ডেভিড ক্যামেরনের হয়ে ওঠা by মিজান মল্লিক

কম বয়সে রাজনীতি ব্যাপারটা তেমন পছন্দ করতেন না এমন একজনই কিনা শেষ পর্যন্ত হলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী!
এক সহপাঠী বলেছেন, স্কুলে পড়ার সময় ক্যামেরন আনুষ্ঠানিক পড়াশোনায় খুব একটা মনোযোগী ছিলেন না। রাজনীতিতেও আগ্রহ ছিল না তাঁর। তবে সহপাঠীদের অনেকেই তখন কনজারভেটিভ পার্টির রাজনীতিকে সমর্থন করতেন। কনজারভেটিভ পার্টির বীজ তখনই হয়তো রোপিত হয় তাঁর মনে।


সেই দিনগুলোর অনেক অনেক দিন পর হতোদ্যম, বেহাল কনজারভেটিভ পার্টির দায়িত্ব পড়ে ডেভিড ক্যামেরনের ঘাড়ে। সেটা ২০০৫ সাল। এর কয়েক মাস আগে লেবার পার্টির হাতে টানা তৃতীয়বার নির্বাচনী পরাজয়ের শিকার হয়েছিল রক্ষণশীলরা। দায়িত্ব নিয়েই কনজারভেটিভদের ‘ন্যাস্টি পার্টি’র ভাবমূর্তি মেরামতে সচেষ্ট হন ক্যামেরন।
১৯৯৭ সালে স্ট্যাফোর্ড থেকে সাধারণ নির্বাচনে প্রথম প্রার্থী হলেও জিততে পারেননি ক্যামেরন। সাফল্য আসে পরেরবার। ২০০১ সালে অক্সফোর্ডশায়ারের উইটনি থেকে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। এর পর থেকে দ্রুতই উত্থান হয়েছে ডেভিড উইলিয়াম ডানকান ক্যামেরনের।
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের দূরসম্পর্কের আত্মীয় ক্যামেরন। তাঁর স্ত্রী সামান্থাও কম যান না। এক ব্যারনেটের মেয়ে তিনি। ক্যামেরন পড়াশোনা করেছেন ইটনে, যা কিনা ব্রিটেনের সবচেয়ে অভিজাত প্রাইভেট স্কুলগুলোর একটি। এক বাল্যবন্ধুর স্মৃতিতে ছেলেবেলায় ক্যামেরন ছিলেন রসিক, বুদ্ধিদীপ্ত, বন্ধুবৎসল ও পরিবার অন্তঃপ্রাণ।
অক্সফোর্ডে পড়ার সময় ক্যামেরন ছাত্ররাজনীতি এড়িয়ে চলেন। মনোযোগ দেন পড়াশোনায়। অক্সফোর্ড থেকে প্রথম শ্রেণীতে ডিগ্রি পাওয়ার পর কিছুদিন সাংবাদিকতা ও ব্যাংকিং পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
বাবা ইয়ান ছিলেন শেয়ারবাজারের দালাল। মা মেরি বিচারক। বাবার কিছু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি কখনোই। বাবার চরিত্রের এই দিকগুলো ভালোভাবেই পেয়েছিলেন ক্যামেরন। ১৯৮৮ সালে কনজারভেটিভ দলের গবেষণা বিভাগে যোগ দিয়ে সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেন। ক্রমেই দলে নিজেকে অপরিহার্য বলে প্রতিষ্ঠা করেন। ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়াই তাঁর ধাত। এসব গুণের বলেই মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ক্ষমতায় এসে ব্রিটেনের ২০০ বছরের ইতিহাসে কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী হলেন তিনি।
রাজনীতিতে উত্থানের সময়টা আর অল্পদিনের ব্যবসায়ী জীবনে যাঁদের সঙ্গে লেনদেন হয়েছে, তাঁরা অনেকেই অবশ্য বলেছেন, ডেভিড ক্যামেরনকে একজন ‘পিচ্ছিল, নির্মম রকমের উচ্চাভিলাষী আর সাবধানী’ লোক বলেই মনে হয়েছে।
‘ইউরোস্কেপটিক’ বলে পরিচিত ক্যামেরন চান ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিছু ক্ষমতা যুক্তরাজ্যকে ফিরিয়ে দিক। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, বাজেট ঘাটতি কমানোর জন্য যে ব্যয় হ্রাস ও কর বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে, অন্য নেতাদের মতো ক্যামেরনও এর একটা ক্ষুদ্র অংশই কেবল প্রকাশ করেছেন। বিশাল ঘাটতি হ্রাসের জন্য আর্থিক বাজারের প্রত্যাশা আর সাধারণ ভোটারদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি—এই দুয়ের মধ্যে কঠিন এক ভারসাম্যের খেলা খেলতে হবে নতুন প্রধানমন্ত্রীকে।
সূত্র: বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.