ঢাকা সিটি করপোরেশন-সেই প্রথাসিদ্ধ বাজেট

ঢাকা সিটি করপোরেশন বা ডিসিসির মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ভাগ্যবান বটে। ২০০২ সালে চারদলীয় জোট সরকারের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচনের পর মঙ্গলবার তিনি করপোরেশনের টানা দশম বাজেট পেশ করেছেন। এ সময়ে তার নিজের দল বিএনপির সরকার ছাড়াও দুই বছরের বিশেষ ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং আড়াই বছর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায়।


তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার সম্পর্কে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তিনি কারাগারের বাইরে থেকেই তা মোকাবেলার সুযোগ পান। তবে নিজের দলের মধ্যে সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিতি পেয়ে তিনি কিছু সময়ের জন্য শীর্ষ নেতৃত্বের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। এখন মেয়রের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি একই সঙ্গে বিএনপির রাজধানী কমিটির কর্ণধার। রেওয়াজ অনুযায়ী ভিন্ন দলের সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি ঘটেনি এবং বিস্ময় সৃষ্টি করেই টানা দশমবারের মতো একই মেয়র বাজেট উপস্থাপন করতে পেরেছেন। এটি মহাজোট সরকারের উদারতার প্রকাশ, নাকি স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটিতে জনমত গ্রহণের আয়োজন নিয়ে অন্য কোনো বিবেচনা কাজ করছে সেটা দুর্বোধ্য। যেমন দুর্বোধ্য আগামী বছরের জন্য এ সংস্থার বাজেট উপস্থাপনের ধরন। অতীতে এ উপলক্ষে সমাজের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মেয়র এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মতবিনিময়ের আয়োজন হতো। রাজধানীর সংস্থা হিসেবে এমনটিই হওয়ার কথা। এখানে সরকারের যেমন কেন্দ্র, তেমনি রাজনীতি-অর্থনীতি-সংস্কৃতিসহ নানা ক্ষেত্রেও দেশবাসী রাজধানী-মুখাপেক্ষী। কেবল ডিসিসি কাউন্সিলররা সরকারের কয়েকটি বিভাগের সহায়তায় আধুনিক নগরের বিকাশে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানে যথেষ্ট বলে ভাবার কারণ নেই। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দেওয়ারও অবকাশ নেই। কিন্তু এখন বাজেট উপস্থাপন নিতান্তই যেন রুটিনওয়ার্ক। ঢাকা সিটি করপোরেশনের জন্য ২ হাজার ৭১৫ কোটি টাকার এই বাজেট পেশ করতে গিয়ে মেয়র নিজেই যানজট, বিদ্যুৎ ও পানির অভাব, মশার উৎপাত, রাস্তার দুর্দশাসহ অনেক সমস্যার কথা বলেছেন। হয়তো ভিন্ন দলের সরকার দেশের ক্ষমতায় থাকার কারণে তিনি এসব বিষয়ে কিছুটা উচ্চকিত। কিন্তু এসবের সমাধানে তার কিংবা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তরফে বাজেটে বিশেষ কোনো উদ্যোগের কথা প্রকাশ পায়নি। রাজধানীকে আধুনিক ও পরিকল্পিত হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিকট ও দূর অতীতের অনেক মেয়রই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সরকারের কাছে বিভিন্ন সময়ে দাবি করা হয়েছে মেট্রোপলিটন কর্তৃপক্ষ গঠনের। বর্তমান মেয়র মঙ্গলবার বাজেট পেশ করার সময় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউকে আমলাদের প্রভাব কমিয়ে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে বলেছেন। তার অভিমত, জনপ্রতিনিধিরাই মহানগরকে বাসযোগ্য করার কাজে সত্যিকার দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারেন। কিন্তু ৫ বছরের জন্য নির্বাচিতরা টানা প্রায় এক দশক দায়িত্ব পালনকালে এমন অঙ্গীকার আদৌ জোরালো ছিল বলে কিন্তু প্রতীয়মান হয় না। নতুন বাজেটে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়েনি। নতুন করে কোনো কর আরোপ করা হয়নি। এটা কৃতিত্ব বলে দাবি করা যেতেই পারে। কিন্তু রাজধানীবাসীদের মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করার জন্য করের বোঝা প্রয়োজনমতো বাড়াতে আপত্তি কেন আসবে? সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত ভর্তুকি ও অনুদান অবশ্যই পেতে হবে। একই সঙ্গে নিজেদের আয় বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া চাই। আর সেবা নিশ্চিত এবং করপোরেশনের কাজে যুক্ত নির্বাচিত ও অনির্বাচিত সবার আন্তরিকতা পরিলক্ষিত হলে নাগরিকরাও পকেট থেকে বাড়তি কিছু অর্থ ব্যয় করায় অনুৎসাহী হবেন বলে মনে হয় না।
 

No comments

Powered by Blogger.