সাক্ষাৎকার-উদ্যোক্তারা পরিবেশ সংরক্ষণেও এগিয়ে আসুন by ড. হাছান মাহমুদ

সাক্ষাৎকার গ্রহণ :আলতাব হোসেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি এর আগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে অনার্স ও ১৯৮৯ সালে মাস্টার ডিগ্রি অর্জনের পর ব্রাসেলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে পরিবেশ বিজ্ঞানে পোস্ট


গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ব্রাসেলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. হাছান ২০০১ সালে বেলজিয়ামের লিমবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'পরিবেশ রসায়নে' পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি চট্টগ্রাম সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতির প্লাটফর্মে প্রবেশ করেন। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির পদ লাভ করেন। ২০০১ সালে ড. হাছান আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিশেষ সহকারী নিযুক্ত হন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন


সমকাল : পরিবেশ মন্ত্রণালয় দুই দশক পার করেছে। পরিবেশ সুরক্ষায় এর অর্জন কী?
হাছান মাহমুদ : জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ইধহমষধফবংয ঈষরসধঃব ঈযধহমব ঝঃৎধঃবমু ধহফ অপঃরড়হ চষধহ (ইঈঈঝঅচ) ২০০৯ প্রণয়নের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় বর্তমান সরকারের জোরালো প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেছে। বিশ্বের প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে ঝঃৎধঃবমু ধহফ অপঃরড়হ চষধহ প্রণয়নে এগিয়ে থাকায় বিশ্ব দরবারে প্রশংসা অর্জন করেছে। নতুন আইন প্রণয়ন ও বিদ্যমান আইনের আধুনিকায়নের মাধ্যমে বর্তমান সরকার দেশের পরিবেশের সুষ্ঠু সংরক্ষণের লক্ষ্যে দেশে নীতি ও আইনগত ভিত্তি সৃষ্টি করেছে। পাহাড় কাটা, জলাধার ভরাট, জাহাজ ভাঙার কারণে সৃষ্ট দূষণ, ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য উৎপাদন, আমদানি, মজুদকরণ, পরিবহন ইত্যাদি সম্পর্কিত বাধানিষেধ আরোপ করে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ সংশোধন করে পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন ২০১০ নামে একটি নতুন আইন প্রণয়ন ও জারি করা হয়েছে। সব জেলায় পরিবেশ আদালত ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্থাপন করাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নতুন বিধান রেখে পরিবেশ আদালত আইন, ২০০০ সংশোধন করে বাংলদেশ পরিবেশ আদালত আইন ২০১০ জারি করা হয়েছে। সংশোধিত আইনে দূষণকারী শিল্পকারখানার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এ আইনে জলাধার ভরাট, পাহাড় কাটা রোধ, জাহাজ ভাঙার বর্জ্যসহ কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে পরিবেশ নীতি ২০১১, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১১, ইলেকট্রনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১১, জীববৈচিত্র্য আইন ২০১১, ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা ২০১১, দুর্গন্ধ নিরোধ বিধিমালা, ২০১১ প্রণয়নের কার্যক্রম চলছে। সব জেলায় পরিবেশ অধিদফতরের অবকাঠামো সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ২১টি জেলায় পরিবেশ অধিদফতরের অফিস স্থাপন করা হয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলায় পর্যায়ক্রমে পরিবেশ আদালত ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্থাপন করা হবে।
সমকাল : আমরা দেখছি, ঢাকঢোল পিটিয়ে নিষিদ্ধ করার পরও বাজারে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না।
হাছান মাহমুদ : নিষিদ্ধকৃত পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহার বন্ধ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের উদ্যোগে প্রতি সপ্তাহে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নিষিদ্ধকৃত পলিথিন শপিং ব্যাগের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং আর্থিক জরিমানাসহ পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতর গত আড়াই বছরে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩৮ দিন অভিযান পরিচালনা করে প্রায় দেড় লাখ কেজি অবৈধ পলিথিন উদ্ধার ও প্রায় ৫২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। এরপরও চানাচুর, চিপসসহ বিভিন্ন প্যাকেটে পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সমকাল : রাজধানীর চারপাশের চার নদী রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ কত দূর?
হাছান মাহমুদ : পরিবেশ দূষণ রোধকল্পে ঢাকা শহরের চারপাশে অবস্থিত নদীগুলো বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার তীরবর্তী স্থানগুলোকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে একাধিক নদী থেকে বর্জ্য উত্তোলন করা হচ্ছে। ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বুড়িগঙ্গার পলিথিন ওঠানো হচ্ছে। ফলে এসব নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা পরিবেশ অধিদফতর প্রতিনিয়ত মনিটর করছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে বুড়িগঙ্গার পাড় দিয়ে নাকে রুমাল চেপে যেতে হবে না। যমুনা থেকে পানি এনে বুড়িগঙ্গার দূষণ কমাতে পানি ফ্লাশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১২শ' কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প ইতিমধ্যে একনেকে পাস হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের অন্যান্য নদীও খননসহ পানির প্রবাহ বাড়ানো হচ্ছে। ঢাকার চারপাশের নৌপথ চালু করা হয়েছে। এতে প্রতিদিন ১০ হাজার টন পণ্য পরিবহন হচ্ছে। নৌপথ চালু না থাকলে এসব পণ্য পরিবহনে প্রায় এক হাজার ট্রাক রাজধানীর ওপর দিয়ে চলাচল করত। এ কারণেই যানজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করত।
