সময়ের প্রতিবিম্ব-একটি অব্যক্ত বেদনাময় স্মৃতিচারণা by এবিএম মূসা

রমজান এলেই ইফতার পার্টির ধুম পড়ে যায়। রাজনৈতিক দল আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দাওয়াত পেতে থাকি। সবগুলোতে নানা কারণে যাওয়া হয় না। কোনোটিতে যাই, তবে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করি না। এবার একটি ব্যতিক্রম ঘটেছে।


প্রতিবছরই দুই শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দলের প্রধানের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে থাকি। এবারও পেয়েছি। প্রথমটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াত, স্থান গণভবন। দ্বিতীয়টি সংসদে মাননীয় বিরোধী দলের নেতার, স্থান বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে। প্রথমটিতে হাজিরা দিয়ে চলে এসেছি, দ্বিতীয়টিতে যাইনি। কেন যাইনি, এর সত্যি ব্যাখ্যা আমন্ত্রণকারীকে দিইনি। এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।
এর আগে গণভবনের একটি সম্মিলনীতে গিয়ে প্রধান ফটকে গাড়ি ছেড়ে হেঁটে যেতে হয়েছিল। এবার প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদকে টেলিফোন করে বললাম, ‘এই বয়সে এত হাঁটতে পারব না।’ আজাদ জানালেন, প্রধান প্রবেশপথ থেকে শামিয়ানা পর্যন্ত যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা আছে কি না দেখবেন, তবে যথাসময় প্রধান ফটকে পৌঁছানোর পর গাড়িতে করে সরাসরি মূল শামিয়ানাস্থলে পৌঁছাতে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। প্যান্ডেলের ভেতরে পৌঁছে শত শত ‘পেশাজীবীর’ ভিড়ে দিশেহারা হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে হলো চাটগাঁইয়া মেজবানে এসেছি। অতঃপর কোথায় বসব বুঝতে না পেরে কয়েক মিনিট হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে থেকে যে পথে আগমন, সেই পথে প্রস্থান করলাম। আমার সৌভাগ্য, গণভবনের উল্টোদিকে রাস্তার ওপাশে আমার বাড়ি। ধীরে-সুস্থে পায়ে হেঁটে বাসায় পৌঁছালাম। জীবনে এই প্রথম একজন রাষ্ট্রনায়ক অথবা সরকারপ্রধানের দাওয়াতে নিয়ম রক্ষার হাজিরা দিয়ে শুধু আমন্ত্রণকারীর প্রতি সম্মান জানানোর কর্তব্য পালন করলাম, তবে এ নিয়ে মনে কোনো ক্ষোভ জন্মেনি। কারণ এ তো শেখ হাসিনার দাওয়াত ছিল না, এ ছিল প্রধানমন্ত্রীর একটি সরকারি কর্মসূচি। অবশ্য পরদিন সংবাদপত্রে বহুজনের মধ্যে অধমের ‘অংশগ্রহণের’ খবর ছাপা হয়েছে।
দ্বিতীয় দাওয়াতটি ছিল সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার। শিষ্টতা বজায় রাখতে সেই আমন্ত্রণের প্রতি সম্মান জানাব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন সকালবেলা সংবাদপত্রের প্রথম পাতার একটি খবর, আর তা নিয়ে পৃষ্ঠাব্যাপী প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ পড়ে চমকে উঠলাম। নিজের স্মৃতিশক্তিতে বয়সের কারণে ক্ষয় ধরেছে, তা অনুভব করলাম। অস্ফুট স্বরে বলে জনান্তিকে প্রশ্ন করলাম, তাই তো, দিনটি ভুলে গেলাম কেন? এমন দিনে বেগম খালেদা জিয়া ইফতার সম্মিলনীর আয়োজন করলেন কেন? কয়েক দিন আগে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যা দিবসে তিনি বিতর্কিত জন্মদিন পালন করেছেন। আজকের তারিখেও তো একটি ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ঘটেছিল, যার সঙ্গে তাঁর দলের কারও কারও সম্পৃক্ততা প্রকাশ পেয়েছে। এ সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যার ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হয়। কয়েক দিন আগে ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যা দিবস। আর ২১ আগস্ট