এ বছর ডিসিসি নির্বাচন করা সম্ভব নয় by কাজী হাফিজ

চলতি বছরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হচ্ছে না। এ নির্বাচনের ওপর আদালতের তিন মাসের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করারও জোরালো কোনো ভিত্তি খুঁজে পাচ্ছেন না নির্বাচন কমিশনাররা। বরং দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতের রুলের যে জবাব নির্বাচন কমিশন (ইসি) দিতে যাচ্ছে তাতে আইন অনুসারে ডিসিসির সীমানা নির্ধারণ না করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকেই দায়ী করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।


নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগের কমিশন স্থানীয় সরকার বিভাগকে ডিসিসির সীমানা নির্ধারণের জন্য কয়েকবার তাগিদ দিয়েছিল বলে জেনেছি। এ কাজ করার দায়িত্বও স্থানীয় সরকার বিভাগের। এ বিষয়গুলো ইসির পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হতে পারে। ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়েও আমাদের সুবিধা-অসুবিধার কথাগুলো আদালতে উপস্থাপন করতে হবে। আশা করছি বুধবার (আজ) এসব বিষয়ে কমিশনের বৈঠক হবে। এ বৈঠকেই আদালতের রায় ও ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে আমাদের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ হতে পারে।'
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচন কমিশনার বলেন, যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তাতে এ বছর যে ডিসিসি নির্বাচন হচ্ছে না, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ নির্বাচন হবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদের যে সময়সূচি নির্ধারণ করে এ কাজ চলমান রাখা হয়েছে, জনবল সংকট এবং আরো কিছু সমস্যার কারণে তা পরিবর্তন সম্ভব নয়। ঢাকার ভোটার হালনাগাদের সময়সূচি রয়েছে আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর পরও খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ এবং তা চূড়ান্ত করার জন্য আরো সময় লাগবে। এর আগে জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণের কাজও সম্পন্ন হতে হবে। এসব কাজের পর ভোট গ্রহণের জন্য কমপক্ষে ৪০ দিন সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। সার্বিক এ অবস্থায় এ বছর ডিসিসি নির্বাচন সম্ভব হবে না।
ইসি সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গতকাল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বিষয়ে কমিশনের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক ছিল। ওই বৈঠকে ডিসিসি নির্বাচন স্থগিতে আদালতের আদেশের বিষয়ে বাদী পক্ষের 'আইনজীবী সনদ' নিয়ে আলোচনা হয়। এই আইনজীবী সনদে আদালতের আদেশ সম্পর্কে জানানো হয়েছে, গত ১৬ এপ্রিল একটি সংবাদপত্রে ২০০৯ সালের পর থেকে ডিসিসির ভোটার তালিকা হালনাগাদ না হওয়ায় পাঁচ লাখ যোগ্য নাগরিক ভোটার হতে পারেননি বলে জানানো হয়। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনকে আদালত এই নির্দেশনা দিচ্ছেন যে আইন অনুসারে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের পর ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। বৈঠকে আদালতের ওই নির্দেশনা ছাড়াও দুই সপ্তাহের মধ্যে যথাযথ বিধান অনুসরণ করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- এর জবাব দেওয়ার আদেশ নিয়েও আলোচনা হয়।
সূত্রে জানা যায়, আইনজীবী সনদে অবশ্য এই রুল জারির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। ইসি সচিবালয়ের আইন শাখা গণমাধ্যম ও তাদের নিযুক্ত আইনজীবীর কাছ থেকে বিষয়টি জেনেছে।
কমিশনের ওই বৈঠকে ডিসিসি নির্বাচনের কার্যক্রমের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ বাস্তবায়নেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ঢাকা দক্ষিণের সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. ফজলুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, গতকাল বিকেলেই ইসির ওই সিদ্ধান্ত অনুসারে ডিসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসাররা গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে নির্বাচন স্থগিতের বিষয়টি জানানোর ব্যবস্থা করেন।

No comments

Powered by Blogger.