রেলমন্ত্রীর বিদায়-স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত চার দশক ধরে ছিলেন নক্ষত্রের মতো। স্পষ্টভাষী, কৌতুকপ্রিয় ও দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে স্বীকৃতি ছিল সর্বমহলে। স্বীয় সহকারী একান্ত সচিবের গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধারের পরপরই রেলমন্ত্রী হিসেবে তার যে ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে,


রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা শুধু নন, সাধারণ মানুষও সে বিষয়ে কমবেশি একমত ছিলেন। তিনি নিঃসঙ্গতার কথা বলেছেন এবং তা যথার্থ। আর এ জন্য প্রধান দায় তো তাকেই গ্রহণ করতে হবে। এমন একটি ঘটনায় তাকে রেলমন্ত্রী হিসেবে বিদায় নিতে হয়েছে। গতকাল রাতে তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এ আর এক নাটকীয় ঘটনা_ বলা যায় অ্যান্টি ক্লাইমেক্স। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঘটনা ঘটেছে ৯ এপ্রিল রাতে এবং তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন ১৬ এপ্রিল দুপুরে। এ সময়ের মধ্যে প্রচুর পানি ঘোলা হয়েছে এবং তাতে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি রেলমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন স্বেচ্ছায় নাকি প্রবল অনিচ্ছায় চাপে পড়ে, সে বিতর্ক মুখ্য বিষয় নয়। এমনও নয় যে, তার বিদায়েই রেলওয়ে খাতের যাবতীয় দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর হয়ে যাবে। তিনি মাত্র সাড়ে চার মাস নবগঠিত রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন এবং এ সময়ে স্থবির হয়ে পড়া রেলগাড়ি একটু একটু যেন গতি পেতে শুরু করছিল। তবে ভেতর থেকে কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল প্রচুর বাধা সৃষ্টি করছিল, যাকে তিনিই অভিহিত করেছিলেন 'কালো বিড়াল' হিসেবে। আমরা আশা করব, রেলমন্ত্রীর বিদায়েই যেন এ ঘটনার ইতি না ঘটে, বরং যোগাযোগের এ গুরুত্বপূর্ণ খাতে দশকের পর দশক ধরে চলা পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির মূলোচ্ছেদের জন্য শুরু হোক উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত। এ খাতে নিয়োগ-বাণিজ্য এখন মুখরোচক আলোচনার বিষয়। প্রচুর মূল্যবান জমি বেহাত হয়ে আছে। গাড়িচালকের 'নিখোঁজ রহস্যও' দ্রুত উন্মোচন হওয়া চাই। বিচার বিভাগীয় তদন্তে জটিলতা মনে করা হলে সরকার সব মহলের আস্থাভাজন এক বা একাধিক ব্যক্তিকে দিয়ে এটা করতে পারে। মূল কথা হচ্ছে, কোনো গাফিলতি করা চলবে না। কাউকে ছাড় দেওয়া চলবে না। মহাজোট সরকারকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এ ঘটনায় গণমানুষের আস্থায় কিছুটা চিড় ধরেছে। এখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নামে অভিযোগ উঠলে সেটাও বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে। এর বিপরীতটিও ঘটতে পারে, যা সরকারের ভাবমূর্তি বাড়াবে। রেলমন্ত্রীর পদত্যাগকে সব মহল সঠিক সিদ্ধান্ত হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দেওয়া হলে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন থাকার অঙ্গীকার যথার্থ মনে হবে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যদি এ প্রক্রিয়ায় 'নির্দোষ' হিসেবে বের হয়ে আসতে পারেন, দেশবাসী তাকে সাধুবাদ জানাবে। প্রকৃতই এমনটি ঘটলে তার চেয়ে ভালো খবর আর কিছুই হবে না। তবে এ জন্য স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া চালাতে হলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.