হচ্ছে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার প্রাণনাশের অপচেষ্টা দিবস। আল্লাহর অশেষ করুণায় তিনি বাঁচলেও সেদিনের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আইভি রহমানসহ আরও ২৩ জন। প্রতিবছর ১৫ আগস্ট একান্তে ঘরে বসে বঙ্গবন্ধু, মুজিবজায়া ভাবি ও কামাল-জামাল-রাসেলের স্মৃতি রোমন্থন করি। একইভাবে ২১ আগস্টেও কোথাও যাই না। এবারও যাইনি, কোনো লেখালেখি করিনি। একটি চ্যানেলের টক শোতে যাওয়া বাতিল করে যথাযথ ব্যবস্থাপককে জানিয়ে দিলাম। বিরোধীদলীয় নেতার প্রেস সচিব যখন সেলফোনে বিকেলের দাওয়াতের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন, তখন অসুস্থতার অজুহাতে অপারগতা জানিয়ে দিলাম। সরাসরি বলতে পারলাম না, ‘আজকের দিনে ইফতার আয়োজনের সমারোহে উপস্থিত হয়ে আইভি রহমান এবং আরও ২৩ জনের রুহের অবমাননা করতে পারব না।’ বলিনি, তাঁর ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালনের মতোই ২১ আগস্ট একটি সম্মিলনী অনুষ্ঠান, যে অজুহাতেই হোক, অনুচিত ও অশোভন মনে হচ্ছে।
আগেই বলেছি, জাতির জীবনের শোকাবহ দিনগুলোয় আমি একান্ত আপন প্রকোষ্ঠে নিজেকে আবদ্ধ রাখি, আর স্মৃতি রোমন্থন করি। বিভিন্ন ঘরোয়া বৈঠকে, সত্যিকার অর্থে আড্ডায় বসে যখন খণ্ড খণ্ড আকারে সেগুলো একটু-আধটু স্মরণ করি, তখন অনেকে বলেছেন, এগুলো লিখুন, সবাই জানুক। বিশেষ করে, স্মৃতি রোমন্থনে যাঁদের প্রত্যক্ষদর্শী বা অংশগ্রহণকারী বলে উল্লেখ করেছেন, তাঁরা জীবিত থাকা অবস্থায়ই সেসব বলুন। না হলে পরে সেগুলোর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কেউ হয়তো বাগাড়ম্বর অথবা আত্মপ্রচার বলেও অভিহিত করবেন। তাই অন্তরঙ্গ আলোকে বঙ্গবন্ধু, প্রেরণাদায়িনী বেগম মুজিব, সর্বশেষ কামাল-জামাল-রাসেল সম্পর্কে পত্রিকায়, বিশেষ করে প্রথম আলোয় কয়েকটি প্রতিবেদন ছেপেছি। কিন্তু গ্রেনেড হামলার শিকার শ্রদ্ধেয় আইভি রহমান সম্পর্কে এবং শ্রদ্ধেয় জিল্লুর রহমানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় সম্পর্কে কোনো দিন কিছু লেখা হয়নি। অবশ্য তেমন বিস্তৃতভাবে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে কিছু লেখারও নেই। তবু ২১ আগস্ট এলে যখন একা বসে স্মৃতির কপাট খুলে দিই, তখন কিছু ঘটনা, প্রাথমিক পরিচয়ের পরবর্তী সময় হূদ্যতার পটভূমি স্মরণে আসে বৈকি। আজকে সেই ‘কিছু বলার’ ভূমিকায়ই ইফতার পার্টি প্রসঙ্গটি এসেছে। ইফতারের দাওয়াত পেয়ে শোকাবহ ২১ আগস্ট দিনটিতে নতুন করে বেদনা অনুভব করেছি।
আওয়ামী লীগের বর্তমান শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনেকের সঙ্গেই আমার দীর্ঘদিনের অন্তরঙ্গতা রয়েছে। বস্তুত সাংবাদিকতা পেশায় থাকার কারণে ‘নিকটস্থ’ হতে পেরেছি বলেই ঘনিষ্ঠতা হয়েছে। বামপন্থী রাজনীতিবিদদের প্রায় সবার সঙ্গেও অন্তরঙ্গতা ছিল এবং আছে। আওয়ামী লীগের আদি নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটি ছিল ভিন্ন মাত্রার। মিজানুর রহমান চৌধুরী ও জোহরা তাজউদ্দীন অথবা আমেনা বেগম কীভাবে দুঃসময়ে শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে দলের হাল ধরেছেন, তা আমি কাছে থেকে দেখেছি ও জেনেছি। পরবর্তী সময় রাজ্জাক-তোফায়েল-শেখ মণি কীভাবে লড়াকু তরুণ কর্মী থেকে নেতৃত্বের কাতারে এসেছেন, তা আমি সাংবাদিকতার অঙ্গন থেকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। তারপর একসময় তাঁদের অত্যন্ত কাছাকাছি এসেছি। কামরুজ্জামান হেনা ভাই, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও সৈয়দ নজরুলের সঙ্গে ছিল শ্রদ্ধা-ভালোবাসা মেশানো সম্পর্ক। