বিমানের আকাশে কালো মেঘ-সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ প্রয়োজন

আবারও নতুন এক সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে বিমান। শুধু বিমান নয়, এবার সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের জন্য রয়েছে অশনিসংকেত। আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সংক্রান্ত জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা আইকাও বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করে ফেলতে পারে।


তেমনটি ঘটলে বাংলাদেশের কোনো উড়োজাহাজ যেমন বিদেশের কোনো বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে না, তেমনি অন্য দেশের উড়োজাহাজও বাংলাদেশে আসতে পারবে না; এমনকি বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে বাংলাদেশের যেসব পাইলট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উড়োজাহাজ চালাচ্ছেন, তাঁদেরও চাকরিচ্যুতির আশঙ্কা দেখা দেবে। ওদিকে চালু করা যাচ্ছে না বিমানের নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট। উড়োজাহাজের ঘাটতির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা উদ্বেগ বা এসএসসির তালিকায় থাকাটাও নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালু করতে না পারার অন্যতম কারণ।
বিমানের পৃথিবী ছোট হয়ে আসতে শুরু করে অনেক আগে থেকেই। একের পর এক বন্ধ হয়ে যেতে থাকে বিমানের ফ্লাইট। আগে বিশ্বের অনেক দেশেই ফ্লাইট পরিচালনা করত বিমান। আন্তর্জাতিক ২৬টি রুটের মধ্যে এখন চালু আছে ১৮টি। বন্ধ হয়ে গেছে নিউ ইয়র্ক, ম্যানচেস্টার, ব্রাসেলস, ফ্রাঙ্কফুর্ট, প্যারিস, নারিতা, ইয়াঙ্গুন ও মুম্বাই ফ্লাইট। এসব রুটে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার মূল কারণ উড়োজাহাজ সংকট। পাশাপাশি রয়েছে ক্রমাগত লোকসান গুনে যাওয়া। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে নতুন শর্ত। যুক্তরাষ্ট্রে যেতে হলে বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশনকে ক্যাটাগরি-১ হতে হবে। ক্যাটাগরি-১ হতে হলে বাংলাদেশকে সিগনিফিক্যান্ট সিকিউরিটি কনসার্নের (এসএসসি) শর্ত পূরণ করতে হবে। এরপর আসবে ক্যাটাগরি-২ থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টি। কিন্তু বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এসএসসির শর্তপূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় আইকাওয়ের কালো তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কারণে বিলম্বিত হচ্ছে বাস্তবায়ন। কালো তালিকা থেকে মুক্ত হতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নের কচ্ছপগতিই এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পথে বড় বাধা বলে মনে করা হচ্ছে। আইকাওয়ের এই কালো তালিকায় রয়েছে বিশ্বের ১৯২টি সদস্য দেশের মধ্যে আটটি। এই আটটি দেশের ছয়টি আফ্রিকার। অন্য দুটি দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ ও নেপাল। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, আইকাওয়ের চাহিদা মোতাবেক কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে নেপাল এ তালিকা থেকে বের হয়ে গেলেও বাংলাদেশ কালো তালিকা থেকে বেরোতে পারেনি। অথচ হাতে সময় আছে আগামী জুন মাস পর্যন্ত। এর মধ্যে শর্ত পূরণ না হলে বাংলাদেশের জন্য সমূহ বিপদ।
আইকাওয়ের শর্ত অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ে আধুনিকায়ন ও শক্তিশালী করা যায়নি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে নিরাপত্তা। নিরাপত্তার প্রশ্নে আইকাও আপসহীন। দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা আশানুরূপ নয়। নিরাপত্তার জন্য আধুনিক কার্গো-স্ক্যানার না থাকার জন্য অনেক বিদেশি বিমান সংস্থা এখানে তাদের কার্গো বহন করে না। এমনকি এয়ার ইন্ডিয়াও নিরাপত্তার প্রশ্নে কার্গো পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। এর পরও আন্তর্জাতিক মানের স্ক্যানার বসাতে বাধা দিচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। আবার এসএসসির তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়ে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ২৫ বছরের পুরনো বিমান ব্যবহার করতে চায়। এর নেপথ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের হাত আছে বলে অনুমান করা যেতে পারে। অভিযোগ রয়েছে, নিরাপত্তার প্রশ্নে বাংলাদেশে নিজেদের তৈরি আইনই ঠিকমতো মেনে চলা হয় না।
'আকাশে শান্তির নীড়' বিমানকে আকাশে উড়তে দিতে হবে। বাংলাদেশের উড়োজাহাজ যেমন বিদেশে যাবে, তেমনি বিদেশের উড়োজাহাজ যাতে বাংলাদেশে আসে, তার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে হবে। সমস্যা শুধু গতির। সেখানেই জটিলতার শুরু। নিজেদের জটিলতা নিজেরা দূর করতে না পারলে দেশের জন্য সেটা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। যেকোনো মূল্যে আইকাওয়ের কালো তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের সম্মান এর ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে। বিমানের আকাশ থেকে আশঙ্কার সব কালো মেঘ সরিয়ে দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.