বুয়েটে অচলাবস্থা, ক্লাস বন্ধ-পদত্যাগ করবেন না উপাচার্য, পাল্টা সংবাদ সম্মেলন

শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ না করার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য এস এম নজরুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।


একই সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান বের করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষকদের ক্লাস শুরু করতে অনুরোধ জানান।
শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে বুয়েটের উপাচার্য বলেন, শিক্ষকেরা বাইরে পরামর্শকের কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস না নিয়ে বাইরে ক্লাস নিয়ে অর্থ উপার্জন করছেন। বুয়েটের সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছেন বাইরের কাজের জন্য। এসব সমস্যারও সমাধান করতে হবে। আর এ জন্য আলোচনায় বসতে হবে।
গত রোববার সংবাদ সম্মেলন করে বুয়েটের উপাচার্যের পদত্যাগ ছাড়া ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দেয় বুয়েট শিক্ষক সমিতি। গতকাল মঙ্গলবারও শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে বুয়েটে ক্লাস হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের আন্দোলনকে অযৌক্তিক দাবি করে উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার পদত্যাগ কোনো সমাধান নয়। এর আগেও অনেকে পদত্যাগ করেছেন, যার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়নি। যেহেতু শিক্ষকদের দাবিসমূহ যৌক্তিক নয়, তাই আমার পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘পদত্যাগ করলে সিন্ডিকেটের চেয়ারম্যান হিসেবে শুধু আমি নই, সিন্ডিকেটের সবার পদত্যাগ করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ১৬টি অভিযোগ খণ্ডন করে সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া সরকারের কাজ। সরকার কাকে নিয়োগ দেবে, তা তারাই জানে। এখানে নিয়োগ প্রাপ্তদের কিছু করার নেই।’
অধ্যাপক নজরুল বলেন, ‘বুয়েটে উপাচার্য রাজনৈতিক নিয়োগ দিচ্ছেন—এটা ঠিক নয়। কারণ, নিয়োগ কমিটিতে উপাচার্য নেই। যেসব শিক্ষক কমিটিতে আছেন, তাঁরাই নিয়োগ দিয়ে থাকেন।’
পরীক্ষার ফল জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘ভুল হতে পারে এবং তা একাডেমিক কাউন্সিলে সংশোধন করা হয়। ভুল সংশোধন করার নিয়ম ও রীতি বুয়েটে বিদ্যমান।’
বুয়েটের বর্তমান উপাচার্য নজরুল ইসলাম ও সহ-উপাচার্য হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন করে ভূতাপেক্ষ নিয়োগ দেওয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদ বুয়েট শাখার সভাপতি ও উপরেজিস্ট্রার কামাল উদ্দীনকে রেজিস্ট্রার করার উদ্যোগ এবং শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশাসনের বিভিন্ন পদে দলীয়করণসহ ১৬টি অভিযোগ এনে গত ৭ এপ্রিল থেকে আন্দোলন করছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহ-উপাচার্যের পদটি বিলুপ্তির দাবি জানানো হয়েছে সমিতির পক্ষ থেকে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য এবং শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে উভয় পক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দেওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে।
বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান প্রশাসনের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। শিক্ষকদের বাইরে কাজ করা বিষয়ে উপাচার্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের মধ্যে থেকেই শিক্ষকেরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন এবং পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন।

No comments

Powered by Blogger.