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। সদা সর্বদা দলের দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত তাজউদ্দীনের খুব কাছাকাছি কখনো যাওয়া হয়নি, পেশাগত কারণেও প্রয়োজন ঘটেনি। একইভাবে নীরবে নেতার ও দলের সেবায় নিয়োজিত জিল্লুর রহমানের সঙ্গেও খুব ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠেনি। অগণিত শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ভিড়ে তিনি তখন অনেকখানি অদৃশ্য ছিলেন, তবে জেবুন্নাহার আইভিকে মাঝেমধ্যে আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখেছি। সেই কর্মকাণ্ডে সত্যি কথা বলতে ততখানি নজরে পড়েনি, তিনি ছিলেন অনেকের মধ্যে একজন।
আওয়ামী লীগের চেয়ে বামপন্থী রাজনীতির প্রতি নারী ও ছাত্রীদের আকর্ষণ ছিল বেশি। বৃহত্তর রাজনৈতিক অঙ্গনেও যে দু-চারজন মহিলার পদচারণ ছিল, তাঁরাও বাম দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন একসময়। আওয়ামী লীগে মহিলা নেতৃত্বের সংকট মোচনে প্রথমে যে দু-একজন সামনের কাতারে এলেন, তাঁদের নেতৃত্ব দিলেন আইভি রহমান। তখনই তাঁর রাজনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য দলের ভেতরের ও বাইরের এবং মিডিয়ার নজরে এল। তত দিনে মতিয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগে এলেন বাম রাজনীতি থেকে। এই দুজনের বাইরে আরও কয়েকজন আলোচনায় এসেছেন। মতিয়া চৌধুরী যখন স্বৈরাচারবিরোধী ও জিয়ার অনুসারীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাঁকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলাম। সেই প্রতিবেদন দেশে-বিদেশের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। বেগম জোহরা তাজউদ্দীন আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলের হাল ধরার জন্য প্রকাশ্যে এসে আমার মতো অনেককে অবাক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আইভি আপাকে নিয়ে কিছুই লেখা হয়নি। কারণ তাঁর নীরব দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সাংবাদিকতার বিশেষ রসদ ছিল না। সেই রসদ প্রথম পেয়েছিলাম একাত্তরে। অতঃপর বিগত পাঁচ বছর ২১ আগস্টের নিভৃত ভাবনায় আইভি আপার সঙ্গে বিক্ষিপ্ত পরিচয় ও সান্নিধ্যের স্মৃতি রোমন্থন করেছি। সেই সামান্য সম্বল নিয়ে আজকের স্মৃতিচারণা। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তিনি নেত্রীর পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়েন ও পরে ২৪ আগস্ট তিনি হাসপাতালে প্রাণ ত্যাগ করেন।
আগেই বলেছি, জিল্লুর ভাই যেমন ছিলেন দলে নিভৃতচারী, সেই তুলনায় আইভি আপা ছিলেন মাঠে-ময়দানের আন্দোলনে অনেকখানি সক্রিয়। সেই সক্রিয় রূপ দেখেছি স্বৈরাচারবিরোধী ও একটি রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রের আচ্ছাদনে ঢাকা স্বেচ্ছাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে। এরপর অন্য রূপে তাঁকে দেখলাম একাত্তরে ভারতে শরণার্থী শিবিরে। মুজিবনগরে একজন ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে ‘সমান হূদ্যতা’ তথা কমন ফ্রেন্ডশিপের সুবাদে আমি জিল্লুর-আইভি পরিবারের কাছাকাছি এসে গেছি। সেই সাংবাদিক ছিলেন কলকাতায় বর্তমানে বিলুপ্ত আমেরিকান বার্তা সংস্থা ইউপিআইয়ের প্রতিনিধি। বর্তমানে স্বর্গত এ কে দাস, অজিত দাস নামেই তিনি সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে জিল্লুর দম্পতির অন্তরঙ্গতা কীভাবে হয়েছিল, তা জানা হয়নি। তবে তৎকালীন পাকিস্তান অবজারভার-এ কলকাতা প্রতিনিধির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আমার সঙ্গে পেশাগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে, আন্তরিক পরিচয় ঘটে। জিল্লুর ভাই ও আইভি আপা দুজনকেই অজিতদা সম্মান করতেন। এই সম্মান জ্ঞাপন ছিল পারস্পরিক ও আন্তরিক। স্বাধীনতার পর অজিতদা একবার ঢাকায় এসে আমার মোহাম্মদপুরের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। জিল্লুর ভাই ও আপা দুজনে খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলেন আমার বাড়িতে অজিতদার সঙ্গে দেখা করতে। পরে বোধ হয় অজিতদা এক দিন তাঁদের বাড়িতেও গিয়েছিলেন।
