রাজনীতির পরিবেশ পাল্টাল না by আতাউস সামাদ

১৯৭৫ সালের ২৫ অগাস্ট সকালে অণুবিজ্ঞানী স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার হাত ধরে দুই শিশুসন্তান কোলে করে এবং ছোটবোনকে পাশে নিয়ে শেখ হাসিনা যখন জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন তখন তাঁরা সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

তাঁদের সামনে এক সাগর অন্ধকার। প্রয়াত ড. ওয়াজেদ মিয়ার লেখা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ বইয়ে ওই অনিশ্চিত সময়ের বর্ণনা রয়েছে। সেনাবাহিনীর দুই কর্নেলের নেতৃত্বে একদল কর্মরত ও কয়েকজন চাকরিচ্যুত সামরিক অফিসার ১৫ অগাস্ট প্রত্যুষে তাঁর পিতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, শিশু রাসেলসহ তিন ভাই, দুই ভ্রাতৃবধূ ও এক চাচাকে হত্যা করেছে ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে। ওই সেনাদের আরও দুটি দল তাঁর ফুপা ও পানিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও ফুপাতো ভাই যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণির বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাঁদেরও হত্যা করেছে।
সেখানেও হামলাকারীদের হাতে নারী ও শিশুরা নিহত হয়েছে। অতঃপর তারা বাকশালের এক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের আদি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহকর্মী খোন্দকার মোশতাক আহমেদকে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত করে বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সেই দুঃসময়ে শোকে পাথর শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও ড. ওয়াজেদ মিয়া জানতেনও না যে, দিল্লিতে কোথায় উঠবেন, কোথায় থাকবেন। জীবনে আর কোনো দিন দেশে ফিরতে পারবেন কিনা সেই চিন্তা বোধহয় তখন তাঁদের মনে আসেওনি। তবে সব কিছু ছাপিয়ে বার বার সামনে এসেছে একটি জিজ্ঞাসা, ‘একী হলো? ক্ষমতা দখলের জন্য কেউ কী একটা পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলতে পারে?’
এরপর দিল্লিতে যে ছয় বছর ছিলেন শেখ হাসিনা তখন এসব নিয়ে অনেক ভেবেছেন, কিন্তু কোনো রাজনৈতিক বিবৃতি দেননি, কোনো সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেননি। তবে অনুমান করি যে, বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার একদিন না একদিন আদায় করবেন, সেই সংকল্পে ধীরে ধীরে দৃঢ় হয়েছেন। দেশের সঙ্গে ক্রমশ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলে প্রিয় দল আওয়ামী লীগের খোঁজখবর নিয়েছেন। অতঃপর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে চরম সঙ্কট দেখা দিলে বিবদমান নেতারাই শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনেন ১৯৮১ সালে। ঢাকায় এসেই শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করা হবে এবং এ দেশকে ‘জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা’ করে গড়ে তোলা হবে। এ দুই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যে যেতে হবে সে কথা তিনি এবং দলের সমর্থকরা স্পষ্টভাবেই বুঝতেন। তাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যুগপত্ভাবেই চলতে থাকে তাঁদের আন্দোলন ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ। সেনাশাসক জেনারেল এরশাদের শাসনামলে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার থাকলেও আওয়ামী লীগ ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাতে সর্ববৃহত্ বিরোধী দলের ভূমিকা অর্জন করে। বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল (এর আগে ১৯৭৯-তে রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়ার আমলে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। সেই সময় শেখ হাসিনা দলনেত্রী হননি। তখনও প্রধান বিরোধী দল হয় আওয়ামী লীগ)। ১৯৮৮ সালে বেশিরভাগ বিরোধী দলের সঙ্গে সংসদ নির্বাচন বয়কট করে রাজপথের সম্মিলিত আন্দোলনে ফিরে আসে আওয়ামী লীগ। তবে ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বিএনপি। এ দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী। অবশেষে ১৯৯৬ সালের জুন মাসের সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে কালবিলম্ব না করে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে উত্খাত ও হত্যা অভিযানের প্রধান নেতা কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ও তাঁর দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেন। ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ তারিখে পটপরিবর্তনের সঙ্গে জড়িতদের দায়মুক্তি দিয়ে যে অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল ক্ষমতা দখলকারীরা শেখ হাসিনা উদ্যোগ নিয়ে সেটাকে সংসদে বাতিল করান এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত ও বিচার শুরু করান। তিনি জেলহত্যা মামলার শুনানিও শুরু করান। তবে বিচারিক আদালতে ও হাইকোর্ট বিভাগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা শুনানি ও রায় শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে সম্পন্ন হলেও সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের প্রক্রিয়া পার হতে পারেনি তাঁর সেই মেয়াদে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারেনি, তবে তা করতে সমর্থ হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে। এবার প্রধানমন্ত্রীর পদের দায়িত্ব গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি সমাপ্ত করার আয়োজন সম্পন্ন করেন দ্রুততার সঙ্গে। আপিল ও রিভিউ প্রক্রিয়া সমাপ্ত হলে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ১২ আসামির মধ্যে কারাগারে আটক পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে ২৮ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে। ১৯৮১ থেকে ২০১০ এই ত্রিশ বছরে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন যে, তিনি অতিশয় ধৈর্যশীল, লক্ষ্য অর্জনে অদম্য ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, রাজনীতিতে কৌশলী এবং সুযোগের সদ্ব্যবহারে ক্ষিপ্র। এসব গুণাবলীর সফল প্রয়োগ করে শেখ হাসিনা তাঁর লক্ষ্যগুলোর মধ্যে দুটি অর্জন করেছেন। এগুলো হচ্ছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করে রায় কার্যকর করা। তবে তাঁর ঘোষিত লক্ষ্যের তৃতীয়টি, অর্থাত্ সোনার বাংলা এখনও গড়া হয়নি। এ কাজ বড় কাজ এবং দু’চার দিনে হওয়ার নয়। এতে সাফল্য পেতে শুধু যে বেশ কয়েক বছর লাগবে তাই নয়, এজন্য একদিকে যেমন দরকার নির্বাচিত শাসকদের প্রজ্ঞা ও পরিশ্রমের, অন্যদিকে তেমনি প্রয়োজন আছে কিছু ত্যাগ স্বীকার করার মতো সাহস আর ঔদার্যের। একটি দেশের নেতৃত্বের শেষের দুটি গুণ থাকা প্রয়োজন সেই দেশে ন্যায় বিচার, শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য। এ তিন না থাকলে দেশের উন্নতি হয় না। হয় অর্থনৈতিক অগ্রগতির নামে লুটপাট, বৈষম্য ও অশান্তি। অতএব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরীক্ষা এখনও শেষ হয়নি।
এ পর্যন্ত শেখ হাসিনা যে সাফল্য অর্জন করেছেন তার পেছনে আওয়ামী লীগ দলের অবদান কম নয়। ১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দলের সংসদ সদস্যদের সহায়তায় কয়েক মিনিটের মধ্যে সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনী পাস করিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি পদে উন্নত করে ও জাতির পিতা ঘোষণা করে বাংলাদেশের ওপর একদলীয় শাসন চাপিয়ে বাকশাল নামে যে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রীয় ফরমান বলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আওয়ামী লীগ অন্তত আনুষ্ঠানিকভাবে হলেও তাতে বিলীন হয়ে যায়। তবে ওই দলের লোকজনরা দেশজুড়ে ক্ষমতায় আসীন থাকেন। জেলা গভর্নর, বাকশালের জেলা সেক্রেটারি এবং অন্যান্য পদ লাভ করে। তাদের ক্ষমতাও ছিল বলতে গেলে নিরঙ্কুশ, কারণ বাকশালে কোনো দ্বিমতপোষণকারীর স্থান ছিল না। সংসদে থাকতে দেয়া হয়নি কোনো বিরোধী সদস্যকে আর দেশের সব সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করে অস্তিত্ব রাখা হয়েছিল মাত্র চারটি বশংবদ দৈনিক পত্রিকার। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সে বছর ১৫ অগাস্ট তারিখে দুঃখজনকভাবেই নিহত হলে সঙ্গে সঙ্গে বাকশালও ধ্বংস হয়ে যায়, থেকে যান আওয়ামী লীগের অসংখ্য অনুসারী ও ভক্ত। তাঁরা দলটিকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং সেটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখেন। একই সঙ্গে তারা চরম রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও দাবি তুলেছেন, ‘মুজিব হত্যার বিচার চাই’। সুযোগ ও সুবিধা পেলে যেমন ১৯৯২-তে যখন শহীদ জননী জাহানারা ইমামের উদ্যোগে ও নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি পুনর্জাগরিত হলো তখন আওয়ামী লীগ এই আন্দোলনকে সমর্থন দেয়ার সময় ‘মুজিব হত্যার বিচার’-এর দাবি সামনে নিয়ে এসেছে জোরদারভাবে। তাদেরই প্রবল প্রচারণার ফলে মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও দেশে আইনের শাসন কায়েম হওয়া সমার্থক এবং এটা হলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতে পারবে। অবশ্য আশাহত না হওয়ার জন্য এখানে মনে রাখা ভালো যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব হানাদার পাকিস্তানি সৈন্য যুদ্ধাপরাধ করেছিল বাংলাদেশ এখন আর তাদের বিচার করতে পারবে না, কারণ ১৯৭৪ সালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ সরকার তাঁরই উদ্যোগে তাদের ক্ষমা প্রদর্শন করে ভারতে অবস্থিত যুদ্ধবন্দি শিবির থেকে মুক্তমানব হিসেবে তাদের স্বদেশ পাকিস্তানে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত ছিল একান্তভাবেই তত্কালীন সরকার প্রধান ও সরকারের। এ সম্পর্কে হয়নি কোনো গণভোট, হয়নি জাতীয় সংসদে কোনো প্রাক আলোচনা।
