তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন-অতি দ্রুত কার্যকর করুন

ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা সর্বজনবিদিত। তা সত্ত্বেও প্রচুর মানুষ সিগারেট-বিড়িসহ তামাকজাত নানা পণ্য সেবন করে চলেছে প্রতিদিন। এর ফলে মারাত্মক রোগ সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারও কম নয়। নানামুখী প্রচার-প্রচারণার এমনকি সিগারেট-বিড়ির প্যাকেটে এর ক্ষতিকর প্রভাবের কথা স্পষ্ট উল্লেখ করার পরও তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব কমছে না।


কবির ভাষায় একে বলতে হয়, জেনেশুনে বিষপান। প্রশ্ন হলো, তামাকের বিপুল ব্যবহার কমানোর কর্মপদ্ধতি কী? কীভাবে আসক্ত ব্যক্তিদের তামাক সেবন থেকে দূরে আর কীভাবেই-বা নতুন প্রজন্মকে তামাক সেবন থেকে বিরত রাখা সম্ভব হবে? উন্নত দেশগুলো সিগারেটের ওপর উচ্চহারে করারোপ করে এর ব্যবহার অনেকাংশে কমিয়ে এনেছে। তবে শুধু করারোপই একমাত্র উপায় হওয়া উচিত নয়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, উচ্চ কর হারের পরও তামাকজাত পণ্যের বিকিকিনি সমানতালে চলে। যাদের একান্তই সামর্থ্য নেই তারা বাধ্য হয়ে কম দামের অধিকতর ক্ষতিকর তামাকজাত পণ্য সেবনের দিকে উৎসাহিত হয়। সে জন্য জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমটি সবার আগে দরকার। পুরনো ও আসক্ত ধূমপায়ীদের ফেরানোর চেষ্টা অবশ্যই থাকবে। কিন্তু কিছুতেই যেন নতুন প্রজন্মের ধূমপায়ীরা তামাকের সংস্পর্শে আসতে না পারে সেটি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। ধূমপান ও মাদকের মতো ক্ষতিকর উপাদান থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে নতুন প্রজন্মের মানুষদের জীবনের সজীবতার দিকে আকৃষ্ট করতে হবে। নবপ্রাণে উচ্ছল, নবউদ্দীপনায় উদ্দীপিত মানুষরা তাহলে আর ধূমপানের দিকে অগ্রসর হবে না। পাশাপাশি, দোকানগুলো যেন নতুন প্রজন্মের কাছে সিগারেট বিক্রি না করে সে আইন প্রণয়ন এবং এটা মেনে চলা বাধ্যতামূলক করতে হবে। তামাকের ওপর উচ্চ হারে করারোপের নীতি গত কয়েক বছর ধরে চলে আসছে। এটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। একই সঙ্গে তামাকজাত পণ্যের বিতরণ ও বিক্রয় ব্যবস্থার দিকে খেয়াল রাখা উচিত। গণমাধ্যমে কথাবার্তা হয় না বলে এ ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা তেমনভাবে কার্যকর নয়। সিগারেটের মতো পণ্যে কালোবাজারি, মজুদপ্রবণতাও বেশি। অধিক মূল্য হাঁকিয়ে রাতারাতি মুনাফা আয়ের প্রবণতাও এ ক্ষেত্রে আছে। আয়করের পাশাপাশি এসব দিকেও নজর রাখতে হবে। বিগত বছরগুলোতে পাবলিক প্লেসে ধূমপানের হার অনেকটা কমেছে। তবে সেটি যথেষ্ট নয়। নাগরিকতা, দায়িত্বশীলতা ও শিক্ষা-দীক্ষার প্রসার ঘটলে পরোক্ষ ধূমপান অনেকটাই কমে আসতে পারে। তবে পুরো পরিস্থিতি বিচার করে একটি যুগোপযোগী ও কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা দরকার আর সেটিও হতে হবে দ্রুত। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা ক্ষতির পরিমাণ বাড়াবে।
 

No comments

Powered by Blogger.