প্রশাসন যেখানে ধ্বংসের সহযোগী-দখলে বিপন্ন ভাওয়াল শালবন

বিলুপ্তির প্রায় শেষ সীমানায় পৌঁছেছে ভাওয়াল গড়ের শালবন। জমিদারিস্বত্ব থেকে সরকারের হাতে আসার গত ৬০ বছরে বনের আয়তন ও প্রাণবৈচিত্র্য কেবলই ধ্বংস হয়েছে। প্রভাবশালীদের দখল, কাঠচোর-চক্রের বৃক্ষ নিধন, অবৈধ কলকারখানা স্থাপন, উন্নয়ন প্রকল্প, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বানানো এবং সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গাজীপুরের এই প্রাচীন অরণ্য এখন বিপন্ন।


তার পরও কাগজে-কলমে মাত্র ৬৫ হাজার একর বলা হলেও বাস্তবে বনের আয়তন অনেক কম। সবই হয়েছে জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ তথা সরকারি নজরের সামনে। সরকার এখানে রক্ষক নয় ভক্ষকের সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ। ভাওয়ালের শালবনের ধ্বংসগাথা এক কথায় মর্মান্তিক ও অসহনীয়।
১৯৫০ সালে প্রজাস্বত্ব আইনে বনটি সরকারের হাতে নেওয়া হয়। তারপর এটি বন বিভাগকে বুঝিয়ে দিতে বলা হলেও স্থানীয় জেলা প্রশাসন আজও তা করেনি। বরং বিভিন্ন সময়ে বনভূমি ব্যক্তিমালিকানায় বন্দোবস্ত দিয়েছে আর ভূমি দপ্তরের মাধ্যমে বনের জমি দখলদারদের নামে নথিভুক্ত করা হয়েছে। আইন, সরকারি সংস্থা, বন রক্ষার জন্য দেওয়া তহবিল কতটা বন বাঁচিয়েছে, আর কতটা ধ্বংস করেছে, সেই খতিয়ান আজ হওয়া প্রয়োজন।
১৯৮২ সালে ভাওয়াল অরণ্যকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণার পর থেকেই বন ও বনের প্রাণবৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে। বনের ভেতর সড়ক বানাতে গিয়ে কাটা হয় বিপুলসংখ্যক বৃক্ষ। সম্প্রতি স্থানীয় সাংসদের উত্সাহে নতুন দুটি সড়ক বানাতে আবারও অজস্র বৃক্ষ কাটা হয়েছে। বিদেশি সহায়তাপুষ্ট সামাজিক বনায়ন প্রকল্পও গাজীপুরের শালবন বিপন্ন করার জন্য দায়ী। অর্থকরী বৃক্ষ লাগানোর নামে ইউক্যালিপটাস ও রাবারগাছে ভরিয়ে ফেলা হয় অনেক এলাকা। অনেক এলাকা চলে যায় কলা, আনারস চাষে। এসব কাজে তহবিল জুগিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংক প্রভৃতি। সরকারিভাবে ১৮ শতাংশ বনভূমির কথা বলা হলেও এখন দেশে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৬ শতাংশ। এর বড় অংশটাই আবার কৃত্রিম বাগান ও সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য। ভাওয়ালের শালবন সারা দেশের বন বিপন্ন পরিস্থিতিরই চরম উদাহরণ।
এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই ভাওয়ালের শালবনের অস্তিত্ব থাকবে না। তাই অবিলম্বে সরকারকে বন রক্ষার জন্য তত্পর হতে হবে। যে ভুল উন্নয়ন ও বাণিজ্যচিন্তা বনের সর্বনাশ করেছে, সেই সব নীতি ও পন্থা বাতিল করতে হবে। ভাওয়ালের শালবন বিলুপ্তির জন্য দায়ী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.