সে যাই হোক, আমার বক্তব্য হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় কাতারের নেতারা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বহু বিপদ, বিপর্যয় ও সঙ্কটের মধ্যেও দলটিকে ধরে রেখেছেন আর সম্প্রতি তাদেরকে সমর্থন ও সহানুভূতি যুগিয়েছেন জনগণের একটা বৃহত্ অংশ। তাই জনসাধারণ খুব যুক্তিসঙ্গতভাবে আশা করতে পারে যে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ তাদের প্রতি কিছু কৃতজ্ঞতা দেখাবে, আর তা শুধু কথায় নয় কাজে-কর্মেও বটে, যার নমুনা এই এক বছরে তেমন দেখা যায়নি। এই নেতিবাচক দিকটির সবচেয়ে সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো যে, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হওয়ায় আওয়ামী লীগ যেদিন শোকরানা আদায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেদিনই দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্যরা ঢাকা ও কুষ্টিয়ায় নিজেদের কিছু স্বার্থ নিয়ে মারামারি ও বিশৃঙ্খলা করেছে। কিন্তু এভাবে যতই দিন যাবে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করবে। অন্যদিকে এখন তাদের কাছে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আর অগ্রাধিকার পাবার মতো প্রশ্ন থাকছে না, কারণ বিচার হয়েছে, রায় হয়েছে এবং রায় মোতাবেক বাংলাদেশে যে আসামিরা বন্দি ছিল তাদের মৃত্যুদণ্ড ফাঁসি দিয়ে কার্যকর করা হয়েছে। এবার জনগণের কাছে তাদের নিজস্ব সমস্যা জরুরি হয়ে সামনে আসবে। এখানে এও লক্ষণীয় যে, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পাঁচজন আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর বিভিন্ন রেডিও, টেলিভিশন ও খবরের কাগজের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে বেশিরভাগই বলেছেন, অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হবে—একথা প্রমাণিত হলো এবং আশা করা হবে যে, ভবিষ্যতে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে অর্থাত্ আইনের শাসন পাবে সবাই। কিন্তু বাস্তবে কী সেরকম পরিবেশ তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে? জনগণ এটা লক্ষ্য করবে, তবে বহুদিন ধরে দেখতেই থাকবে তা বোধহয় হবে না।
গত ২৮ জানুয়ারি বিবিসি থেকে ঢাকায় বেশ কয়েকজনের কাছে টেলিফোনে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, শেখ মুজিব হত্যা মামলার পাঁচ আসামির ফাঁসি হওয়ার পর এই অধ্যায়টি শেষ হলো কী। আমি বলেছিলাম যে, আমার তা মনে হয় না। কারণ প্রথমত, এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে যারা বিদেশে পলাতক আছেন সরকার এখন তাদের ধরে আনার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে ‘রক্তপিপাসু’ বলে থাকে—এরকম অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ চলতে থাকবে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ বিএনপিকে, বিশেষত ওই দলের প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানকে অভিহিত করে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের আশ্রয়দাতা ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে। এছাড়া পরবর্তীকালে আরও কিছু ঘটনার (যেমন একুশ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা) বিএনপি জড়িত বলে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে ও অভিযোগ করে। এভাবে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ চলতে থাকবে। আমি আরও বলেছিলাম (যা সময়াভাবে বিবিসি প্রচার করতে পারেনি) যে, বিএনপি মনে করে তাদেরকে ধ্বংস করার জন্যই আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন মামলায় জড়াচ্ছে। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তাঁর ভাষণে বিএনপিকে পিলখানায় বিডিআর সৈনিকদের দ্বারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ডের চক্রান্তে জড়িত থাকার দাবি করেছেন। যদিও প্রকাশিত একটি তথ্য হচ্ছে, বিডিআর বিদ্রোহীরা ২০০৮ সাল থেকেই কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। বিবিসিকে সেদিন উপসংহারে আমি বলেছিলাম (যা প্রচারও হয়েছে), ‘কাজেই, খুব তাড়াতাড়ি এই রক্তাক্ত অধ্যায়ের কথা মানুষকে ভুলতে দেয়া হবে না।’
বহির্বিশ্বও অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ এবং বিডিআর বিদ্রোহ, ২০০৯ সম্পর্কে আরও কিছু শুনতে থাকবে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, তারা যেহেতু বিশ্বের সর্বত্র মৃত্যুদণ্ড তুলে দেয়ার পক্ষে তাই তারা বাংলাদেশেও ফাঁসির মামলাগুলো, বিশেষ করে যেগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনা জড়িত সেগুলোর কী হয় তা পর্যবেক্ষণ করতে থাকবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রস্তাব সমর্থন করি। আমার মনে হয়, মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে বাস্তবিকভাবেই ‘আজীবন’ কারাদণ্ড শাস্তি প্রচলন করা উচিত।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

No comments

Powered by Blogger.