সংসদীয় কমিটি দায়িত্ব এড়াতে পারে না-মন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতি

দুঃখজনকভাবে জাতীয় সংসদে দেওয়া মন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতি মূল্যহীন হয়ে পড়ছে। বিরোধী দল তো এমনিতেই সংসদ পলাতক। তারা নিশ্চয়ই মন্ত্রীদের কথার গুরুত্ব দেয়। সংসদীয় গণতন্ত্র হচ্ছে ঐতিহ্যনির্ভর। সবকিছু আইন করে বা বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করে উসুল করা যায় না।


আমাদের সংসদে বিতর্ক চলে, সংসদীয় কমিটির সুপারিশ মান্য করা মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য বাধ্যতামূলক কি না। বহু ক্ষেত্রে কমিটির সুপারিশকে বাঁকা চোখে দেখা হয়। কমিটির সামনে কৈফিয়ত দিতে তাঁদের অনীহা লুকোছাপা বিষয় নয়। কমিটির সভাপতিরা শ্রদ্ধাভাজন হলেও সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাঁদেরও হাত-পা বাঁধা।
সংসদ ও সংসদীয় কমিটির মূল কাজ নির্বাহী বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ ও তদারক করা। অথচ দেখা যাচ্ছে, সংসদীয় কমিটি মন্ত্রীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিরও হিসাব রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। বর্তমানে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফজলে রাব্বী এর আগে প্রতিশ্রুতি কমিটির সভাপতি ছিলেন। তাঁর সভাপতিত্বে কমিটির ১৮টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও তিনি কখনো প্রতিশ্রুতি এবং তা বাস্তবায়নের হিসাব মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে চাননি। এটা দায়িত্বে অবহেলা বলেই প্রতীয়মান হয়। অবস্থা এমনই করুণ যে মন্ত্রণালয়গুলো প্রতিশ্রুতির হিসাব সংরক্ষণ করতেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। কমিটির নতুন সভাপতি আলী আশরাফ দায়িত্ব নিয়ে এ বিষয়ে অনুসন্ধানে উদ্যোগী হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। এখন ২৭টি মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের মন্ত্রীরা কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। দায়িত্ব এড়াতেই কি তারা বিষয়টি বেমালুম চেপে যাচ্ছে? কেননা, প্রথমে অস্বীকার করলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরে ১২৬টি প্রতিশ্রুতির কথা স্বীকার করেছে। ১৯টি মন্ত্রণালয় মন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতির কথা স্বীকার করলেও কারা কী ও কতটা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে, তা অস্পষ্ট। আইনে আছে, প্রতিটি মন্ত্রণালয় প্রতিশ্রুতি ও তার বাস্তবায়ন তদারক করতে একজন করে স্থায়ী কাউন্সিলর নিয়োগ দেবে, যাঁরা সংসদ বৈঠকে হাজির থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে নামকাওয়াস্তে যাঁদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁরা দায় সারেন, কাজ করেন না।
বর্তমান সংসদ সরকারি দলের সদস্যদের পদচারণে মুখর। তাঁদের অধিকাংশই নিজ নিজ এলাকার ছোটখাটো উন্নয়নের জন্য সংসদের ফ্লোরে হাপিত্যেশ করেন। কখনো মুলতবি নোটিশ দেন। কিন্তু স্থানীয় উন্নয়ন প্রশ্নে সংসদকে মুলতবি করে আলোচনা করতে দেখা যায় না। বেসরকারি সদস্য দিবসে অধিকাংশ মন্ত্রী গরহাজির থাকেন। যদিও বা হাজির থাকেন, ভোটাভুটি হতে দেন না। অবস্থা বেগতিক দেখলে মিষ্টি কথায় একটা ছেলে ভোলানো প্রতিশ্রুতি দেন এবং অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা তা ভুলেও যান। এর বাস্তবায়নে কোনো ধরনের দায় যে তাঁরা অনুভব করেন না, তার প্রমাণ মিলল প্রথম আলোর ২০ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনে।
এই অবস্থাটি নির্দেশ করে যে জাতীয় সংসদকে অকার্যকর রাখার দায় শুধু বিরোধী দলের নয়। সরকারি দলের তরফেই সংসদীয় কমিটিকে দুর্বল করে দেওয়ার প্রয়াস আছে, যা কেবল অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, অমার্জনীয়ও বটে।

No comments

Powered by Blogger.