এসএসসিতে আকাশছোঁয়া সাফল্য-অগ্রগতির ধারা বজায় রাখতে হবে

আবারও রেকর্ড, আবারও বাঁধভাঙা সাফল্যের জোয়ার, আবারও শিক্ষাক্ষেত্রে দেখা গেল উজ্জ্বল চিত্র। গত ৭ মে প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে বিস্ময়কর সাফল্যের দ্যুতি ছড়িয়েছে শিক্ষার্থীরা। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সৃষ্টি হয়েছে নতুন রেকর্ড। শুধু পাসের হারই নয়, বেড়েছে জিপিএ ৫সহ সব ধরনের সূচকও।


একই সঙ্গে বেড়েছে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, কমেছে শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের দাখিল ও কারিগরি বোর্ডের এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষার ফলে যে বিস্ময়কর সাফল্যচিত্র ফুটে উঠল এ জন্য কৃতকার্যদের পাশাপাশি শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন।
অনেকের বিরোধিতার মুখে তিন বছর আগে যখন মাধ্যমিকে সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্নপত্র চালু হয়, তখন এ নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ঝড় তুললেও শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে এরই। মুখস্থবিদ্যা পরিহার করে সৃজনশীল পদ্ধতির ইতিবাচক প্রভাব ঈর্ষণীয়ভাবে লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এবার গড় পাসের হার ৮৬.৩৭ শতাংশ, যা গতবারের চেয়ে বেশি। তবে এককভাবে ৯১.৭৮ শতাংশ পাসের হার নিয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। এবার আরো একটি ইতিবাচক দিক লক্ষণীয় হলো, মফস্বলের স্কুলগুলো অতীতের চেয়ে ভালো ফল করেছে। শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের যে প্রচেষ্টা, বলা যায়, এরই ইতিবাচক দিক হলো এই বিস্ময়কর সাফল্য। শিক্ষাব্যবস্থার ওপর সবার যে মনোযোগ বেড়েছে এরও সাক্ষ্য মিলল এই ফলের মধ্য দিয়ে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবার সচেতনতাও বেড়েছে। নতুন প্রশ্ন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেড়েছে, এও প্রমাণিত হলো। যে নতুন আলোয় দেশকে আলোকিত করে লাখ লাখ শিক্ষার্থী জীবনের প্রথম ধাপ সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করল, তাদের পরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রমের সব পথ আরো মসৃণ করাই এখন গুরু দায়।
ইতিহাস সৃষ্টি করা এবারের এসএসসির ফল থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখা ও সূচক আরো ওপরে নিয়ে যাওয়ার নবতর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও মনিটরিংয়ের পাশাপাশি তাঁদের প্রতি সরকারকে আরো যত্নবান হতে হবে। যারা কৃতকার্য হলো, তাদের অগ্রগতি ও পরবর্তী ধাপ সাফল্যজনকভাবে অতিক্রমের সব রকম ব্যবস্থা মসৃণ করতেই হবে। এ কথা খুব স্পষ্ট করে বলা যায়, পরীক্ষার এ ফলের সঙ্গে শুধু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎই নয়, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, যাতে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে পারে প্রতিবন্ধকতাহীনভাবে, তা-ও নিশ্চিত করা চাই। কমাতে হবে ঝরে-পড়া শিক্ষার্থীর হার। বিজয় পতাকার ছায়াতলে আসুক সবাই।

No comments

Powered by Blogger.