে। এবার আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হয়েছে।
আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, যা দেশের মধ্যে করা সম্ভব তা বিদেশিদের হাতে তুলে দেবেন না। মুক্তবাজার অর্থনীতির সুফল এ দেশের মুদ্রাকরেরা গ্রহণ করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকার পরও একটি বিশেষ মহল শুধু কমিশনের লোভে এ দেশের ঐতিহ্যবাহী এই মুদ্রণশিল্পের ওপর আঘাত হানছে। বর্তমান সরকার যখন কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য নানামুখী প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, তখন মুদ্রণশিল্পের লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে আহ্বানকৃত আন্তর্জাতিক দরপত্রে দেশীয় মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কাঁচামাল (কাগজ, কালি, প্লেট ও লুব্রিকেন্ট) আমদানিতে শুল্ক ৪৮%। তার ওপর বিদেশি দরদাতারা আরও ১৭% রপ্তানিসুবিধা ভোগ করেন। ফলে মোট ৬৫% শুল্কসুবিধা ভোগকারী বিদেশি দরদাতাদের সঙ্গে দেশি মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগিতা করে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণকাজ পাওয়া সম্ভব নয়। আমরা আশা করি, গণতান্ত্রিক সরকার এ বাস্তবতা অনুধাবন করে আন্তর্জাতিক দরপত্র বাতিল করবেন। দেশের মুদ্রাকরদের মাধ্যমে আগের মতোই পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আ ফ ম শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি।

বিপন্ন বিমানকে রক্ষা করুন
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস অব্যবস্থাপনা-অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার ফলে নিয়মিত নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হচ্ছে। ডিজিটাল-যুগেও আমাদের বিমানের কার্যক্রম পুরোপুরি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নয়। সর্বক্ষেত্রে দক্ষ ও সৎ লোকের অভাব প্রকট। সম্প্রতি ভারতের আন্তপ্রাদেশিক বিমান-ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আকাশপথের এ পরিবহনব্যবস্থাকে তারা রেলের মতো জনসাধারণের ভ্রমণ-উপযোগী করে তুলেছে। সে দেশে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে সব ফ্লাইটের যাবতীয় খবরাখবর নেওয়া, এমনকি মাসখানেক আগে থেকে টিকিট বুকিং দেওয়া যায়। মনে হয় সত্যিই ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। কিন্তু এ দেশের বিমানযাত্রীদের অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার অংশ ফ্লাইট বাতিলসহ নানা রকম হয়রানির শিকার হওয়া। একের পর এক ফ্লাইট বিপর্যয়ের ফলে বাংলাদেশের বিমানের ব্যবসা চলে গেছে অন্য ফ্লাইট অপারেটরদের দখলে। ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হতে ২০০৮ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস যেখানে ছিল, সেখানেই রয়ে গেছে।
পরিচালনা পর্ষদের কর্তৃত্বের লড়াইয়ে বিমানমন্ত্রী ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পরস্পরবিরোধী অবস্থান সম্প্রতি বিমান খাতে নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। বিমান নিয়ে নতুন করে টানাহেঁচড়ায় সংস্থাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সবাই। বিমানের বাড়তি উড়োজাহাজ থাকা সত্ত্বেও বিমান ঘাটতির কথা বলে, চার বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা নাইজেরিয়ার কাবো এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ দেশে এনে হজ ফ্লাইট পরিচালনার কাজে ব্যবহার করা হয়। ভাড়া করা ত্রুটিপূর্ণ বিমানটি হজ শেষে অতিরিক্ত ছয় মাস চালানো হয়। কাবোকে বিরাট অঙ্কের অর্থ দিয়ে ভাড়াটে বিমান চালানোর পেছনে সংশ্লিষ্ট একটি মহলের ‘স্বার্থ’ জড়িত থাকার বিষয়টি প্রতীয়মান হওয়ার পরও আগামী হজ পর্যন্ত সেটি বিশেষ বিবেচনায় চালানোর অনুমতি না দেওয়ায় মন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটির বিরোধ দেখা দেয়। ৩৭ বছর করপোরেশন থাকাকালীন বাংলাদেশ বিমানের চেয়ারম্যান ছিলেন মন্ত্রী। কোম্পানিতে রূপান্তরের পর বিমানের চেয়ারম্যান করা হয় বোর্ডের চেয়ারম্যানকে। কিন্তু মন্ত্রী, সচিব ও চেয়ারম্যানের মধ্যকার ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’ বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্যের জন্ম দিচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বোর্ড যদি সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে মন্ত্রীর হস্তক্ষেপের এখতিয়ার আছে। বোর্ড স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। তবে স্বার্থান্বেষী মহলের দুর্নীতি থেকে বিমানকে রক্ষা না করে, এটিকে পুনরায় করপোরেশনে রূপান্তরের মতো অযাচিত সিদ্ধান্ত নিলে শর্ষের মধ্যে ভূত রয়েই যাবে। তাই সবার আগে মন্ত্রী বনাম বিমান চলাচলবিষয়ক সংসদীয় কমিটির চলমান বিরোধের দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। বিদ্যমান সংকট কাটিয়ে আমাদের জাতীয় পতাকাবাহী আকাশ পরিবহন সংস্থাটি আরও চাঙা হয়ে উঠবে, এ প্রত্যাশা সবার।
সোহেল নওরোজ, শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।

No comments

Powered by Blogger.