সমকাল : সামগ্রিকভাবেও তো পরিবেশ দূষণ বেড়ে চলছে দেখছি।
হাছান মাহমুদ : বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রতিবছর ৬ শতাংশ করে বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, বেড়েছে শিক্ষার হার। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনেকেই দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের পরিবেশগত সমস্যাও বাড়ছে আনুপাতিক হারে। দেশে বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, মাটিদূষণ, শব্দদূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ওপর জনগণের প্রত্যাশা বহুগুণে বেড়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ পরিবেশ দূষণের অভিযোগ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আসছেন। তাদের অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে_ শিল্প কারখানার বর্জ্যের বিরুদ্ধে, ইটভাটা সৃষ্ট দূষণের বিরুদ্ধে, আবাসিক ও অনাবাসিক এলাকা, যেখানে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল আছে, সেখানে শব্দদূষণের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে জলাশয় ভরাট ও পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে আমরা পরিবেশ অধিদফতরের অধীনে মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম জোরদার করেছি। বর্তমান সরকার প্রথমবারের মতো পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী পরিবেশ দূষণকারী বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য স্থাপনার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ আদায় করেছি। শিল্প কলকারখানাকে জরিমানা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা চাই তারা অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণেও এগিয়ে আসবেন।
সমকাল : বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষায় শক্তিশালী নাগরিক আন্দোলন রয়েছে। তাদের সঙ্গে সরকার কীভাবে কাজ করছে?
হাছান মাহমুদ : পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গণসম্পৃক্ততা এবং সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদফতর পার্টনারশিপ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। পরিবেশ সংরক্ষণে যারা কাজ করছে, তাদের তিরস্কার না করে পুরস্কৃত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেলা, পরিবেশ আন্দোলন বাপাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তাদের মতামত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সিভিল সোসাইটিকে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এক নম্বরে রয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। দেশে একটি পরিবেশ সংবেদনশীল প্রজন্ম সৃষ্টির প্রত্যয় নিয়ে ইউনেস্কোর আর্থিক সহায়তায় চৎড়সড়ঃরড়হ ড়ভ ঊহারৎড়হসবহঃধষ অধিৎবহবংং ধসড়হম ঝপযড়ড়ষ ঈযরষফৎবহ ঃযৎড়ঁময এৎববহ ঈষঁন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর ৬টি স্কুলে গ্রিন ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতর প্রতি মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার মিট দ্য পিপল প্রোগ্রাম আয়োজন করছে। এটি পরিবেশ সংশ্লিষ্ট অভিযোগ শুনানি এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে জনসাধারণ ও সুধী সমাজের পরামর্শ গ্রহণের জন্য আমাদের গণমুখী একটি কর্মসূচি।
সমকাল : সম্প্রতি সামাজিক বনায়ন নিয়ে নতুন করে পক্ষে-বিপক্ষে কথাবার্তা হচ্ছে। এ সম্পর্কে বলুন।
হাছান মাহমুদ : বনজ সম্পদের উন্নয়নেও একইভাবে কাজ করে যাচ্ছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। চলমান সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এ কর্মসূচির আওতায় দেশের অব্যবহৃত সরকারি জমিতে বনায়নের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট নিয়মে নবায়নযোগ্য এ সম্পদ থেকে ইতিমধ্যে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে রোপিত পরিপকস্ফ গাছ আহরণ করে ৮৮ হাজার উপকারভোগীর মধ্যে ১৫৩ কোটি টাকার লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়েছে। ৩৩ কোটি টাকার ট্রি ফার্মিং ফান্ড গঠিত হয়েছে এবং ১৫৩ কোটি টাকার রাজস্ব অর্জিত হয়েছে। সামাজিক বনায়নের সফলতা দেশের মানুষকে বৃক্ষরোপণে আরও বেশি আগ্রহী করে তুলছে। প্রায় পাঁচ লাখ উপকারভোগী সামাজিক বনায়নের অংশীদার হয়েছে।
সমকাল : বন সুরক্ষা ও সৃজনের ক্ষেত্রে দেশে আইনি ব্যবস্থা মন্দ নয়; কিন্তু প্রয়োগ হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাছান মাহমুদ : পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আইনকানুন, বিধি এবং নীতিমালা প্রণয়নে বাংলাদেশে একটি মজবুত কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকার ১৯৯২ সালে পরিবেশ নীতি, ১৯৯৫ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৭ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা এবং ২০০০ সালে পরিবেশ আদালত আইন বলবৎ করে। ২০১০ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-কে সংশোধনপূর্বক হালনাগাদ করা হয়েছে। পরিবেশ আদালত আইন ২০১০ জারি করে পরিবেশ অধিদফতরের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণকারী যে কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার অধিকার জনগণের কাছে অর্পণ করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বনজ সম্পদ সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে জাতীয় বননীতি জারি করে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে সামাজিক বনায়ন বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে। বন আইন ১৯২৭-কে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