আজকের মূল আলোচনাটি ইতিমধ্যে একটুখানি প্রসঙ্গচ্যুত হয়েছে। ফলে প্রতিবেদনের ধারাবাহিকতাও একটুখানি বিঘ্নিত হচ্ছে। এবার আইভি রহমান প্রসঙ্গটি তাই একটি ঘটনার স্মরণের মাধ্যমে মূল বক্তব্যের মধ্যে নিয়ে আসছি। মুজিবনগরে আমি ছিলাম বিবিসি, লন্ডন টাইমস ও সানডে টাইমস-এর জন্য কর্মরত সাংবাদিক। কথাটি আগেও পাঠকদের জানিয়েছি। কর্মসূত্রে যখন রণাঙ্গনে যেতাম অথবা খবর সংগ্রহ করতাম, অজিতদা প্রায়ই সঙ্গে থাকতেন। অজিতদা ও আমি শরণার্থীদের সম্পর্কে খবর সংগ্রহে বিভিন্ন শিবিরেও যেতাম। সেবার গেলাম মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির সঙ্গে কলকাতার নিকটবর্তী সল্ট লেক ও ঠাকুর পুকুরের শরণার্থী শিবিরে। তখনো সল্ট লেক অভিজাতদের বাসস্থান হয়ে ওঠেনি। সেখানে দেখা পেলাম আইভি রহমানের। শরণার্থী শিবিরের অমানবিক ও কর্দমাক্ত নোংরা পরিবেশে তাদের সেবায় নিযুক্ত। বস্তুত অপূর্ব সুন্দরী আইভি রহমানকে সেই নোংরা পরিবেশে কাদামাখা চেহারায় আমি বা অজিতদা প্রথমে চিনতেই পারিনি। কেনেডিকে নিয়ে বিদেশে পাঠানো রিপোর্টে আইভি রহমানের মানবিক সেবার উল্লেখ ছিল।
দেশ স্বাধীন হলো, আইভি রহমান ক্রমান্বয়ে আপন রাজনৈতিক দলের শীর্ষে চলে এলেন। দলীয় নেত্রীর প্রায় সর্বক্ষণের সাথি, জীবনের শেষ মুহূর্তটি আপন নেত্রীর পাদমূলেই বিসর্জন দিলেন। ২১ আগস্টের স্মৃতিতে আমার মানসপটে যখন অতীত সামনে আসে, তখন জিল্লুর রহমানের চেহারাটিও ভেসে ওঠে। অবাক হয়ে ভাবি, কী করে তিনি একটি অব্যক্ত ব্যথা বুকে চেপে এক-এগারোর পরবর্তীকালে নেত্রীর অনুপস্থিতিতে বিধ্বস্ত দলটিকে সামলে রেখেছিলেন। সেই দুঃসময়ে তাঁর সঙ্গে আমার কয়েকবার ব্যক্তিগত সাক্ষাৎও ঘটেছে। বন্যাদুর্গত লোকদের সেবায় নিবেদিত নিঃস্ব আওয়ামী লীগের জন্য অর্থ-বস্ত্র সংগ্রহ করে তাঁকে পৌঁছে দিতে সবার অগোচরে গুলশানের বাড়িতে গিয়েছি। কখনো আইভি আপার প্রসঙ্গটি সামনে আনিনি। জিল্লুর ভাই কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন্ন নির্বাচন-সম্পর্কিত আলোচনাকালে আমার একটি টিভি চ্যানেলের অনুমোদন প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। অনুমোদন না দেওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
উল্লেখ্য, চ্যানেলটি তাঁরই দল ক্ষমতায় আসার পরও অনুমোদন পায়নি। তবুও পরবর্তী সময় রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে সেই সুপারিশটির জন্য ধন্যবাদ জানাতে বঙ্গভবনে গিয়েছিলাম। তখন অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আলোচনায় একবার আইভি আপার নামটি উচ্চারণ করেছিলাম। তিনি নীরবে শুনলেন, একটি কথাও বললেন না। শুধু বেদনাভরা দৃষ্টিতে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন। পরে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে তাঁকে ব্যথা দেওয়ার জন্য অনুতাপ করেছি। এবার ২১ আগস্ট যখন একাকী বসে আইভি রহমানের (বয়সে ছোট হওয়া সত্ত্বেও যাঁকে আপা বলতাম) স্মৃতি রোমন্থন করছিলাম, সেদিনের বঙ্গভবনের সেই বেদনাক্লিষ্ট চেহারাটি আমার মানসপটে ভেসে উঠেছিল।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক। কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.