নগরে পানি সংকট-স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ চাই

গৃহস্থালি পানির দাবিতে রাজধানীর তেজকুনীপাড়ার বাসিন্দারা সোমবার বিজয় সরণিতে সড়ক অবরোধ করে যে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন, সৌভাগ্যবশত তা বেশিদূর গড়ায়নি। কিন্তু তাই বলে স্বস্তিতে থাকার অবকাশ নেই। সংশ্লিষ্টরা একে ওয়েক আপ কল হিসেবে গ্রহণ করলে সবার জন্যই মঙ্গল।


আমাদের মনে আছে, এ ধরনের একটি আপাত তুচ্ছ ঘটনাই ২০০৬ সালে যাত্রাবাড়ীতে স্থানীয় সাংসদ ও ক্ষমতাসীন দলের জন্য বড় অঘটনের কারণ হয়েছিল। অবশ্য স্বীকার করতে হবে যে, বর্তমান সরকার ঢাকা মহানগরীর পানি সংকট মোকাবেলায় নজর দিয়েছে। পানি ও জনস্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাজেটের বড় অংশই ব্যয় করা হয়েছে নতুন গভীর নলকূপ স্থাপন, অকেজোগুলো মেরামত এবং পানি সরবরাহ সংশ্লিষ্ট সব স্থাপনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখায়। এতে করে গ্রামীণ এলাকায় আর্সেনিক দূষণ মোকাবেলা কিংবা লবণাক্ততা দূর করার মতো কর্মসূচিগুলো খানিকটা ব্যাহত হলেও রাজধানীর পানি পরিস্থিতিতে উন্নয়ন হয়েছে, তা স্বীকার করতে হবে। তবে গত বছরও শুকনো মৌসুমের শুরুতে কয়েকটি এলাকায় পানি সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছিল। তারপরও কিছু এলাকার পরিস্থিতি যে উন্নত হয়নি, সোমবারের বিক্ষোভ তার প্রমাণ। আশা করব, কর্তৃপক্ষ তেজকুনীপাড়াসহ পানি সংকটের শিকার অন্যান্য এলাকার দিকে বিশেষ নজর দেবে। নলকূপ বসানোর জায়গা সংকটের কথা স্থানীয় সংসদ সদস্য সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন। তবে তা বড় সমস্যা হতে পারে না। জনস্বার্থের প্রশ্ন যেখানে জড়িত, কোনো প্রতিবন্ধকতাই স্থায়ী হওয়া উচিত নয়। ঢাকার পাশাপাশি দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামের কথাও বলতে হয়। সেখানে পানি সংকট ঢাকার চেয়েও তীব্র। ভূ-গর্ভস্থ ও উপরিস্থ উৎস থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসা কমবেশি ২০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে পারে। আর স্বাভাবিক চাহিদা হচ্ছে ৫০-৫৫ কোটি লিটার। আগামী কয়েক দিনে চাহিদা যখন ১০ কোটি লিটার বাড়বে, পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে বলেই শঙ্কা। আমরা জানি, পেমরায় কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ চলছে। চলছে মোহরায় অবস্থিত মদুনাঘাট প্রকল্প উন্নয়নের কাজ। কিন্তু সেগুলো কাজে আসতে আরও ৩-৪ বছর লেগে যাবে। ততদিন কি চট্টগ্রামবাসী পানি সংকটে ভুগতেই থাকবে? ঢাকার মতো সেখানেও জরুরি ভিত্তিতে কিছু গভীর নলকূপ বসানো যায় কি-না, কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখুক। একই সঙ্গে বিভিন্ন নগরী ও শহরের পানি সংকট মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষকে সুদূরপ্রসারী সমাধানের কথা ভাবতে হবে। গভীর নলকূপ বসিয়ে সাময়িক সমাধান সম্ভব; ভবিষ্যতের নগরকে জল-স্বস্তি দিতে হলে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের বিকল্প নেই। মনে রাখা জরুরি, ভূ-গর্ভস্থ পানি কেবল সীমিত নয়; এর মাত্রাতিরিক্ত উত্তোলন পরিবেশের জন্যও বিপর্যয়কর। এক্ষেত্রে ঢাকা ছিল বিশ্বের সেই বিরল নগরী, যার চারদিকে নদী প্রবাহিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত প্রাণপ্রবাহগুলো নির্বিচার দখল ও দূষণের শিকার হয়েছে। বুড়িগঙ্গার পানি বহু আগেই ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শীতলক্ষ্যার পানি শোধন করেও ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রয়োজন হচ্ছে প্রি-প্লান্টের। তুরাগ ও বালু নদীর অবস্থাও তথৈবচ। চট্টগ্রাম ঘেঁষে প্রবাহিত কর্ণফুলীতেও দূষণ বাড়ছে। এই পরিস্থিতির আর অবনতি হতে দেওয়া যায় না। দেশের অধিকাংশ শহরই কোনো না কোনো নদীর তীরে অবস্থিত। এসব শহরে যদি নদীর পানি ব্যবহারের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমে আসবে। কমবে পানি সংকটও।

No comments

Powered by Blogger.