ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন-রক্তাক্ত বাঘাইছড়ি

রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় বাঙালি-আদিবাসী সংঘর্ষ, বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ সহিংস ঘটনায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন বলে জনসংহতি সমিতি দাবি করেছে। নিহতদের সবাই আদিবাসী বলে জানা গেছে। একজন সেনাসদস্যসহ আহত হয়েছেন অনেকে।


পার্বত্য চট্টগ্রামে যখন পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার নানা উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে, তখন এ ধরনের রক্তাক্ত একটি ঘটনা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না।
জানা গেছে, ভূমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অজানা থাকার কথা নয়। এর পর কীভাবে পরিস্থিতি এত মারাত্মক আকার ধারণ করল, সেটি সত্যিই বড় প্রশ্ন। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই এর জবাব দিতে হবে। বিবদমান দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর সেনাসদস্যদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টিও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপারের ভাষ্য অনুযায়ী, ভূমি বিরোধের জের ধরে সেখানে আদিবাসী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কারা আক্রমণকারী ও কারা আক্রান্ত হয়েছেন, হতাহতের পরিচয় দেখে তা ধারণা করা কঠিন নয়। সংঘর্ষে কোনো বাঙালি মারা গেছেন বলে কেউ দাবি করেননি। যেসব বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগের মালিকও আদিবাসী। বাঘাইছড়ি সেনা অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেছেন, সন্ত্রাসীদের গুলির জবাবে জওয়ানেরা শুধু ফাঁকা গুলি ছুড়েছেন। ফাঁকা গুলিতে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
বাঘাইছড়িতে যে ঘটনা ঘটে গেছে, তার দায় স্থানীয় প্রশাসন কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। সেনাবাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নাতীত নয়। যেখানে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করা। বাস্তবে তেমন ঘটলে পরিস্থিতি এ পর্যায়ে যাওয়ার কথা নয়। বাঙালিদের মিছিল থেকে যখন আদিবাসীদের ওপর হামলা চালানো হলো, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যরা এগিয়ে এলেন না কেন? সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর সেখানে সাদা পোশাকে সেনাসদস্যই বা কেন গেলেন? সেনাসদস্যদের উপস্থিতিতে আদিবাসীদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিল কারা? উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাই বা সংঘর্ষ ঠেকাতে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? আদিবাসীদের ওপর প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে শুক্রবার। স্বভাবতই তাঁরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল সে ক্ষোভ প্রশমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
এ কথা সবাই স্বীকার করবেন, পাহাড়ে অশান্তির মূলে ভূমির মালিকানা বিরোধ। যত দ্রুত সম্ভব এ বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে হবে। বাঘাইছড়ির ঘটনাটিকে কোনোভাবে হালকা করে দেখা ঠিক হবে না। দুঃখজনক এ ঘটনায় যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা যাবে না। কিন্তু কাদের দায়িত্বহীনতায় এ ধরনের ঘটনা ঘটল, এ ক্ষেত্রে কোনো পক্ষের বাড়াবাড়ি বা উসকানি ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। যেকোনো মূল্যে বাঘাইছড়ির ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের অবিলম্বে পুনর্বাসনেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.