প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন

মানবিক মূল্যবোধ এখন প্রশ্নের মুখে। মানবতা মার খায় মানবেরই হাতে। মানবিক মূল্যবোধের এই ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা আগামী বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত হিসেবেই চিহ্নিত। মানুষ যে আত্মমর্যাদা নিয়ে টিকে থাকতে পারবে না, সে ইঙ্গিতই স্পষ্ট হয়ে উঠছে দিনের পর দিন। একই সঙ্গে শান্তিশৃঙ্খলাও হয়ে পড়বে অনিশ্চিত।


সেটা হবে ব্যক্তি, পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্র পর্যায়ে। সে আলামত সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে। এ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়ার পথ খোঁজা হচ্ছে না_তা নয়। কিন্তু সেই পথ অনুসন্ধানটা আজও ব্যাপক, এমন বলা যাবে না।
যখনই কোনো অঘটন ঘটে তা সমাধানের জন্য কিংবা প্রতিরোধের প্রয়োজনে প্রচলিত আইনের সহযোগিতায় এগিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অপরাধ যে-ই করুক তার শাস্তি বিধানই যেন একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। প্রচলিত আইনে বিচার করে সব অপরাধই হ্রাস করা যায়_এমন কিন্তু নয়। বিশেষ করে মূল্যবোধের অবক্ষয়জনিত কারণে যেসব অপরাধ ঘটে, সেগুলো নিরসন কিংবা প্রতিরোধের জন্য আইনানুগ বিচারের বাইরেও কিছু করণীয় আছে। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, আমাদের দেশে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করার জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করা হচ্ছে না। সে কারণেই সামাজিক অসহিষ্ণুতার মতো ক্ষতিকর পরিস্থিতিও আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। যার পরিণতি আমাদের যুবসমাজকেই কলঙ্কিত করছে।
অসহিষ্ণু তরুণদেরই বারবার আমাদের দেখতে হয়। আমরা দেখি, যে যুবসমাজ আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে নিয়োজিত থাকার কথা, তাদেরই একটি অংশ নিয়োজিত হচ্ছে খুন-খারাবির মতো ঘটনার সঙ্গে। কারণ হিসেবে যা দেখা যায়, সেগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে খুব কম ঘটনার পেছনেই হয়তো বড় কোনো বিষয় জড়িত থাকে। অতিনগণ্য কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানুষ হত্যার মতো ঘটনা ঘটাতে পারে কেবল চরম অসহিষ্ণু কোনো মানুষ। আর এই অসহিষ্ণু মানুষের পক্ষেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে সেখানে কোনো শিক্ষিকাকে খুন করে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব। যেমনটি ঘটেছে পাবনার আতাইকুলার ভায়নাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। যে শিক্ষিকা আগামী দিনের নাগরিক তৈরি করবেন, তাঁরই যদি পরিণতি হয় এমন নৃশংস খুন, তাহলে আগামী দিনের নাগরিকদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার পথ কি কণ্টকমুক্ত হবে? শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে কত বড় আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তা তৈরি হবে তা-ও ভাবনার বিষয়। বোঝা যাচ্ছে না এ খুনের পেছনে কী কারণ রয়েছে। তদন্ত শেষে যা-ই বেরিয়ে আসুক, আমাদের সামাজিক অশান্তি তৈরির জন্য এহেন ঘটনা যে বড় ভূমিকা পালন করে তা মনে করতে হবে।
পত্রিকার পাতায় একই দিন আরেকটি সংবাদ আমাদের মনকে নাড়া দেয়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের এক শিক্ষার্থী সহপাঠীকে প্রেম নিবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় তাকে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। এও অসহিষ্ণু সামাজিক অবস্থাকেই তুলে ধরে। ওই ছাত্র আত্মরক্ষার জন্য পালিয়ে গেছে। তার এই পালিয়ে যাওয়ার মতোই এ ধরনের দুরাচারের চিন্তাগুলোও যদি নির্বাসিত হতো, তাহলে আমাদের দিনগুলো হয়তো নিশ্চিন্ত হতো। এমন প্রত্যাশা আমরা করতে পারি। আর তার জন্য প্রয়োজন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সামাজিক অনুশাসন ও মানবিক মূল্যবোধে সমাজকে সমৃদ্ধ করা। সে জন্য প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলনের।

No comments

Powered by Blogger.