আমি কী ভাবছি-বাদুড়ঝোলা by লুৎফে তাহেরা

ছোটবেলায় দুটি শব্দের সঙ্গে খুব পরিচিত ছিলাম। একটি ‘মুড়ির টিন বাস’, আরেকটি হলো ‘বাদুড়ঝোলা’। কেননা, মুড়ি আপনি যতটুকু ডিব্বায় ভরতে চান, ততটুকুই ভরতে পারেন। তবে ঝাঁকাতে হয় বারবার। মুড়ির টিন নামক সিটিং সার্ভিসগুলোর কন্ডাক্টর হাঁক দিতে থাকে সিট খালি আছে বলে।


মানুষকে বাসে টিনের ভেতর মুড়ি ভরার মতো করে ভরতে থাকে। আর যাত্রীরা বাদুড়ঝোলা হয়ে বাসের পাদানিতে ঝুলে থাকে। কোনো সময় পাদানিতেও পা রাখার জায়গা থাকে না, তখন অভিজ্ঞ কন্ডাক্টর বানর যেমন তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে এক ডাল থেকে আরেক ডালে যায়, তেমনি হাত দিয়ে পাঁজাকোলা করে ধরে রাখে, যাতে পড়তে না পারে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। পাদানি থেকে পড়ে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যায় অনেকে। আমি বাসযাত্রী।
নারীদের জন্য প্রতিটি বাসে কয়েকটি আসন সংরক্ষিত থাকে। অথচ বাসে নারী যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই নির্দিষ্ট আসনে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তারা নির্দিষ্ট আসনের বাইরে অন্য আসনে বসে খালি পেলে, তা না হলে বাদুড়ের মতো ঝুলে যায়। যাত্রী নারী বা পুরুষ যা-ই হোক না কেন, সবারই বাসে বসে যাওয়ার অধিকার আছে।
ভোক্তা বলে কথা। রাস্তায় যানজট এবং রুটে বাসস্বল্পতার কারণে মানুষ একটি বাস এলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়। প্রচণ্ড বাগিবতণ্ডার মধ্যে চলে আসন দখলের প্রতিযোগিতা। যে আগে বসতে পারে, সে-ই বসে। পুরুষ-নারী ভেদাভেদ নেই।
বাসের ভেতর দেখা যায় আরেক চিত্র। পেছনে দাঁড়ানোর জায়গা থাকা সত্ত্বেও সবাই মধুর চাকের মতো সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে পেছনের যাত্রীরা বাস থেকে নামার সময় রীতিমতো সংগ্রাম করে নামে। স্বপ্ন দেখি—আমাদের আর মুড়ির টিনে উঠতে হবে না, হতে হবে না বাদুড়ঝোলা।

No comments

Powered by Blogger.