রাজধানীকে বাসযোগ্য রাখার উদ্যোগ কই?-তপ্ত শহর ঢাকা

সামনের দিনগুলোতে রাজধানী ঢাকা আর বাসযোগ্য থাকবে কি না, সে প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। দেশের যেকোনো স্থানের তুলনায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার বেশি। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, যেসব কারণে এই তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে, তা অব্যাহত থাকলেও প্রতিকারের উদ্যোগ বা পরিকল্পনা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।


বলা যায়, পরিকল্পনাহীনতার এক চূড়ান্ত উদাহরণ হচ্ছে রাজধানী ঢাকা। শহরটিতে ভবিষ্যতে মানুষ থাকতে পারবে কি না, সেটা সম্ভবত নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় নেই। ১৯৮৯ সালে যেখানে ঢাকার জলাভূমির পরিমাণ ছিল মোট ভূমির ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ, সেখানে এখন জলাভূমির পরিমাণ মোট ভূমির মাত্র ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক সমীক্ষায় এসব নানা তথ্য বের হয়ে এসেছে। যাঁরা দেশ ও সরকার পরিচালনা করেন, সেই নীতিনির্ধারকেরা কতটা অদূরদর্শী, তা আমরা সহজেই অনুমান করতে পারছি।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকায় এমন আটটি অঞ্চল তৈরি হয়েছে যেখানে দিনে জমা হওয়া তাপ রাতেও থেকে যাচ্ছে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির মূল কারণ জলাশয় ও সবুজ অঞ্চল বা গাছগাছালি কমে যাওয়া এবং অপরিকল্পিত স্থাপনা। এসব কারণে তাপমাত্রা যে হারে বেড়েছে ও বাড়ছে, তা নগরবাসীর কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আবার এসি ও বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। প্রকৃতি ধ্বংস করার কারণে একদিকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে এই অসহনীয় তাপমাত্রা সামাল দিতে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো এবং এর ফলে তাপমাত্রা আরও বেড়ে যাওয়া—সবকিছু মিলিয়ে এক চক্রের মধ্যে পড়ে গেছে ঢাকা শহর।
এই অবস্থা থেকে ঢাকা শহরকে রক্ষা ও বাসযোগ্য রাখতে হলে মোটাদাগে যে উদ্যোগগুলো নেওয়া প্রয়োজন, তা সরকার বা নীতিনির্ধারকদের অজানা নয়। রাজধানীর জলাভূমিগুলো রক্ষা করা, গাছগাছালি রক্ষা করা, প্রয়োজনে নতুন করে সবুজ অঞ্চল সৃষ্টি করার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। ঢাকার জন্য একটি বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকাকে বাঁচাতে এর বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়লেও নানা স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে এর বাস্তবায়ন ঠেকে রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই মহলের কাছে জিম্মি হয়ে সরকার কি ঢাকা শহরকে বসবাসের অনুপযুক্ত একটি নগরে পরিণত করবে?
আরও কিছু বিষয়ের প্রতি সরকারের নজর কামনা করছি। ভবন নকশার বিষয়টি জরুরি। আমাদের দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যবহার করা হয় বাড়িঘরে। অথচ উন্নত বিশ্বে খরচ হয় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। ভবনের নকশায় পরিবর্তন এনে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়। তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লে ঢাকা শহরে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে যায়। সবুজায়ন ও নগরের জলাশয় রক্ষা করে আমরা যদি ঢাকা শহরে তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি কমাতে পারি, তবে বিদ্যুতের ব্যবহার ও চাহিদা অনেক কমে যাবে।
ঢাকাকে রক্ষায় সরকারের তরফে আমরা একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রত্যাশা করছি।

No comments

Powered by Blogger.