নতুন তেলক্ষেত্র-বাপেক্সকে শক্তিশালী করুন

কৈলাসটিলা ও হরিপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে তেল উত্তোলনও 'লাভজনক' হওয়ার যে ঘোষণা পেট্রোবাংলা রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে দিয়েছে, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাই। কেবল মজুদ নিশ্চিত নয়, আগামী এক বছরের মধ্যে সেখান থেকে তেল উত্তোলনও সম্ভব_ গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানিটির ক্ষেত্রে নেহাত আমদানিনির্ভর একটি দেশের জন্য এর চেয়ে
সুসংবাদ আর কী হতে পারে? তবে সবচেয়ে শ্লাঘার বিষয় হচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত একটি প্রতিষ্ঠান এই তেলের মজুদ নিরূপণ ও উত্তোলনযোগ্যতা প্রমাণ করেছে। এ ধরনের উদ্যোগে বিদেশি কোম্পানিনির্ভরতা আমাদের দেশে নতুন নয়। হরিপুর তেলক্ষেত্রও আশির দশকে একটি বিদেশি কোম্পানির তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তারা কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ হলেও আমাদের দামাল ছেলেরা সফল হয়েছে। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে গ্যাস-তেল ক্ষেত্র অনুসন্ধান ও জ্বালানি উত্তোলনের ক্ষেত্রে হরিপুরের অভিজ্ঞতা নীতিনির্ধারকরা মনে রাখবেন। অস্বীকার করা যাবে না যে, পরিমাণ বিবেচনায় নতুন তেলক্ষেত্রে মজুদ 'বিপুল' নয়। কিন্তু কৈলাসটিলা ও হরিপুরের সাফল্যের আলো আগামী দিনে পথ দেখাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বাপেক্সের তত্ত্বাবধানেই স্থল ও সমুদ্র অঞ্চলের অন্যান্য গ্যাসক্ষেত্রেও তেলের সন্ধান মিলবে_ এমন স্বপ্ন দেখতে বারণ তো নেই! এই আলোর পথের যাত্রী বাপেক্সের ত্রিমাত্রিক জরিপ দলের তরুণ ও মেধাবী কর্মীদের আমরা অভিনন্দন জানাই। আমাদের মনে আছে, গত বছর সেপ্টেম্বরে মৌলভীবাজারের রশিদপুরের গ্যাসক্ষেত্রে নতুন সোয়া তিন ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ নিশ্চিত করেছিল তারা। দেশের ইতিহাসে সেখানেই প্রথম রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নিজস্ব উদ্যোগে থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক জরিপ চালাতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে নোয়াখালীর সুনন্দপুরেও গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছিল বাপেক্সের তরুণ প্রযুক্তিকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত দলটি। আমাদের তরুণরা যে বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে পারে, এ তিনটি সাফল্যের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ হলো। এখন প্রয়োজন দেশের অন্যান্য অংশেও বাপেক্সকে পূর্ণ সুবিধা ও স্বাধীনতার সঙ্গে কাজ করতে দেওয়া। অভিযোগ রয়েছে যে, অদৃশ্য নানা ইশারায় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটির সম্ভাবনা পূর্ণ বিকশিত হচ্ছে না। সরকারের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাই আমরা। আমাদের মনে আছে, রশীদপুরের রশীদপুর রাষ্ট্রীয় খাতের সেই পুরনো পাঁচ গ্যাসক্ষেত্রের একটি, যেগুলোর স্বত্ব ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় একক সিদ্ধান্তে মাত্র ৪৫ লাখ পাউন্ডে বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে কিনে রেখেছিলেন। সে সময় সহকর্মীদের অনেকের আপত্তি তিনি আমলে নেননি। আমরা জানি, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আন্তর্জাতিক সালিশি প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে তিনি যে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন, তা জাতি মনে রাখবে। বাপেক্সকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে তার আগ্রহ সুবিদিত। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই সদিচ্ছা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় প্রতিফলিত হোক। প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনায় আত্মবিশ্বাসের বিকল্প নেই। যে জাতি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে নিজের স্থান করে নেয়, তাদের আত্মবিশ্বাস বিফলে যেতে পারে না। হরিপুর ও কৈলাসটিলায় সঞ্চিত আত্মবিশ্বাস ও সাফল্য খনিজসম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশকে নিঃসন্দেহে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.