মডেল জাতিসংঘ অধিবেশন, ঢাকা+২০-ঐ নূতনের কেতন ওড়ে... by কিঙ্কর আহসান

কালো স্লেটের মতন আঁধার কালো আকাশটার দখল নিয়েছে আলোরা। ভোর হয়েছে সে অনেকক্ষণ। গাছের পাতায় পাতায় নেতিয়ে পড়া রোদ পাখির মতন টুক করে পালিয়ে যায় এদিক-সেদিক। ‘চা, চা...আদা চা’ বলে হাঁক ছেড়ে বাণিজ্য অনুষদ মাতিয়ে রাখে চা-বিক্রেতারা। এ অনুষদ শালিক পাখির আড্ডাখানা।


তাদের একরত্তি বুকে বড় সাহস। শিক্ষার্থীদের থোড়াই কেয়ার করে এরা ছুটে বেড়ায় পুরো ক্যাম্পাসে। ১১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ মিলনায়তনে ‘ইউনিস্যাব’-এর আয়োজনে আসা ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে এ অনুষদে সেদিন ভিড়টা ছিল একটু বেশিই।
দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো পৃথিবীর প্রধান সব সমস্যার ব্যাপারে তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করার লক্ষ্যে ‘ইউনিস্যাব’ আয়োজন করে মডেল ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স, ‘ঢাকা +২০’। ‘রিও +২০-এর আলোকে ‘রোড টু রিও’ সফল করতে বিশ্বের প্রতিটি দেশের ‘মাই সিটি +২০’-এর মতো বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় যুব সংগঠন ইউনিস্যাবের দুই দিনব্যাপী মডেল ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স, ‘ঢাকা +২০’ আয়োজন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদে। ১১ মে সকাল নয়টায় বাণিজ্য অনুষদ মিলনায়তনে শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠান শেষ হয় পরের দিন সন্ধ্যাবেলায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে। প্রায় দেড় শ শিক্ষার্থী এ অনুষ্ঠানে নিরাপদ শহর ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য জলবায়ুর ভূমিকা এবং এ-সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনায় মেতে ওঠেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় নতুন সব পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তরুণেরা। বিপদে হাতে হাত ধরে কাজ করার শপথ করেন সবাই। দ্বন্দ্ব ভুলে বিশ্বের সব তরুণ একই আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে যেন করে যেতে পারেন কাজ—এ ভাবনা থেকে ‘অ্যাকশনএইড’-এর সহযোগিতায় ‘ইউনিস্যাব’ শিক্ষার্থীদের নতুন সব পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলার সুযোগ করে দেয়।
বাংলাদেশের তরুণদের চিন্তা ছড়িয়ে যাক বিশ্বব্যাপী। সবার মাঝে গড়ে উঠুক দারুণ এক সম্পর্ক। ভুলত্রুটিকে পেছনে ফেলে সুন্দর এক ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে তরুণদের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। তাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, তারা যেন তরুণদের বাধাহীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেয়।’ একটি সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখা আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ পাওয়া উচিত তরুণদের। কাজ করার সুযোগ পেলেই মেধাবী তরুণদের মাঝে জেগে উঠবে নেতৃত্বদানের ক্ষমতা। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সমস্যাগুলো সমাধানে তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
‘সুন্দর আগামীর স্বপ্নে তরুণদের একত্র হওয়ার এই উদ্যোগ সত্যিই আমাদের সাহস জোগায়। আমরাই পারি কঠোর পরিশ্রম, মেধা আর ভালোবাসার মাধ্যমে পৃথিবীটাকে সুন্দর করে তুলতে’ বলছিলেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজের (সাউথ) শিক্ষার্থী ফাহমিদা ফাইজা। ভবিষ্যতে এমন আরও অনেক আয়োজনে তরুণদের একত্র করে তাদের ভাবনাগুলো সবার সামনে তুলে ধরার সুযোগ ‘ইউনিস্যাব’ নামের যুব সংগঠনটি করে দিতে চায় বলে জানান অনুষ্ঠানের আয়োজক এবং সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট নাফিজ ইমতিয়াজ। তরুণদের মধ্যে থাকুক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। বৈশ্বিক এক ভাবনার মেলবন্ধনে জড়াক সবাই—এমনটাই চাওয়া জাতিসংঘের সহায়তায় কাজ করে যাওয়া এই যুব সংগঠনটির।
অনুষ্ঠান শেষে যখন ফিরছি, তখন সন্ধ্যার শেষ ভাগ। তড়িঘড়ি করে নামছে আঁধার। ভাপসা গরমে ইতিউতি তাকাতেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী এক তরুণকে দেখলাম, মেতে আছেন শালিক পাখি নিয়ে। কথা বলতেই জানালেন, পাখি তাঁর বড্ড প্রিয়। পাখির মতন ডানা থাকলে তিনি চষে বেড়াতেন পুরো দেশটা। অসহায় মানুষদের চোখের জল দূর করতে করে যেতেন কাজ। তাঁর আফসোস আর আকুতি আমাদের আশাবাদী করে তোলে। কেন জানি মনে হয়, একটু পরে আঁধার নামলেও দূর থেকে ঠিক ঠিক ঠাওর করা যাবে এই মেধাবী তরুণের জ্বলজ্বলে চোখে ফুটে ওঠা স্বপ্ন আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞার ছবি। দেশের মস্ত ক্যানভাসটা তৈরিই আছে। সময় এখন শুধু সাদা-কালো ছবিতে রংতুলি দিয়ে তরুণদের রং দেওয়ার পালা।

No comments

Powered by Blogger.