সমকাল : বন থেকে কাঠ চুরি বন্ধে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন?
হাছান মাহমুদ : মধুপুরে একসময় যারা বনের কাঠ চুরি করত, এখন তারাই বন পাহারা দিচ্ছে। চট্টগ্রামের চনিয়ায় বনের কাঠ রক্ষায় সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন একজন। দুর্নীতি কমলেও মাঠপর্যায়ে হচ্ছে। দুর্নীতি বন্ধে মনিটরিং বাড়ানো হচ্ছে। আমগাছকে জাতীয় বৃক্ষ করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের গাছ কাটতে অনুমতি নিতে হচ্ছে। গাছ চুরি বন্ধে স্যাটেলাইট পাহারা বসানো হচ্ছে।
সমকাল : জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এ ইস্যুতে আমরা কীভাবে কাজ করছি?
হাছান মাহমুদ : দেশের পরিবেশ রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এসেছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। মেক্সিকোর কানকুনে অনুষ্ঠিত ১৬তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছে। সম্মেলনে অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও সমতা বৃদ্ধির বিষয়ে সব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে সমঝোতার উপায় বের করার জন্য বাংলাদেশের পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ও অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশমন্ত্রীকে সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট (মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী) পেট্রিসিয়া স্পিনোসা বিশেষ দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। বাংলাদেশ ও সুইডেন গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের কো-চেয়ার মনোনীত হয়েছে। এসবিআইসহ চারটি কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী না হলেও ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে আমরা শীর্ষে। বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের অবস্থান তুলে ধরতে পেরেছি। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশ শুধু নিজের দেশ নয়, উন্নয়নশীল দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
সমকাল : জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড সম্পর্কে কিছু বলুন।
হাছান মাহমুদ : জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড আইন ২০১০ পাস করা হয়েছে। ইধহমষধফবংয ঈষরসধঃব ঈযধহমব ঞৎঁংঃ ঋঁহফ-এর অধীনে বাংলাদেশ সরকারেরর নিজস্ব অর্থায়নে গত দুই অর্থবছরে মোট প্রায় ১৪শ' কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই অর্থের মধ্যে ৬৬ শতাংশ অর্থাৎ ৯২৪ কোটি টাকা দিয়ে ইতিমধ্যে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৫৮০ কোটি টাকায় বাস্তবায়নযোগ্য ৫০টি সরকারি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। ইধহমষধফবংয ঈষরসধঃব ঈযধহমব জবংরষরবহপব ঋঁহফ (ইঈঈজঋ)-এর অধীনে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান পাওয়া গেছে। ইউকে আরও ৭৫ মিলিয়ন ডলার দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইঈঈজঋ-এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে অপারেশনাল ম্যানুয়াল চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং এ জন্য একটি গভর্নিং কাউন্সিল ও ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইঈঈজঋ-এর অর্থায়নে মার্কিন ডলার ২৫ মিলিয়ন সমমূল্যের ঈুপষড়হব ঝযবষঃবৎ স্থাপনের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এ ছাড়া জলবায়ুসহিষ্ণু কৃষি উৎপাদন পদ্ধতি সম্প্রসারণ ও উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজ বেষ্টনী তৈরির জন্য ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের দুটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।
সমকাল : জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড নিয়ে অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
হাছান মাহমুদ : এ ফান্ডের অধীনে প্রকল্প চেয়ে প্রথমবারের মতো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এতে সাড়ে চার হাজার আবেদন পড়ে। পরে ৬টি কমিটি তা যাচাই-বাছাই করে টেকনিক্যাল কমিটিতে নীতিগত অনুমোদন দেয়। কিন্তু ১০ জন মন্ত্রী, বুয়েটের সাবেক উপাচার্য ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান নিয়ে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড তা বাতিল করে দেয়। অথচ কিছু মিডিয়া মায়ের গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায় সন্তানের দোষত্রুটি খোঁজার মতো করে রিপোর্ট করেছে। এ ক্ষেত্রে কিছু এনজিও ফান্ড না পেয়ে অপপ্রচার করেছে। বর্তমানে এ ফান্ডের জন্য মনোনীত এনজিওগুলোর সম্পর্কে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে মতামত আনা হয়েছে। পুরো বিষয়টি তৃতীয় পক্ষ হিসেবে পিকেএসএফ মনিটর করছে। আশা করি এবার এ বিষয়ে সবার ভুল ভাঙবে।
সমকাল : ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
হাছান মাহমুদ : সমকাল পরিবারকে ধন্যবাদ।
 

No comments

Powered by Blogger.